জেলে স্লেট, বই নিয়েই ওঁরা আলোর পথযাত্রী

লম্বা হলঘর। এক দিকের দেওয়ালে ঝুলছে ব্ল্যাকবোর্ড। তাতে লেখা কিছু শব্দ। চক-ডাস্টার নিয়ে মাস্টারমশায় বোর্ডে সমানে লিখে চলেছেন। তাঁর পিছনে বসে থাকা জনা ৩০-৩৫ জন ছাত্র মনোযোগ দিয়ে তা দেখছেন। প্রত্যেকের কাছেই বই ও শ্লেট। এক ঝলক দেখলে সাধারণ ভাবে কোনও স্কুলের ক্লাসরুম বলেই মনে হবে। ক্লাসরুম ঠিকই, তবে কোনও স্কুলের নয়। এই দৃশ্য উলুবেড়িয়া উপ-সংশোধনাগারের।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫ ০২:০৭
Share:

লম্বা হলঘর। এক দিকের দেওয়ালে ঝুলছে ব্ল্যাকবোর্ড। তাতে লেখা কিছু শব্দ। চক-ডাস্টার নিয়ে মাস্টারমশায় বোর্ডে সমানে লিখে চলেছেন। তাঁর পিছনে বসে থাকা জনা ৩০-৩৫ জন ছাত্র মনোযোগ দিয়ে তা দেখছেন। প্রত্যেকের কাছেই বই ও শ্লেট। এক ঝলক দেখলে সাধারণ ভাবে কোনও স্কুলের ক্লাসরুম বলেই মনে হবে। ক্লাসরুম ঠিকই, তবে কোনও স্কুলের নয়। এই দৃশ্য উলুবেড়িয়া উপ-সংশোধনাগারের।

Advertisement

ছাত্র ও শিক্ষকদের কেউ সকলেই কেউ চুরির, কেউ ডাকাতির, কেউ বা ধর্ষণের আবার কেউ খুনের আসামি। কিন্তু প্রত্যেক দিন বিকেল তিনটে থেকে তাঁদের ঠিকানা এই ক্লাসরুম। পড়াশোনার আগ্রহে বন্দিদের অনেকেই ক্লাসে চলে আসছেন। অন্ধকার জগতের মধ্যে থেকে আলোর উৎসে ফিরতে এখন তাঁদের অস্ত্র বই-স্লেট। সংশোধনাগারে থেকে পড়াশোনা শিখে যেন খুঁজে নিতে চাইছেন সমাজের মূল স্রোতে ফেরার রসদ।

তবে সংশোধনাগারে এমন উদ্যোগ এর আগে কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেল বা অন্য বড় জেলে দেখা গেলেও উলুবেড়িয়া উপ-সংশোধনাগারে এই প্রথম। স্বাভাবিকভাবেই খুশি এখানকার বন্দিরা।

Advertisement

কেমন লাগছে?

প্রশ্নের উত্তরে সমস্বরে ক্লাসের মধ্যে থেকে ভেসে এল, ‘‘পড়ব, শিখব, জানব। বেশ ভাল লাগছে।’’ এমন একটি উদ্যোগের মূল হোতা উলুবেড়িয়া মহকুমা উপ-সংশোধনাগারের জেলার পুলক কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘এখানে বিভিন্ন ধরনের বন্দি রয়েছেন। এঁদের কেউ দাগী আসামি, কেউ বা প্রথম বার কোনও ভুলের কারণে জেলে। এখান থেকে বেরিয়ে কে কী করবেন সেটা আলাদা কথা। কিন্তু এঁদের শিক্ষার আলোয় এনে পুনরায় অপরাধ থেকে দূরে রাখতেই এই প্রচেষ্টা। এ বিষয়ে মহকুমাশাসকও পূর্ণ সহযোগিতা করছেন।’’ মহকুমা শাসক নিখিল নির্মল জানান, এ ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে বন্দিদের মধ্যে যাতে ভাল গুণের বিকাশ ঘটে। এটা চালিয়ে যাওয়া হবে।

জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে এখানে ১৬০ জন বিচারাধীন বন্দি রয়েছেন। এক মাস থেকে শুরু করে এক বছরেরও বেশি সময় অনেকে এখানে রয়েছেন। এঁদের জন্য পড়াশোনার ব্যবস্থা হয়েছে জেলেরই মেডিক্যাল রুমে। প্রতিদিন সাড়ে তিনটে থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ক্লাস। প্রথম থেকেই ভাল সাড়া মিলেছে। দিনে দিনে বেড়েছে ছাত্র-সংখ্যা। ৫ জনকে নিয়ে শুরু করে বর্তমানে ছাত্রসংখ্যা ৪০ জন। পুলকবাবু আরও জানান, বন্দিদের মধ্যে দু’জনের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। তাঁরাই পড়াচ্ছেন। বর্ণপরিচয়, ধারাপাত এবং ইংরেজি অক্ষর জ্ঞানের বই নিয়ে মাস দু’য়েক ধরে চলছে এই পাঠশালা। শুধু অক্ষর জ্ঞানই নয়, পাশাপাশি জেল কর্তৃপক্ষ যাঁরা পড়তে পারে তাঁদের জন্য শরৎ রচনাবলী ও রবীন্দ্র রচনাবলীর ব্যবস্থাও করেছেন। যাতে তাঁরা অন্য বন্দিদের তা পড়ে শোনাতে পারেন।

আগামী দিনে পড়ুয়াদের জন্য একটি পাঠাগার গড়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে পুলকবাবু জানান। পুথিগত শিক্ষার পাশাপাশি বন্দিদের জন্য বৃত্তিমূলক পাঠ্যক্রম চালু করা যায় কি না সে ব্যাপারেও ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন