জগৎবল্লভপুর

অলচিকির হাত ধরে শিকড়ে ফিরতে চান ওঁরা

চাষের জমি কমছে। দ্রুত নগরায়ণের দিকে এগিয়ে চলেছে হাওড়া। কিন্তু তারই মাঝে যেন জেগে রয়েছে এক চিলতে জঙ্গলমহল। জগৎবল্লভপুরের শঙ্করহাটি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের খড়দা ব্রাহ্মণপাড়া। গ্রামে প্রায় ৮০টি সাঁওতাল পরিবারের বাস।

Advertisement

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩০
Share:

চাষের জমি কমছে। দ্রুত নগরায়ণের দিকে এগিয়ে চলেছে হাওড়া। কিন্তু তারই মাঝে যেন জেগে রয়েছে এক চিলতে জঙ্গলমহল। জগৎবল্লভপুরের শঙ্করহাটি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের খড়দা ব্রাহ্মণপাড়া। গ্রামে প্রায় ৮০টি সাঁওতাল পরিবারের বাস। নিজেদের সংস্কৃতিকে তাঁরা খুব যত্নের সঙ্গে লালন-পালন করেন। বিয়ে সাদির অনুষ্ঠান মুখর হয়ে ওঠে ধামসা-মাদলের ছন্দে। পালন করেন মাঘ উৎসব, বাহা পরব।

Advertisement

তবু কোথায় যেন শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার অতৃপ্তি। সাঁওতালি ভাষায় নিজেদের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান চললেও তার বর্ণ তাঁদের কাছে অচেনা। তা পড়তে ও লিখতে পারেন না তাঁরা। তবে এর জন্য তাঁদের শিক্ষা থেমে থাকেনি। প্রতি বছর গড়ে ৩০টি বাচ্চা এই এলাকা থেকে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়। সেখান থেকে অনেকে উচ্চমাধ্যমিক, কলেজেও যায়। স্কুলের সিলেবাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা পড়ে বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান। কিন্তু অলচিকি ভাষা। নৈব নেব চ। আর সেখানেই তাঁদের যন্ত্রণা। জগৎবল্লভপুর শোভারানি কলেজের বাংলা অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী পারসি হাঁসদা। কলেজ থেকে ফিরে ঘরে ঢুকেই মাকে বললেন, ‘আয়ো বেন জমা এমানমে’। (মা খেতে দাও)। মা বলে উঠলেন, ‘মাতবে বেটি অরুর হিজুমে, দাকা জম দরুর্ মে’ (হাত মুখ ধুয়ে এস মা, ভাত খেতে দেব।)। পারসিকে জিজ্ঞেস করি, ‘‘সাঁওতালি ভাষায় যা বললে তা লিখতে পারবে?’’ তাঁর সলজ্জ উত্তর, ‘‘না। অলচিকি ভাষা শিখিনি।’’ আমতা রামসদয় কলেজের ছাত্র সাগেন মান্ডি খুব ভাল ধামসা বাজাতে পারে। বাড়িতেও কথা বলে সাঁওতালি ভাষায়। কিন্তু অলচিকি ভাষায় লিখতে বা পড়তে জানে না সেও।

এ বিষয়ে বছর ছয়েক আগে একবার উদ্যোগী হয়েছিল হাওড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। জগৎবল্লভপুর বেসিক ট্রেনিং কলেজ চত্বরে খোলা হয়েছিল ক্রেশ। যে সব সাঁওতালি মা মাঠেঘাটে কাজ করেন তাঁদের ছেলেমেয়েদের এই ক্রেশে রেখে দেওয়া হতো। তাদের অন্য ভাষায় পড়ার পাশাপাশি অলচিকি ভাষাও শিক্ষা দেওয়া হত। কিন্তু মাসছয়েক পরে সেই ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামের বাসিন্দা চাঁদু মান্ডি বলেন, ‘‘যে ভাষায় সারাদিন নিজেদের মধ্যে কথা বলি, সেই ভাষা ল‌িখতে বা পড়তে না পারাটা লজ্জার।’’

Advertisement

এ বিষয়ে একবার বেসরকারিভাবে চেষ্টা হয়েছিল বলে দাবি করলেন আদিবাসী সমাজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় সভাপতি রামেশ্বর হাঁসদা। তিনি বলেন, ‘‘সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক এনে স্থানীয় ছেলেমেয়েদের অলচিকি ভাষা শেখানো হত। কিন্তু শিক্ষকদের বেতন দিতে না পারায় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।’’

তবে বাসিন্দারা যদি আবেদন করেন তাহলে এলাকার প্রাথমিক স্কুলে অলচিকি ভাষার শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় বইপত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) কবিতা মাইতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন