অস্ত্র-মিছিলে গ্রেফতারির জের, তাণ্ডবে স্তব্ধ চন্দননগর

পুলিশকে ইটবৃষ্টি, নামল র‌্যাফও

রামনবমীতে অস্ত্র মিছিলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো ওই মিছিলে জড়িত অভিযোগে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করায় বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই ধুন্ধুমার বাধল চন্দননগরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪০
Share:

স্তব্ধ: রাস্তার মাঝে পু়ড়ছে টায়ার। বৃহস্পতিবার বিকেলে চন্দননগরে। ছবি: তাপস ঘোষ

এ যেন এক খণ্ডহর!

Advertisement

কয়েক হাত অন্তর করে জ্বলছে খড়ের স্তূপ, বাতিল টায়ার। আবর্জনার ভ্যাট গড়াগড়ি খাচ্ছে মাঝরাস্তায়। চূর্ণবিচূর্ণ প্রতীক্ষালয়। পড়ল বোমাও।

রাস্তা জনমানবশূন্য। দু’দিকের বাড়ির কোনও দরজা-জানলাই খোলা নেই। মাঝেমধ্যে ফাঁকফোঁকর দিয়ে উঁকি মারছে কৌতূহলী চোখ। প্রবল আওয়াজ তুলে শুধু যাতায়াত পুলিশের গাড়ির।

Advertisement

রামনবমীতে অস্ত্র মিছিলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো ওই মিছিলে জড়িত অভিযোগে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করায় বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই ধুন্ধুমার বাধল চন্দননগরে। প্রায় তিন ঘণ্টা কার্যত স্তব্ধ হয়ে রইল জি টি রোড। লক্ষ্মীগঞ্জ বাজার থেকে শহরের দু’দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে রাস্তায় অগ্নি সংযোগ, ভাঙচুর, পুলিশকে লক্ষ করে ইট— কিছুই বাদ রইল না। ‘চৈত্র সেল’-এর বাজার মার খেল। পথে বেরিয়ে ভুগতে হল সাধারণ মানুষকে।

গোটা ঘটনার জন্য বিজেপিকেই দুষেছে রাজ্যের শাসকদল। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘অশান্তি ছড়ানোর জন্য বিজেপির লোকজনই ওখানে গোলমাল করেছে। তবে অন্যায় করে কেউ পার পাবে না।’’ পক্ষান্তরে অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুবীর নাগের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিজেপির কণ্ঠরোধ করতেই শাসকদলের ইশারায় পুলিশ যা খুশি তাই করছে। চন্দননগরের সাধারণ মানুষই প্রতিবাদ করেছেন।’’

সন্ধ্যায় চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, কিছু লোক সমস্যা করেছিল। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চন্দননগরে রামনবমীর অস্ত্র-মিছিল হয়। চন্দননগর থানার তরফে মিছিলকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন-সহ নানা ধারায় মামলা রুজু করা হয়। বুধবার রাতে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সে খবর চাউর হতেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উত্তেজনা ছড়ায়। ধৃতদের এ দিন চন্দননগর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সকাল থেকেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা আদালতের সামনে জড়ো হচ্ছিলেন। মিথ্যা মামলায় দলের কর্মী-সমর্থকদের ফাঁসানো হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। ধৃতদের জেল হেফাজতের কথা জানার পরে বিক্ষোভের মাত্রা বাড়ে। আদালত চত্বর থেকে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় চলে যান। বিকেল ৩টে থেকে অশান্ত হয়ে ওঠে শহর।

প্রথমে জিটি রোডের কোর্ট মোড়ে খড় জ্বেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। টায়ার জ্বালানো হয়। গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাগবাজার মোড়েও একই ছবি। সেখানকার যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য রাখা পুলিশের গার্ডরেল উল্টে ফেলে দেওয়া হয়। সর্ষেপাড়া পর্যন্ত রাস্তা জুড়ে খড়-টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আবর্জনার ভ্যাট উল্টে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে বিকেলে দোকান খুলতে এসে ব্যবসায়ীরা ফিরে যান। যে দোকানগুলি খোলা ছিল, সেগুলি দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হয়। বেগতিক বুঝে কমিশনারেটের পদস্থ অফিসাররা বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। র‌্যাফ নামানো হয়। তবে, পরিস্থিতি বাগে আনতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। পুলিশকে ইট ছোড়ে জনতা। তাতে কোনও পুলিশকর্মী হতাহত হননি। বেগতিক বুঝে আশপাশের থানা থেকে পুলিশ বাহিনী আনা হয়। পৌনে ছ’টা নাগাদ পুলিশ এবং র‌্যাফ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এসে আগুন নেভায়।

প্রায় তিন ঘণ্টা জি টি রোডে কোনও যানবাহন চলেনি। যাবতীয় যানবাহন, এমনকী সাইকেল আরোহীদেরও অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। বিকেলে চুঁচুড়ার খাদিনা মোড়ের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে ছেলেমেয়েকে নিয়ে টোটোতে চেপে চন্দননগরের হালদারপাড়ায় বাড়ি ফিরছি‌লেন অঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক মহিলা। মাঝরাস্তাতেই আটকে পড়তে হয় তাঁকে। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক হাত অন্তর রাস্তায় আগুন জ্বলছে। দূরে ইট ছোড়াছুড়ি হচ্ছে। ভয়ে ছেলেমেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে।’’ লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের এক বস্ত্র ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘দোকান খুলতে এসে দেখি, হুলুস্থুল অবস্থা। ভয়ে বাড়ি ফিরে যাই। পয়লা বৈশাখের মুখে সেলের বাজারটা নষ্ট হল এই অশান্তিতে।’’

অশান্তির আঁচ

• বেলা ৩টে: বিক্ষোভ আদালত চত্বর থেকে ছড়াল অন্যত্র।

• ৩টে ৩০: জিটি রোড কোর্ট মোড়ে রাস্তায় খড়ের স্তূপে আগুন।

• ৩টে ৩০: বাগবাজার মোড়ে ট্রাফিক গার্ডরেল ফেলে টায়ারে অগ্নিসংযোগ।

• ৩টে ৩৫: গঞ্জের বাজার জিটি রোডে ফের অগ্নিসংযোগ।

• ৩টে ৪৫: অশান্তি ছড়াল সর্ষেপাড়া পর্যন্ত।

• ৪টে: পুলিশকে লক্ষ করে ইট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন