পুরপ্রধান কে, খসড়া করছেন কল্যাণ-রত্না

কে হবেন পুরপ্রধান! কে-ই বা উপ-পুরপ্রধান! হুগলির ১৩টি পুরসভাতেই ক্ষমতা ধরে রাখার পরে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে শাসকদলের অন্দরে। ওই দুই পদের জন্য কোথাও কোথাও ক্ষোভও দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দলের নেতাদের মধ্যে। তাই সেই সব ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দিয়ে পুরপ্রধান এবং উপ-পুরপ্রধান বাছার জন্য শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হুগলির সাংসদ রত্না দে নাগকে দায়িত্ব দিল দলের রাজ্য কমিটি।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০১:৩২
Share:

কে হবেন পুরপ্রধান!

Advertisement

কে-ই বা উপ-পুরপ্রধান!

হুগলির ১৩টি পুরসভাতেই ক্ষমতা ধরে রাখার পরে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে শাসকদলের অন্দরে। ওই দুই পদের জন্য কোথাও কোথাও ক্ষোভও দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দলের নেতাদের মধ্যে। তাই সেই সব ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দিয়ে পুরপ্রধান এবং উপ-পুরপ্রধান বাছার জন্য শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হুগলির সাংসদ রত্না দে নাগকে দায়িত্ব দিল দলের রাজ্য কমিটি। তবে এ ব্যাপারে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

আগামী ৬ মে কলকাতার নজরুল মঞ্চে মমতা রাজ্যের সব জেলার জয়ী দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন। সেখানেই হুগলির দুই সাংসদের দেওয়া তালিকার ভিত্তিতে দলের রাজ্য কমিটি চূড়ান্ত নেবে। সেই তালিকা দলের সর্ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীও খতিয়ে দেখবেন। তার পরেই তা যাবে দলনেত্রী মমতার কাছে। এখন দেখার হুগলির পুরসভাগুলির দুই গুরুত্বপূর্ণ পদে কার কার ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত শিকে ছেঁড়ে।

জেলার দুই সাংসদ ইতিমধ্যেই প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। কীসের ভিত্তিতে ওই তালিকা তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি দু’জনের কেউই। দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘দলের রাজ্য নেতৃত্ব পুরো বিষয়টি ঠিক করবেন। সেই অনুযায়ী কাজ হবে। তবে দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে যাঁরা জিতেছেন, তাঁরা এখন অনেকেই নানা গল্প হাওয়ায় ছড়াচ্ছেন। তাঁদের বিষয়ে দল অত্যন্ত কঠোর।’’

তবে তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, জেলার প্রতিটি পুরসভাতেই জিতে আসা প্রার্থীরা এখন মরিয়া চেষ্টা করছেন পদ পেতে। সরাসরি চেয়ারম্যান না হতে পারলে নিদেন পক্ষে ভাইস-চেয়ারম্যানের পদটি যাতে কোনও ভাবে পাওয়া যায় তারই মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। সব থেকে লড়াই জমে উঠেছে বৈদ্যবাটি এবং বাঁশবেড়িয়ায়।

ওই দুই পুরসভার আগের বোর্ডের চেয়ারম্যানেরাই এ বার ভোটে হেরে গিয়েছেন। আগে ওই দুই পুরসভার যে সব তৃণমূল প্রার্থী স্বপ্নেও ভাবেননি, তাঁরা চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে আদৌ থাকবেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরাই এখন দুই পদের জন্য ছুটছেন।

বৈদ্যবাটি পুরসভার মোট আসন ২৩টি। তার মধ্যে শাসকদলের ঝুলিতে এ বার গিয়েছে ১৩টি। বিরোধীরা পেয়েছে ১০টি। তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে ব্রহ্মদাস বিশ্বাস, অরিন্দম গুইন এবং প্রভাস পোদ্দার আগের পুরবোর্ডে ছিলেন। স্বাভাবিক কারণেই সম্ভাব্য চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে তাঁদের নাম এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বাতাসে। তাঁরা ছাড়াও এ বারই প্রথম জিতে আসা শাসকদলের কাউন্সিলর সুবীর ঘোষ চেয়ারের দৌড়ে বিস্তর দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে। এখন সময়ই বলবে, শ্রীরামপুরের সাংসদের দলকে দেওয়া গোপন তালিকায় শেষমেষ কারা ঠাঁই পান।

তবে বৈদ্যবাটিতে জিতে আসা বিরোধীরাও এ বার সেখানে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন শাসকদলের। তবে তা ওই দুই পদের জন্য নয়। রাজনৈতিক শিবিরের একটি অংশ বলছে, সেখানকার বিরোধী কাউন্সিলররা অন্য অঙ্ক কষছেন। গত পুরবোর্ডের চেয়ারম্যানকে হারিয়ে দেওয়া নির্দল প্রার্থী প্রবীর পালকে সামনে রেখে তাঁরা ইতিমধ্যেই ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি গোপন বৈঠক করেছেন। তাঁদের লক্ষ্য, শাসকদলের পদ না পাওয়া কাউন্সিলরদের নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে পুরবোর্ড দখল করা। এখন দেখার পরিস্থিতি কোনও দিকে যায়। যদিও তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন,‘‘আমাদের কাউন্সিলররা সংগঠিত আছেন। তাঁদের ভাঙানোর চেষ্টায় কেউ বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন না।’’

বৈদ্যবাটির মতোই বাঁশবেড়িয়ার চেয়ারম্যানও এ বার নির্দল-কাঁটায় বিদ্ধ হয়েছেন। পুর নির্বাচনের আগে থেকেই জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক হিংসা ছড়ায় বাঁশবেড়িয়ায়। সেখানে একের পর এক গোলমাল লেগেই ছিল। বিরোধীরা যেমন অভিযোগ তুলেছেন, পাশাপাশি শাসকদলও সেখানে দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে সরব হন। বিদায়ী বোর্ডের পুরপ্রধান রথীন্দ্রনাথ দাস মোদক সরাসরি অভিযোগ তুলেছিলেন ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে। এ বার কে সেখানে চেয়ারম্যান হবেন? সেই নিয়েও দড়ি টানাটানির পাশাপাশির কাউন্সিলরদের মধ্যে আলোচনায় এলাকা এখন রীতিমতো সরগরম। সবাই এখন রাজ্য কমিটির দিকেই তাকিয়ে আছেন।

বাঁশবেড়িয়া পুরসভায় মোট ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টিতে জিতেছে শাসকদল। তার মধ্যে ৮ জনই মহিলা। সেই আট জনের মধ্যে আবার প্রিয়াঙ্কা দাস, মিনতি ধর, অরিজিতা শীল, সারিকা সিংহ এবং সুজাতা ঘোষ গতবারও পুরবোর্ডে ছিলেন। জানা গিয়েছে, দলীয় নেতৃত্ব সেখানে চাইছে পুরসভার কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে, দলের এমন শিক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের মধ্যেই কাউকে দায়িত্বে নিয়ে আসতে। তবে ওই পুরসভায় পুরপ্রধানের আসনটি সংরক্ষিত নয়। গত পুরবোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান অমিত ঘোষ এ বারও জিতেছেন।

এখন দেখার দল কোনও পথে হাঁটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন