সাক্ষীকে গুলি করে খুন চুঁচুড়ায়

সোমবার বিকেলে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের রেশ কাটতে না কাটতে ওই রাতেই ফের চুঁচুড়ায় গুলিতে প্রাণ গেল খুনের ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীর। নিহত স্বরূপ বণিক (২৮) নামে ওই যুবকের অপরাধ, তিনি দুটি খুনের ঘটনায় পুলিশকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাহায্য করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, খুনের সাক্ষী স্বরূপকে কেন যথাযথ পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হল না?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭ ০২:০২
Share:

শোকার্ত: নিহতের স্ত্রী ও আত্মীয়রা। ছবি: তাপস ঘোষ

সোমবার বিকেলে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের রেশ কাটতে না কাটতে ওই রাতেই ফের চুঁচুড়ায় গুলিতে প্রাণ গেল খুনের ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীর। নিহত স্বরূপ বণিক (২৮) নামে ওই যুবকের অপরাধ, তিনি দুটি খুনের ঘটনায় পুলিশকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাহায্য করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, খুনের সাক্ষী স্বরূপকে কেন যথাযথ পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হল না?

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ই ফেব্রুয়ারি হুগলি স্টেশন সংলগ্ন রেল লাইনের ধার থেকে দুই দুষ্কৃতীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। সৌরভ দাস ওরফে সাদা এবং গোপাল চৌধুরী ওরফে রাকেশ নামে ওই দু’জনকে খুন হতে দেখেছিলেন স্বরূপ। রেলে হকারি করার সূত্রে বেশি রাতে বাড়ি ফিরতেন তিনি। সেদিনও বাড়ি ফিরতে গিয়েই ওই খুনের ঘটনা দেখে ফেলেন। ঘটনার তদন্তে নেমে রেল পুলিশ প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে স্বরূপবাবুকে একাধিকবার সাক্ষী হিসাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেই খবর পৌঁছে গিয়েছিল দুষ্কৃতীদের কাছে। তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, সাক্ষ্য প্রমাণ লোপাট করতেই স্বরূপকে খুন হতে হল। ওই জোড়া খুনের তদন্তের ভার রেল পুলিশের হাত থেকে চুঁচুড়া থানার হাতে এসেছে।

জেলার পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘পুরনো কোনও শত্রুতার জেরেই এই খুন। খুনে যুক্তদের শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, দিন দশেক আগে মোটরবাইকে চড়ে এসে কোদালিয়ায় ভরা বাজারে দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করেছিল ইমারতি সরঞ্জামের ব্যবসায়ী তারক বিশ্বাসকে। গত ৯ মার্চ ওই ঘটনার পর ফের দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুনের ঘটনা আবারও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তবে কী জেলা সদর চুঁচুড়া দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠছে?

স্বরূপ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে কাজ সেরে বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন কানাগড় শরৎপল্লির বাসিন্দা স্বরূপ। রাত ১২টা নাগাদ হঠাৎই কয়েকজন পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁর নাম ধরে বাড়ির দরজায় ধাক্কা মারে ডাকাডাকি শুরু করে। তারা জানায় ব্যান্ডেল পুলিশ ফাঁড়ি থেকে এসেছে।

পুলিশের কথা শুনে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেন স্বরূপ। দরজা খুলতেই দুই দুষ্কৃতী হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে। আওয়াজে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল স্ত্রী মিতালি ও একমাত্র মেয়ে বছর চারেকের দীপ্তির। চিৎকার না করার হুমকি দিয়ে তাদের মাথায় বন্দুক ধরে দুষ্কতীরা। তার আগেই তারা বাড়ির অন্যান্য ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়, যাতে পরিবারের অন্যান্যরা বাইরে না বেরোতে পারেন। এরপর দুষ্কৃতীরা স্বরূপবাবুকে লক্ষ্য করে পরপর দুটি গুলি করে। একটি গুলি তাঁর মাথায় লাগে এবং অন্যটি বুকে। স্ত্রী-মেয়ের সামনেই রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেয় লুটিয়ে পড়েন স্বরূপ। তারপর দুষ্কৃতীরা বাড়ির পিছনের দরজা খুলে আমবাগানের মধ্যে দিয়ে পালিয়ে দেয়।

দুষ্কৃতীরা চলে গেলে মিতালীদেবী অন্যদের ডাকতে গিয়ে দেখেন সব ঘর বাইরে থেকে বন্ধ করা। তিনি দরজা খুলে সবাইকে ঘটনা জানান।

এ দিন মিতালীদেবী বলেন, ‘‘অভাবের সংসারে স্বামীর হকারির উপার্জনেই দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে দিন কাটত। উনি কোনও ঝামেলায় যেতেন না। যারা এইভাবে প্রাণ নিল তাদের যেন শাস্তি হয়।’’ প্রতিবেশী অমিত যাদব বলেন, ‘‘ছেলেটা ভাল ছিল। ট্রেনে হকারি করত। পুলিশের উচিত ছিল ওঁকে সাক্ষী হিসেবে যখন ব্যবহার করছে তখন নিরাপত্তা দেওয়া। পুলিশকে সাহায্য করতে গিয়ে ওর সংসারটারই ক্ষতি হয়ে গেল। এক ক্ষতিপূরণ কে দেবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন