একে গরম, তার উপর নির্বাচনী বিধি— নলকূপের সমস্যায় জেরবার দুই জেলা

জলস্তর নামছে আরামবাগেও

জলকষ্ট তীব্র না হলেও সিঁদুরে মেঘে ডরাচ্ছেন আরামবাগ মহকুমার মানুষ। তাঁদের দাবি, ভোট প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত। ফলে নির্বাচন আচরণবিধি নিয়ে সংশয় রয়েছে।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৮
Share:

সবে বৈশাখের শুরু। এরই মধ্যে নামতে শুরু করেছে জলস্তর। বিকল হয়ে প়ড়ে রয়েছে নলকূপ। নির্বাচনী আচরণ বিধির কারণে নতুন নলকূপ বসানোর তো উপায় নেই-ই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভোটের কাজের অজুহাতে খারাপ নলকূপ সারানোর ব্যবস্থাও করছে না পঞ্চায়েত ও প্রশাসন।

Advertisement

জলকষ্ট তীব্র না হলেও সিঁদুরে মেঘে ডরাচ্ছেন আরামবাগ মহকুমার মানুষ। তাঁদের দাবি, ভোট প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত। ফলে নির্বাচন আচরণবিধি নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবার ভোট শেষ হয়ে গেলেই যে নলকূপ মেরামতি হবে এমন মানে নেই। তারই মধ্যে গরম বাড়বে। ফলে জলস্তর নেমে যাবে আরও খানিকটা।

আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় এর মধ্যেই পানীয় জল নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। কোথাও জলের স্তর নেমে গিয়েছে, কোথাও আবার যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে নলকূপগুলি অকেজো হয়ে রয়েছে। সেগুলি মেরামত করা বা বেশ কিছু জায়গায় নতুন করে নলকূপ বসানোর দাবিও রয়েছে অনেক পঞ্চায়েতে। কিন্তু নির্বাচনের অজুহাতে কোনও কাজই হচ্ছে না।

Advertisement

বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার ৬টি ব্লকে মোট গ্রামের সংখ্যা ৭৩৮টি। প্রতি গ্রাম পিছু ১২-১৫টি করে সরকারি নলকূপ রয়েছে। এলাকায় যে পর্যাপ্ত সরকারি নলকূপ রয়েছে তা স্বীকার করেছেন আরামবাগ, পুরশুড়া, খানাকুলের ২ টি ব্লক এবং গোঘাটের ২টি ব্লক এলাকার মানুষ। কিন্তু বেশিরভাগই সারা বছর খারাপ থাকে। যেগুলো ঠিক আছে, সেগুলি দিয়েও জল ওঠে না গ্রীষ্মকালে।

খানাকুলের ঘোষপুরের বাসিন্দা শ্রীকান্ত রায়ের অভিযোগ, “এখানে খান দশেক নলকূপ আছে। সব ক’টিরই এক দশা— ১০-১২ বার পাম্প করলে তিরতির করে সামান্য জল পড়ে।’’ একই অভিযোগ আরামবাগের গৌরহাটি গ্রামের সনকা মালিকের। তিনি বলেন, “সরকারি কলের উপর ভরসা নেই। প্রায় সারাবছরই প্রতিবেশীদের ব্যক্তিগত নলকূপের উপরই ভরসা করতে হয় আমাদের।” গোঘাটের বদনগঞ্জ, কয়াপাট, পুরশুড়ার নিমডাঙ্গি, ডিহিবাতপুর প্রভৃতি গ্রামের মানুষেরও একই অভিজ্ঞতা। ডিহিবাতপুর পঞ্চায়েত এলাকার মির্জাপুর গ্রামের মণ্ডল পাড়ার সনাতন মণ্ডলের অভিযোগ, “আমাদের সরকারি নলকূপ সেই বন্যার সময় থেকেই খারাপ। নতুন নলকূপ বসানো তো হয়নিই, মেরামতও করে দেয়নি পঞ্চায়েত।”

সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত প্রধানরাও। তবে ভোটের অজুহাতে নলকূপ সারানো হচ্ছে না— এমন অভিযোগ মানতে নারাজ তাঁরা সকলেই। পুরশুড়ার ডিহিবাতপুর পঞ্চায়েত প্রধান মণিকা ঢালি বলেন, “জলের স্তর নেমে যাওয়ার ফলে প্রতি গ্রীষ্মেই এই সমস্যা হয়। খবর পেলে মেরামতির ব্যবস্থা করছি। তবে নির্বাচন বিধির কারণে নতুন নলকূপ বসানো হবে না।” পুরশুড়ার বিডিও অনির্বাণ রায় অবশ্য তেমন জল সঙ্কট নেই বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “গ্রীষ্মে জলের স্তর নেমে গিয়ে কয়েক জায়গায় অসুবিধা হয় বটে, তবে তীব্র জল সঙ্কটের কোন অভিযোগ নেই।” আরামবাগ মহকুমা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরও দাবি করেছে, গড়ে ৭৫ ফুট জল স্তর নেমে গিয়ে থাকতে পারে কোনও কোনও অঞ্চলে। এর পরে গরম আরও বাড়লে প্রখর গ্রীষ্মে মহকুমার সর্বত্রই ৯০ থেকে ১০০ ফুট জলের স্তর নেমে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন