West Bengal Lockdown

বন্ধ গাড়ি, পেট চালাতে ভরসা মাস্ক

করোনা এবং তার জেরে লকডাউন। পেশাটাই বদলে দিয়েছে অনেক প্রান্তিক মানুষের। নতুন পেশাতে কি তাঁরা মানিয়ে নিতে পারছেন? স্বাচ্ছন্দ্যই বা কতটা? তাঁদের অবস্থার খোঁজ নিল আনন্দবাজার।গাড়ি চালিয়ে সপ্তাহে ৫-১০ হাজার টাকা উপার্জন করছিলেন ইউসুব। আগে পুরনো গাড়ি চালাতেন।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ০২:২৭
Share:

বদল: মাস্ক বেচেই এখন রোজকার গাড়িচালক ইউসুবের। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

লকডাউনে গাড়ি চালানোর উপায় নেই। পেট চলবে কী করে!

Advertisement

আরামবাগের নওপাড়ার শেখ মহম্মদ ইউসুব তাই মাস্কের পসরা নিয়ে ফুটপাতে বসেছেন। দিনে ১০০-২০০ টাকা রোজগার হচ্ছে। আপাতত এই রোজগারই সম্বল।

“জীবনে অনেক ঝড়ঝাপ্টা সহ্য করতে হয়েছে। কোনও দিন হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকিনি। এ বার পরিস্থিতি অন্য রকম। তাই মায়ের বারণ সত্ত্বেও মাস্ক বিক্রি করছি। রোজগারের টাকায় আনাজ, তেল, নুন এবং মুদিখানার জিনিসপত্র হয়ে যাচ্ছে।’’

Advertisement

গাড়ি চালিয়ে সপ্তাহে ৫-১০ হাজার টাকা উপার্জন করছিলেন ইউসুব। আগে পুরনো গাড়ি চালাতেন। বছর দুয়েক হল নতুন গাড়ি কিনেছেন। আরামবাগ স্টেশন থেকে গাড়িতে যাত্রী তুলে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া তাঁর কাজ। কিন্তু লকডাউন তাঁর সেই জীবিকা কেড়ে নিয়েছে। বাধ্য হয়ে আপাতত পেশা বদলাতে হয়েছে ইউসুবকে।

ইউসুবের আক্ষেপ, ‘‘গাড়ির ব্যবসা ভালই চলছিল। ব্যবসা বাড়ানোরও স্বপ্ন দেখছিলাম। লকডাউনে সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। এখন দু’বেলা পরিবারের সকলের মুখে অন্ন জোগাব কী করে, সেটাই চিন্তা।”

স্ত্রী, তিন ছেলেমেয়ে এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ইউসুবের সংসার। মাসে খরচ গড়ে ৬-৭ হাজার টাকা। ছেলে আগামী বছর মাধ্যমিক দেবে। দুই মেয়ের এক জন পঞ্চম, অন্য জন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। লকডাউনের পর দিন দুয়েক মনমরা হয়ে ঘরে বসে ছিলেন ইউসুব। ২৬ মার্চ থেকে পরিচিত এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাস্ক কিনে হাসপাতাল রোডের ফুটপাতে বসছেন।

সংসারের আর্থিক টানাটানি সামলাতে ইউসুবকে ছেলেবেলাতেই মুম্বইতে জরির কাজ করতে চলে যেতে হয়। বছর পনেরো আগে ফেরেন। তারপর একটি পুরনো গাড়ি কিনে ভাড়ায় মহকুমা হাসপাতালের রোগী আনা-নেওয়ার কাজ শুরু করেন। ট্রেন চালু হতে আরামবাগ স্টেশন থেকে যাত্রী পরিবহণের কাজ করছিলেন।

ঋণে কেনা গাড়ির জন্য প্রতি মাসে ৫৩৫০ টাকা করে কিস্তি শোধ করতে হয় ইউসুবকে। সেই টাকা এবং ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ, সংসারের খরচ কী ভাবে উঠবে ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না ওই যুবক। জমানো টাকাও যে শেষ হতে চলল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন