খোঁড়াচ্ছে শিল্প বিকাশ কেন্দ্র

বন্ধ ডানলপ, হিন্দুস্তান মোটরস, ফোর্ট গ্লস্টার, বাউড়িয়া কটন মিলের মতো অনেক কারখানা। দুই জেলাতেই এক সময়ে বড়-মাঝারি এবং ছোট শিল্পের রমরমা ছিল। বহু কুটির শিল্প এখন ধুঁকছে। রাজ্যে পালাবদলের সাত বছর পরেও হাল ফেরেনি শিল্পের এই মলিন চেহারাটার। কেন? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ, ষষ্ঠ কিস্তি।২০০০ সালের গোড়ায় বীরশিবপুরে ২৮৪ একর জমিতে ওই কে‌ন্দ্র গড়ে তুলেছিল পশ্চিমবঙ্গ শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০১
Share:

দুদর্শা: অধিকাংশ কারখানাই বন্ধ। নিজস্ব চিত্র

আঠেরো বছর পার হতে চলল। রাজ্যে পালাবদলও হল। কিন্তু হাল ফিরল না বীরশিবপুরের শিল্প বিকাশ কেন্দ্রের।

Advertisement

২০০০ সালের গোড়ায় বীরশিবপুরে ২৮৪ একর জমিতে ওই কে‌ন্দ্র গড়ে তুলেছিল পশ্চিমবঙ্গ শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম। ছোট ছোট প্লট শিল্পোদ্যোগীদের দীর্ঘমেয়াদে ‘লিজ’ দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল, কারখানার মাধ্যমে কর্মসংস্থান এবং এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতি। কিন্তু কোথায় কী! খাতায়-কলমে ৭৬টি প্লটের প্রতিটিতে কারখানা রয়েছে। কোনওটা ইঞ্জিনিয়ারিং, কোনও ঢালাইয়ের। কোনওটা অন্য কিছুর। অথচ, ভাল ভাবে চলছে মাত্র ৩০টি। বন্ধ প্রায় কুড়িটি। বাকিগুলি ধুঁকছে।

কেন এই অবস্থা?

Advertisement

কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে কারখানা-মালিক এবং নিগম কর্তাদের চাপান-উতোর। কারখানা-মালিকদের একাংশ যথাযথ পরিকাঠামোর অভাবের কথা বলে সরকারি উদাসীনতার অভিযোগ তুলছেন। তাঁদের মতে, কেন্দ্রের ভিতরের রাস্তা ট্রাক চলাচলের পক্ষে পর্যাপ্ত নয়। দুই লেনের রাস্তার আবেদন জানানো হলেও কাজ হয়নি। একটি এটিএম কাউন্টার থাকলেও কোনও ব্যাঙ্কের শাখা নেই। ফলে, আর্থিক লেনদেনে সমস্যা হয়। নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশ ফাঁড়ির দাবি জানানো হলেও লাভ হয়নি। অভিযোগ মানেননি নিগম-কর্তারা। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রে এক লেনের রাস্তা থাকলেও তা যথেষ্ট চওড়া। নিয়মিত সংস্কারও হয়। ফাঁড়ি না-হলেও পুলিশের টহল চলে। নিগমের স্থানীয় কার্যালয় আছে। ভবন তৈরি করে দেওয়া হলেও কোনও ব্যাঙ্ক শাখা খুলতে আগ্রহ দেখায়নি।

কিন্তু এই চাপান-উতোর মিটলেই কি কেন্দ্রটির হাল ফিরবে?

নিশ্চিত নয় কোনও পক্ষই। শুরু থেকেই ভাল ব্যবসা করছে, এমন একটি জলের ট্যাঙ্ক প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, বড় সংস্থা অনেক টালমাটাল অবস্থা সামলে নিতে পারে। কিন্তু ছোট এবং মাঝারি সংস্থার পক্ষে তা সামাল দেওয়া মুশকিল। অনেক সময় জটিল পরিস্থিতিতে মূলধনের জোগান বা উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সময়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে তারা। তখন সহজ উপায় হিসাবে কারখানার ঝাঁপ বন্ধ করে দেয়। এখানেও অনেক ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। ওই কেন্দ্রে শুরু থেকে হোটেল চালাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা গোবিন্দ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসা বাড়ানো তো দূরের কথা, টিকিয়ে রাখাই সমস্যা হচ্ছে। কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। খেতে আসবেন কারা?’’

বন্ধ কারখানাগুলির শেড অন্য কাউকে ‘লিজ’ দেওয়ার রাস্তাও বন্ধ নিগমের। ফলে, কেন্দ্রের হাল ফেরাতে সে ব্যাপারেও উদ্যোগী হতে পারছেন না কর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, বন্ধ কারখানাগুলির বহু টাকা জলের বিল বকেয়া রয়েছে। বকেয়া রয়েছে কোটি কোটি টাকা ব্যাঙ্ক-ঋণও। শুনে অনেক শিল্পোদ্যোগী পিছিয়ে যাচ্ছেন।

কারখানা-মালিকেরা অবশ্য মনে করেন, এখনও বাঁচার উপায় আছে। কারখানাগুলির সমস্যা নিয়ে কথা বলে সমন্বয়ের জন্য নিগমের পক্ষ থেকে একজন জনসংযোগ আধিকারিক দরকার। মাসে অন্তত একবার সবাইকে নিয়ে বসে কার কী সমস্যা জানতে হবে। প্রতিবিধান করতে হবে। নিগম কর্তাদের দাবি, সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও কারখানা-মালিকদের পাশে থাকার চেষ্টা করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন