আবার সিপিএমকে দুষলেন মুখ্যমন্ত্রী

ভাবাদিঘি নিয়ে ফের কড়া বার্তা

ফের একবার ভাবাদিঘি নিয়ে নিজের কঠোর অবস্থানই বজায় রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের একবার ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’ও পাল্টা জানিয়ে দিল, তারাও দাবি থেকে সরছে না।

Advertisement

প্রকাশ পাল ও পীযূষ নন্দী

গুড়াপ শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০২:১৬
Share:

সপার্ষদ: আধিকারিক ও মন্ত্রীদের নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গুড়াপে। ছবি: তাপস ঘোষ

বাঁকুড়া, তারকেশ্বরের পরে এ বার গুড়াপ।

Advertisement

ফের একবার ভাবাদিঘি নিয়ে নিজের কঠোর অবস্থানই বজায় রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের একবার ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’ও পাল্টা জানিয়ে দিল, তারাও দাবি থেকে সরছে না।

এক বছর আগে বাঁকুড়া এবং হুগলির তারকেশ্বরে দু’টি প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, ভাবাদিঘিতে রেলপথ হবেই। ওখানে রাজনীতি করে কিছু লাভ হবে না। কামারপুকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান, জয়রামবাটি মা সারদার জন্মস্থান। ওই পথে রেলের সংযুক্তিকরণ তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প। মঙ্গলবার হুগলিরই গুড়াপে প্রশাসনিক বৈঠকে ফের একবার মমতা বুঝিয়ে দিলেন ভাবাদিঘি প্রশ্নে তিনি অনড়। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ যা চাইবেন, তাই হবে। সিপিএমের ক’জন চাইবেন না বলে রেলপথ হবে না! যাঁরা বাধা দিচ্ছেন, তাঁরা চিহ্নিত হয়ে থাক। ওই অংশ জুড়ে গেলে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারিত হয়ে যাবে। রেলপথ হলে ওঁদের কী অসুবিধা? ওঁদের তো সব রকম ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’

Advertisement

এ দিন প্রথমে গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদারকে ভাবাদিঘির পরিস্থিতি নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন মুখমন্ত্রী। মানস বলেন, “মানুষ রেলপথ চাইছেন। কিন্তু সিপিএমের কিছু লোকের বাধায় ওই প্রকল্প আটকে গিয়েছে। বিকাশরঞ্জন ভট্টচার্যের প্রত্যক্ষ মদতে ভাবাদিঘির জমি অধিগ্রহণ নিয়ে হাইকোর্টে একটি মামলা রয়েছে।”


প্রতিবাদ: লাঠি হাতে দিঘি পাহারা এলাকার মহিলাদের। —ফাইল ছবি।

এরপরেই মমতা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। গত বছর তারকেশ্বরের সভায় মুখ্যমন্ত্রী ভাবাদিঘির বাসিন্দাদের জন্য পাল্টা দিঘি তৈরি করে দেওয়া, মাছ, জাল, অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গুড়াপের বৈঠকে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘এত মানবিক সরকার আর কোথাও নেই। কেউ চাইলে তর্ক (ডিবেট) করতে পারেন‌। কিন্তু এটা তো জোর করে আটকে রাখা।’’ মমতা জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলকে নির্দেশ দেন, ভাবাদিঘি নিয়ে সেখানকার লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁকে রিপোর্ট দিতে।

গোঘাটের ওই দিঘির একাংশ বুজিয়ে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল সংযোগ নিয়ে আপত্তি তুলে আন্দোলনে নেমেছেন গ্রামবাসী। আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াতে কয়েক মাস আগে ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র পক্ষ থেকে ভাবাদিঘি যেতে গিয়ে পথে বাধা পান সিপিএম নেতা বিকাশবাবু। তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে রাস্তায় ফেলে মারধর করে বলে অভিযোগ। কিছুদিন পরে তিনি অবশ্য সেখানে যান।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে বিকাশবাবু বলেন, ‘‘ওখানকার মানুষ যদি দিঘি নষ্ট করতে না-চান, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী এই কাজ করতে যাচ্ছেন কেন? ওখানে রেলপথের জন্য বিকল্প পরিকল্পনা তো নেওয়া যেতেই পারে। সরকার সুচিন্তিত পরিকল্পনা করে এগোলে তো বাধা নেই। গায়ের জোরে করতে চাইলেই বাধা হবে। উনি কাউকে চিহ্নিত করতে চাইলে করুন। ব্যবস্থা নিন।’’

‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’র ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে। কমিটির সম্পাদক সুকুমার রায় মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থানের কথা জেনে বলেন, “টাকা, চাকরি, বিকল্প দিঘি, কোনও দাবিই আমাদের নেই। রেলপথে আপত্তিও নেই। আমরা শুধু চাই দিঘি না বুজিয়ে উত্তরপাড় দিয়ে রেলপথ হোক। মামলার নিষ্পত্তির আগেই আমাদের উপর ক্রমাগত জুলুম করছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিচার ব্যবস্থার উপর মুখ্যমন্ত্রীর কি আস্থা নেই!”

তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেলপথের দাবি দীর্ঘদিনের। ২০০১ সালে এনডিএ সরকারের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা ওই ৮২.৫ কিলোমিটার রেল প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। পরে ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী হওয়ার পরে ফের ওই প্রকল্পটিতে গুরুত্ব দেন তিনি। কিন্তু জটিলতা হয় গোঘাটের ভাবাদিঘি এলাকায় রেল লাইনের কাজ করতে গিয়ে। লাইন পাততে পুরোটা না হলেও ৫২ বিঘার ওই জলাশয়ের একাংশ বুজিয়ে ফেলার কথা ভেবেছে রেল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের দাবি, প্রাচীন দিঘিটি বো়জানো যাবে না। সেটিকে অক্ষত রেখেই লাইন পাততে হবে।

দু’পক্ষের এই টানাপড়েনেই থমকে রয়েছে প্রকল্প।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন