ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট কনস্টেবল

‘নিয়ম’ ভেঙে রাস্তার এক পাশ থেকে আচমকা অন্য পাশে সরে এসেছিল একটি ডাম্পার। গাড়িটিকে থামাতে গিয়ে তার চাকাতেই পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক কনস্টেবলের। বারণ না-শুনে ডাম্পার-চালক গতি বাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বৈদ্যবাটি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:০২
Share:

মির ডালিম।

‘নিয়ম’ ভেঙে রাস্তার এক পাশ থেকে আচমকা অন্য পাশে সরে এসেছিল একটি ডাম্পার। গাড়িটিকে থামাতে গিয়ে তার চাকাতেই পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক কনস্টেবলের। বারণ না-শুনে ডাম্পার-চালক গতি বাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

শনিবার ভোরে হুগলির বৈদ্যবাটির দীর্ঘাঙ্গি মোড়ের কাছে দিল্লি রোডে এই দুর্ঘটনায় মৃত মির ডালিম (৩৮) নামে ওই কনস্টেবল বীরভূমের খয়রাশোলের পাঁচড়া পঞ্চায়েতের আহম্মদপুরের বাসিন্দা। বছর তিনেক ধরে শেওড়াফুলি ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। ডাম্পারটিকে আটক করলেও চালককে ধরতে পারেনি পুলিশ। বছর কয়েক আগে ডাম্পারের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল ডালিমের জামাইবাবুরও।

চন্দননগর কমিশনারেটের ডিসি (সদর) বৈভব তিওয়ারি জানান, যান নিয়ন্ত্রণের জন্য সুরক্ষার সব ব্যবস্থাই ডালিম ন‌িয়েছিলেন। গায়ে ‘ইলুমিনেশন জ্যাকেট’ (যাতে দূর থেকেও দেখা যায়), হাতে ‘সিগন্যাল লাইট’— সবই ছিল। থামাতে যেতেই ডাম্পারটি তাঁকে চাপা দেয়। চালকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে। গোটা ঘটনা ওই এলাকায় লাগানো সিসিক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করলে ওই পুলিশকর্মীর পরিবারের এক জন চাকরি পাবেন। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারেও বিভাগীয় ব্যবস্থা করা হবে।’’

Advertisement

কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্কারের কাজ চলায় দিল্লি রোডে প্রতিদিনই যানজট হচ্ছে। যান নিয়ন্ত্রণের জন্য মোড়ে মোড়ে পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ারও মোতায়েন হয়েছে। এ দিন শেওড়াফুলি ফাঁড়ির এক এএসআই, ডালিম-সহ দুই কনস্টেবল এবং এক সিভিক ভলান্টিয়ার দীর্ঘাঙ্গি-চৌমাথায় যান নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। ভোর পৌনে ৫টা নাগাদ ডানকুনিমুখী ডাম্পারটিকে আচমকা ডান দিকে সরে যেতে দেখে হাতে ‘সিগন্যাল লাইট’ নিয়ে ডালিম দৌড়ে সেটি থামাতে যান। কিন্তু না-থেমে ডাম্পার-চালক গতি বাড়িতে দেন বলে পুলিশের অভিযোগ। ডাম্পারের ধাক্কায় ডালিম পড়ে যান। ডাম্পারটির পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

খবর পেয়ে তাহিরের বাবা মির কাবিল-সহ পরিবারের অন্যেরা হুগলিতে চলে আসেন। সহকর্মীদের অতি প্রিয় ছিলেন ডালিম। পুলিশের অনুষ্ঠানে তাঁকে গান গাইতে দেখা যেত। ময়নাতদন্তের পরে দুপুরে শববাহী গাড়িতে ডালিমের মৃতদেহ শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে আনা হয়। সেখানে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয় কমিশনারেটের তরফে। ডিসি (সদর), এডিসিপি (শ্রীরামপুর) অতুল ভি-সহ কমিশনারেটের অনেক অফিসার উপস্থিত ছিলেন।

কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘ডালিম নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতেন। এ দিনও তেমনই করছিলেন।’’

ডালিম বিবাহিত। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও ছোট দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। তাঁর এক ভাই সিভিক ভলান্টিয়ার। কাবিল জানান, তিনি দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন‌। বড় মেয়ের স্বামীও ডাম্পারের ধাক্কায় মারা যান। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের অন্ত্যেষ্টির জন্য পুলিশের তরফে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পরিবারের এক জনকে চাকরির আশ্বাস দেওয়া হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন