—প্রতীকী ছবি।
ব্যান্ডেল স্টেশনে ভিক্ষা করে ছ’বছরের মেয়েটি। অনেক দিন ধরে যাতায়াতের সূত্রে মুখ চেনা হয়ে গিয়েছে। শনিবার তাকেই নিয়ে যাওয়া হল সরকারি হোমে। কথা বলতে বলতে নাবালিকা বলে ফেলেছে, মা তাকে দিয়ে ভিক্ষা করায়। রাজি না হলে চলে মারধর।
নৈহাটি লোকাল দাঁড়িয়ে ব্যান্ডেল স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। খানিক আড়াল করে মাটির কলকে মুখে গুঁজেছেন এক ব্যক্তি। বছর তেরো-চোদ্দর ছেলেটিই তাতে ধরিয়ে দিচ্ছে আগুন। ‘ভবঘুরে’ কিশোরও এ দিন পুলিশের হাতে পড়ছে। ততক্ষণে চম্পট দিয়েছে কলকে গোঁজা মানুষটি।
কিশোর জানিয়েছে, মালদহ থেকে কাজের খোঁজে হুগলিতে এসেছিল সে। কিছুদিন ঝালাইয়ের কাজ করেও রোজগার হয়নি। বিনা পারিশ্রমিকের কাজ থেকে তাই পালিয়েছিল সে। আশ্রয় প্লাটফর্ম।
শনিবারের ব্যান্ডেল স্টেশনে ভবঘুরে শিশু উদ্ধারে নেমেছিল প্রশাসন। চার নাবালক-নাবালিকার সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকেও। আপাতত সকলেরই ঠাঁই হয়েছে সরকারি হোমে।
রেল সূত্রের খবর, ব্যান্ডেল স্টেশন চত্বরে অনেক শিশুকেই ঘুরে বেড়াতে বা ভিক্ষা করতে দেখা যায়। একরত্তি অনেকেই মাদকাসক্ত। ওই দিন দুপুর থেকেই শুরু হয় অভিযান— চাইল্ড লাইন, ব্যান্ডেল আরপিএফ, জিআরপি, স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির আধিকারিক, জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের (ডালসা) প্যারালিগাল ভলান্টিয়ার এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে।
এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে বটগাছের তলায় খোঁজ মেলে কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলার। সঙ্গে বছর তিনেকের এক মেয়ে। পাশে প্লাস্টিকের প্যাকেটে টুকিটাকি জিনিসপত্র। ভোজপুরিতে কথা বলছিলেন।
সন্তান ও মায়ের নিরাপত্তার কথা বুঝিয়ে তাঁকে হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। বছর ষোলোর এক কিশোরকেও উদ্ধার করা হয়। ঘরবাড়ি কোথায়, সে বলতে পারেনি।
চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর গোপীবল্লভ শ্যামল জানান, উদ্ধার হওয়া শিশুদের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সামনে তোলা হবে। কাউন্সেলিং করানো হবে।
১২ অগস্টও জেলার শিশু সুরক্ষা ইউনিট এবং চাইল্ড লাইন দুই নাবালিকাকে উদ্ধার করেছিল ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘শুধু ব্যান্ডেল নয়, বিভিন্ন স্টেশনেই রেল প্রশাসন এবং আরপিএফের তরফে শিশু সুরক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে।’’