হুগলিতে দুই চটকল বন্ধ, সঙ্কটে ১০ হাজার শ্রমিক

মঙ্গলবার বন্ধ হওয়া শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া চটকল খোলার জন্য প্রশাসন অবশ্য চেষ্টা করছে। কিন্তু মালিকপক্ষের থেকে সাড়া মিলছে না বলে অভিযোগ।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ০১:২০
Share:

গোন্দলপাড়া জুটমিলে তালা।নিজস্ব চিত্র

তিন দিনে হুগলিতে দু’টি চটকল বন্ধ হয়েছে। এর জেরে শিল্পাঞ্চলে অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক সঙ্কটে পড়েছেন। একই সঙ্গে ওই চটকল দুটির উপর পরোক্ষে নির্ভরশীল আরও কয়েক হাজার পরিবারও রুজির প্রশ্নে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়লেন। চটকল দু’টি কবে খুলবে তারও কোনও দিশা মেলেনি।

Advertisement

মঙ্গলবার বন্ধ হওয়া শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া চটকল খোলার জন্য প্রশাসন অবশ্য চেষ্টা করছে। কিন্তু মালিকপক্ষের থেকে সাড়া মিলছে না বলে অভিযোগ। ডাকা হলেও বুধবার মালিকপক্ষের কেউ মহকুমা শ্রম দফতরে যাননি। বৃহস্পতিবার সেখানে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানেও মালিকপক্ষ গরহাজির হওয়ায় বৈঠক ভেস্তে যায়। ওই দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ, শুক্রবার ফের মালিকপক্ষকে আলোচনা ডাকা হয়েছে। দফতরের এক আধিকারিক জানান, শুক্রবারের বৈঠকেও মালিকপক্ষের কেউ না-এলে রাজ্য শ্রম দফতরে বৈঠকে ডাকা হবে। গত রবিবার বন্ধ হওয়া চন্দননগরের গোন্দলপাড়া চটকলের অচলাবস্থাও কাটেনি।

দু’টি চটকল একই শিল্পগোষ্ঠী পরিচালনা করে। চটকল বন্ধের পিছনে দু’টি ক্ষেত্রেই পাটের অভাবকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন মালিকপক্ষ। শ্রমিকেরা অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, কৃত্রিম অভাব তৈরি করে মালিকপক্ষ ভাঁওতা দিচ্ছেন। জেলার ১৪টি চটকলের মধ্যে যেখানে ১২টিই চালু, সেখানে দু’টি চটকলেই কেবল পাটের জোগানে টান?— প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

Advertisement

চটকল দু’টি কবে খুলবে, জানতে চান ইন্ডিয়া জুটমিলের শ্রমিকরা ।

পাট অমিল হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই বলে দাবি করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলিও। এসইউসি প্রভাবিত ‘বেঙ্গল জুটমিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর নেতা সন্তোষ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অন্যান্য চটকলে পাটের জোগান রয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে নিজেদের অপদার্থতার বোঝা মালিকপক্ষ শ্রমিকদের উপর চাপাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করব।’’ সিপিআই প্রভাবিত ‘ফেডারেশন অব চটকল মজদুর ইউনিয়ন’-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস দত্তের কথায়, ‘‘পাটের অভাবের কথা বলা বরাবরের বাহানা।’’ তাঁর ব্যাখ্যা— অগস্ট-সেপ্টেম্বরে পাট ওঠে। তার আগে চটকল বন্ধ করে চাষিদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে, চাহিদা নেই। ফলে, চাষিরা কম দামে পাট বিক্রিতে বাধ্য হন। তাতে ফড়েদের লাভ হয়। তাদের সঙ্গে মালিকপক্ষের যোগ রয়েছে।

জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি বিদ্যুৎ রাউত বলেন, ‘‘এক সঙ্গে প্রায় দশ হাজার শ্রমিক বেকার হলেন, এটা চিন্তার বিষয়। আমরা চটকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। চটকল চালানোর ক্ষেত্রে ওঁদের কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’’ জেলার এক প্রবীণ সিটু নেতার কথায়, ‘‘গোন্দলপাড়া জুটমিলে দীর্ঘদিন ধরেই রাতের শিফটে কাজ বন্ধ। তাতে আগেই কিছু শ্রমিক বেকার হয়ে গিয়েছিন। বাজারে কাঁচা পাটের অভাব নেই। চটকল কর্তৃপক্ষই কাঁচা পাট চাহিদা মতো আনছেন না। উৎপাদন হবে কী ভাবে?’’

শ্রমিকদের অভিযোগ মানতে চাননি ইন্ডিয়া জুটমিলের সিনিয়র পার্সোনেল ম্যানেজার সজল দত্ত। তাঁর দাবি, ‘‘পাটের সঙ্কট রয়েছে। নতুন পাট না-ওঠা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।’’ অন্য মিল কোথায় পাচ্ছে? এই প্রশ্নে ওই মিলকর্তার জবাব, ‘‘গত কয়েক মাসে বহু শ্রমিক কাজে না-আসায় বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পাট যেটুকু রয়েছে, অন্য চটকল জোগাড় করলেও আর্থিক সঙ্কট থাকায় আমরা পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন