জ্বর-ডেঙ্গি ঠেকাবে কে, উঠছে প্রশ্ন
Dengue

হুগলিতে ফাঁক থাকছে সমন্বয়েই

ইতিমধ্যেই আরামবাগে ১৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে বলে স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না-নিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫১
Share:

মশা-মারতে: ডেঙ্গি রোধে কামানের মাধ্যমে ধোঁয়া ছড়ানো হচ্ছে চুঁচুড়ায়। ছবি: তাপস ঘোষ

জ্বর-ডেঙ্গি রেয়াত করেনি হুগলিকেও। অথচ, এর মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে পুরসভাগুলির সমন্বয়ের অভাবটা বারবার সামনে আসছে। যা দেখে মানুষের প্রশ্ন, সমন্বয়ের মাধ্যমে কেন কাজে গতি আনা হচ্ছে না?

Advertisement

ইতিমধ্যেই আরামবাগে ১৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে বলে স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না-নিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। কিন্তু নেবে কে? ডেঙ্গির উপস্থিতি ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন‌ পুর কর্তৃপক্ষ।

শ্রীরামপুর পুর এলাকায় দিন চারেক ধরে মশা মারতে ধোঁয়া দেওয়া শুরু হয়েছে। একটি ওয়ার্ডে বিরোধী দলের কাউন্সিলরকে না-জানিয়েই পুরসভার তরফে ধোঁয়া দেওয়ার তোড়জোড় চলছিল। ওই কাউন্সিলর আপত্তি জানান। যুক্তি ছি‌ল, স্বাস্থ্য দফতর বলছে, ধোঁয়ায় লাভ হয় না। গাইড‌লাইন না-মেনে ধোঁয়া দিলে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এ কথা মানছেন না পুরসভার প্রভাবশালী এক তৃণমূল কাউন্সিলর। স্বাস্থ্য দফতরকে না-জানিয়েই যে কাজ চলছে, কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘গত বছরে আমার ওয়ার্ডেই ডেঙ্গি বেশি ছড়িয়েছিল। তখনই ধোঁয়া দেওয়ার অনুমতি চেয়েছিলাম। স্বাস্থ্য দফতর রাজি হয়নি। এ বার ওদের জানাইনি। মানুষের চাহিদা মেটাতেই ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

এমন সমন্বয়ের অভাবের উদাহরণ আরও রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে ছবিটা আলাদা। প্রশাসন সূত্রের খবর, গ্রামাঞ্চলে আশাকর্মী এবং স্বাস্থ্য সহকারীরা সরাসরি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। সেখানে ওই দফতরের পক্ষে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়। পুর এলাকায় তা সম্ভব হয় না। গত বছর শ্রীরামপুরে ডেঙ্গির প্রকোপ নিয়ে যখন ত্রাহি রব, তখন পুরশুড়াতেও বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা দ্রুত সেখানে পরিস্থিতি সামাল দেন। হইচই হয়নি।

পুর-এলাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিন্যাস আলাদা। এখানে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মী, হেলথ্‌ অফিসার থাকেন। রোগের প্রাদুর্ভাব হলে স্বাস্থ্য দফতরের কাজ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং কাজের তত্ত্বাবধান করা। আর এখানেই সমন্বয়ের অভাবের প্রশ্ন ওঠে। কোনও কোনও পুরসভার হেল্থ অফিসার স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না বলে অভিযোগ উঠছে। স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের বক্তব্য, ডেঙ্গি প্রতিরোধে মশার বংশবৃদ্ধির জায়গা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কাজটা কাউন্সিলরদের হাতেই থাকে। কোথায় স্প্রে করা হবে, কতটা ব্লিচিং ছড়ানো হবে, তা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের ও ভূমিকা থাকে না। তেল-ব্লিচিং সমবণ্টন হয় না। কাউন্সিলর জোর খাটিয়ে বেশি পরিমাণ নিয়ে যান। কাজের কাজ হয় না।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় সফল হলে পুরসভা কৃতিত্ব নেয়। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে দোষের ভাগীদার হই আমরা।’’ জেলার একাধিক পুরপ্রধানের দাবি, স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শুভ্রাংশু চক্রবর্তী মন্তব্য করতে রাজি হননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন