গ্রামীণ হুগলির সর্বত্র নানা পরিকল্পনা হচ্ছে, দাবি পুলিশের

রাতের পথে নিরাপত্তা কই? 

তেলঙ্গানা-কাণ্ডের পরে হুগলি শিল্পাঞ্চলে রাতে মহিলাদের বাড়ি ফেরার সময়ে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করেছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। কিন্তু জেলার গুরুত্বপূর্ণ শহর আরামবাগে সোমবার বিকেল পর্যন্ত তেমন কিছু তাঁদের চোখে পড়েনি বলে জানিয়েছেন বহু মহিলা।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:২৪
Share:

n স্মরণ: তেলঙ্গানা-কাণ্ডে নিহত তরুণী পশুচিকিৎসক স্মরণে সোমবার সন্ধ্যায় আরামবাগ শহরের নেতাজি স্কোয়ার থেকে গৌরহাটির বিবেকানন্দ মোড় পর্যন্ত মোমবাতি হাতে মৌনী-মিছিল হল। আয়োজক আরামবাগ গ্রন্থমেলা কমিটি। বহু মানুষ তাতে শামিল হন। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

রাত ৮টার পরেই আরামবাগ শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে প্রকাশ্যে চলে মদের ফোয়ারা। ভেসে আসে গাঁজার গন্ধ। উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করে আঠার নেশা করা যুবকেরা। নিরাপত্তা কোথায়?

Advertisement

তেলঙ্গানা-কাণ্ডের পরে হুগলি শিল্পাঞ্চলে রাতে মহিলাদের বাড়ি ফেরার সময়ে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করেছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। কিন্তু জেলার গুরুত্বপূর্ণ শহর আরামবাগে সোমবার বিকেল পর্যন্ত তেমন কিছু তাঁদের চোখে পড়েনি বলে জানিয়েছেন বহু মহিলা। যাঁদের কেউ শহরের বাসিন্দা, কেউ বা কর্মসূত্রে শহরে আসেন। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, রাতে ফেরার সময়ে বহু ক্ষেত্রেই মদ্যপ-নেশাখোরদের অশালীন কথার্বাতা শুনতে হয়। আচমকা হাত ধরে টান মারা, সাইকেল বা মোটরবাইকে আসা যুবকদের শরীর স্পর্শ করে চলে যাওয়া-সহ শ্লীলতাহানির নানা ঘটনা আকচার ঘটে। মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। যে কোনও দিন, যে কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাস অবশ্য দাবি করেছেন, “আমরা সতর্ক আছি। পুলিশের টহলদারি বাড়ানোর পাশাপাশি পৃথক ভাবে বিভিন্ন রাস্তায় মহিলা পুলিশের টহলদারিরও ব্যবস্থা হয়েছে।” জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, সব ক’টি থানার ওসি-আইসিদের ফোন নম্বর, এসডিপিও-র নম্বর দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বোর্ড, ফেস্টুন লাগিয়ে এবং লিফলেট ছাপিয়ে বিলির পরিকল্পনা হয়েছে। ‘১০০ ডায়াল’ কেন্দ্রগুলিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।

Advertisement

আরামবাগের বহু মহিলাই অবশ্য এখনও ভয়ে ভয়েই বাড়ি ফিরছেন। তাঁদের কথার্বাতায় ফুটে উঠছে অসহায়তা। শহরের পল্লিশ্রীর বাসিন্দা তথা স্থানীয় রামনগর অবিনাশ হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা গোপা সাহা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মেয়েদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা মোটেই সুবিধাজনক নয়। রাতে তো বের হওয়া যায়ই না, ভরদুপুরেও স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে অসহায় লাগে।”

গোঘাট-২ ব্লক অফিসের সরকারি আধিকারিক হৈমশ্রী মাজি আরামবাগের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বাড়ি ফিরতে তাঁর রাত হয়। তিনি বলেন, ‘‘রাত ৮টার পর থেকে রাস্তা মাতালে ছয়লাপ থাকে। নিরাপত্তার অভাব বোধ করি। শিশু উদ্যান সংলগ্ন রাস্তায় নানা অপকর্মের নজির আছে। ওই রকম অপরাধপ্রবণ রাস্তাটিতে নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের কিছু চিন্তাভাবনা নেই। পুলিশের টহল থাকলে অবাঞ্ছিত ওই জটলা থাকবে না বলেই আমার বিশ্বাস।”

অনেকগুলি জেলার সঙ্গে সংযোগ থাকায় প্রতিদিন কর্মসূত্রেও বহু মহিলা এ শহরে আসেন। তাঁদের মতে, আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডের কাছে বেশ কিছু গলিঘুঁজি আছে। সেখানে পুলিশি নজরদারি থাকে না। পুলিশ কালেভদ্রে অভিযান চালায়। দিনের বেলাতেও একাধিকবার ওই সব গলিতে শ্লীলতাহানি, ইভটিজিং, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

এই এক বছরে থানায় ক’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে?

এসডিপিও-র দাবি, ‘‘রাতে সমস্যা নিয়ে মহিলাদের কোনও অভিযোগ আসেনি। দিনে ইভটিজিং সংক্রান্ত আটটির মতো অভিযোগ এসেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের পক্ষ থেকে। অভিযোগ পেয়ে ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

তবে, মহিলারা জানিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই ভয়ে থানার দ্বারস্থ হন না। কামারপুকুরে বাসিন্দা প্রমা চট্টোপাধ্যায় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের নার্স। তিনি বলেন, “হাসপাতালে যে দিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ‘ডিউটি’ থাকে, সে দিন বাড়ি ফিরতে আতঙ্কে থাকি। খুবই অসভ্যতা করে কিছু ছেলে। পুলিশও থাকে না রাস্তায়।’’

এই অসহায়তা থেকেই বেরোতে চাইছেন সকলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন