জল ভেঙে পানীয় জলের খোঁজে। ছবি: সুব্রত জানা।
বর্ষার বৃষ্টিতে প্রায় বুক সমান জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। বর্ষা কেটে গিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে সে ভাবে বৃষ্টিও হয়নি। অথচ উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের বানীবন পঞ্চায়েতের উত্তর পিরপুর এলাকার বাসিন্দাদের আজও জলবন্দি অবস্থায় দিন কাটছে। বেহাল নিকাশির জন্যই দিনের পর দিন এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ।
তাঁদের আরও অভিযোগ, এলাকার জল নিকাশির জন্য খাল থাকলেও তা দখল হতে হতে নিকাশির ক্ষমতা হারিয়েছে। অথচ প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। এই অবস্থায় এলাকার হাজার দুয়েক বাসিন্দার আশঙ্কা, পুজোর কটা দিনও না তাঁদের জলবন্দি হয়েই কাটাতে হয়!
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পিরপুরের মাঠ পাড়া এলাকায় হাজার দুয়েক মানুষের বাস। এলাকায় বিদ্যুৎও পৌঁছেছে। রয়েছে পানীয় জলের ব্যবস্থা। কিন্তু নিকাশি ও রাস্তাঘাটের কোনও উন্নতি হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। প্রতি বছরই বর্ষায় বৃষ্টি তাঁদের আতঙ্কে রাখে। বর্ষা কেটে গেলেও জল না সরায় ৫-৬ মাস হাট-বাজার থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ সব করতে হয় কোমর জল ভেঙে। এমনকী কোথাও কোথাও নলকূপও ডুবে যায়। তখন অন্য এলাকা থেকে পানীয় জল আনতে হয়। এলাকায় একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। আছে অঙ্গনওয়াড়ি। সবই জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় পড়ুয়ারাও সমস্যায় পড়ে। তাদের অন্যত্র পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হয়।
এলাকার মানুষ জানান, রাস্তা ডুবে যাওয়ায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ল তাঁকে খাটে করে বা কাঁধে চাপিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়। তার উপর সাপের উপদ্রবও বা়ড়ে। জলমগ্ন অবস্থায় সাপের ছোবলে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। অনেকে জল না সরা পর্যন্ত আত্নীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হন। বছর পনেরো আগেও সমস্যা এত গভীর ছিল না। এলাকায় দু’টি নিকাশি খাল দিয়ে জল নেমে যেত। কিন্তু বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়া এবং সেই সঙ্গে খালের দুপাশ দখল করে একের পর এক নির্মাণ এই অবস্থা তৈরি করেছে। পঞ্চায়েত, ব্লক বা জেলা প্রশাসন কেউই এই সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। জল ভেঙে পানীয় জল আনতে যাচ্ছিলেন গিয়াসুদ্দিন মল্লিক, শামিমা বেগম। বললেন, ‘‘অনেক দিন ধরে জল জমে থাকায় পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেই জল ভেঙে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। অনেকে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পঞ্চায়েতকে জানালে শুধু আশ্বাসই মেলে। কাজ যে হয় না তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। জলেই না মাটি হয় পুজোর আনন্দ।’’
এলাকা ঘুরে দেখা গেল, মূল রাস্তা-সহ অন্য রাস্তাগুলিতেও কোথাও কোমর, কোথাও বুক সমান জল। নিকাশির যে সমস্যা রয়েছে তা স্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত প্রধানও। প্রধান ববিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘বর্ষার আগে আমরা নিকাশির কিছু কাজ করেছিলাম। তবে আরও সংস্কার করতে হবে। টাকার অভাব একটা বড় কারণ। তবে রাস্তা সংস্কার করা হবে।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আগে পঞ্চায়েতে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কোনও কাজ না করাতেই এই অবস্থা। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে পুজোর আগে জল নেমে যায়।’’
তবে এমন আশ্বাসে ভরসা করতে পারছেন না পিরপুরের জলবন্দি মানুষ। তাঁদের বক্তব্য ‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই’।