আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস

মায়ের কোলে চেপেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন

ছোট থেকেই মায়ের কোলই ভরসা তার। সতেরো বছরে পৌঁছে সেই কোল তার অবলম্বন। উলুবেড়িয়া কাঁটাবেড়িয়া গ্রামের শুভজিৎ মালিককে মায়ের কোলই স্বপ্ন দেখায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। 

Advertisement

সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৫
Share:

ভরসা: মায়ের কোলে চেপে পড়তে যাচ্ছে শুভজিৎ। নিজস্ব চিত্র

ছোট থেকেই মায়ের কোলই ভরসা তার। সতেরো বছরে পৌঁছে সেই কোল তার অবলম্বন। উলুবেড়িয়া কাঁটাবেড়িয়া গ্রামের শুভজিৎ মালিককে মায়ের কোলই স্বপ্ন দেখায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।

Advertisement

জন্ম থেকেই হাঁটতে পারে না শুভজিৎ। মাটিতে হাঁটতে কেমন লাগে, মনেও পড়ে না তার। হাঁটতে না পারলেও পথ চলা তো থামে না। শুভজিৎ আর তার মা কণিকা মালিকের অদম্য ইচ্ছের কাছে তাই হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভজিতের যখন সাত বছর বয়স তখন পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন তার বাবা। তারপর থেকেই নিম্নবিত্ত পরিবারের ভরসা কণিকাদেবীর বিধবা ভাতা আর বাড়ি লাগোয়া বাগানের ফল-ফুল বিক্রি করে কিছু টাকা। প্রথমে কিছুটা ভেঙে পড়েছিলেন কণিকাদেবী। তবে হার মানেননি। ঠিক করেন, একমাত্র ছেলেকে মানুষ করবেন। যাতে সে চাকরি করে সংসারের হাল ধরতে পারে।

Advertisement

প্রথম থেকে ছেলেকে কোলে করেই স্কুলে নিয়ে যেতেন কণিকাদেবী। এখনও সেই ভাবেই স্কুল যায় শুভজিৎ। ছেলেকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য বাইরের কোথাও চাকরিও করেননি কণিকাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘ও আর দশজনের মতো নয়। আমাদের লড়াইটা সেখানেই। আমি ওর পাশে না থাকলে আর কে থাকবে?’’ সাত কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে পৌঁছে দেন ছেলেকে। সেখানেই অপেক্ষা করে স্কুল ছুটির পর ছেলেকে বাড়ি নিয়ে আসেন। তারপর আবার গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াতে নিয়ে যান ছেলেকে।

মায়ের স্বপ্ন পূরণে সঙ্গ দিয়েছে শুভজিৎও। পড়াশোনা করতে ভালবাসে সে। দারিদ্র আর প্রতিবন্ধকতা জয় করে দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেছে সে। কলা বিভাগের এই ছাত্রকে নিয়ে খুশি বাণীবন কল্যাণব্রত হাই স্কুলের শিক্ষকরাও। প্রধান শিক্ষক তপনকুমার রায় বলেন, ‘‘শুভজিৎ পড়ায় মনোযোগী। প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে ও সমাজের মূলস্রোতে মিশতে চায়। এই মানসিক জোর সকলের থাকে না।’’ শুভজিৎ জানিয়েছে, তার স্কুল আর কোচিংয়ের সহপাঠীরাও তাকে সাহায্য করে।

জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক (প্রতিবন্ধী বিষয়ক নোডাল অফিসার) পিনাকী গুপ্ত বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধীদের মাসে হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা। কেন শুভজিৎ ওই টাকা পায়নি, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

মায়ের কোলে চেপেই শুভজিৎ বলে, ‘‘মা আমার ভরসা। আমাদের দু’জনের ইচ্ছের কাছে নিশ্চয়ই সব প্রতিবন্ধকতা সরে যাবে। নিজের পায়ে আমি দাঁড়াবই।’’ চোখের জল মুছে ছেলেকে আরও কোলের কাছে আঁকড়ে ধরেন কণিকাদেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন