এই কাঠগোলা থেকে আগুন ছড়ায় ডান দিকে পুর ভবনে। নিজস্ব চিত্র
বালির জনবহুল এলাকায় পুরসভা ও আবাসনের গা ঘেঁষে কী ভাবে একটি কাঠগোলা গড়ে উঠল, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সোমবার রাতের অগ্নিকাণ্ডের জেরে মঙ্গলবার সকালে পুরসভা ওই কাঠগোলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা বন্ধ রাখার নোটিস জারি করেছে। কাঠগোলা-মালিকের অবশ্য দাবি, বহু বছর আগে শ্মশান চত্বরে ওই ব্যবসা শুরু হয়েছিল। পরে তৎকালীন বালি পুরসভার নতুন ভবন ও অ্যানেক্স বিল্ডিং এবং পাঁচতলা আবাসনটি তৈরি হয়েছে। তাঁর দাবি, নিয়ম-বহির্ভূত কাজ পুরসভাই করেছে, তিনি নন।
গঙ্গার পাড়ে বালি পাঠকঘাট শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লির কয়েক মিটার দূরেই প্রায় তিন কাঠা জমিতে রয়েছে ওই কাঠগোলা ও কাঠ চেরাই কারখানা। গাছের গুঁড়ি, ডালপালা সেখানে কাটা হয়। আবার শ্মশানে কাঠের চুল্লির জন্য এখান থেকেই কাঠ সরবরাহ করা হয়। কাঠগোলার দক্ষিণ দিকের দেওয়াল ঘেঁষে রয়েছে দোতলা অ্যানেক্স ভবন ও পশ্চিম দিকের পাঁচিল লাগোয়া রয়েছে পাঁচতলা আবাসন। সোমবার কাঠগোলা ও কাঠ চেরাই কলের বিধ্বংসী আগুন ছড়িয়ে পড়ায় পুরসভার অ্যানেক্স ভবনে অ্যাসেসমেন্ট (কর নির্ধারণ) দফতরের বেশ কিছু নথি পুড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, রাজ্য শ্রম ও যুব কল্যাণ দফতরেরও ক্ষতি হয়েছে। মেয়র পারিষদ (কর নির্ধারণ) শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোন দফতরের কতটা ক্ষতি হয়েছে, তার বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে।’’
এ দিন সকালে পুরসভার কর্তারা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পরে পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, কাঠগোলায় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। কাঠগোলার বৈধতা আছে কি না, জানতে নোটিস দিচ্ছি। সেটি বন্ধ রাখার জন্যও নোটিস দেওয়া হচ্ছে।’’ তবে কাঠগোলা-মালিক রাজীব পালের দাবি, তাঁর বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেড লাইসেন্স ও দমকলের ছাড়পত্র, দুটোই রয়েছে। কাঠগোলাটি ৫০ বছরের পুরনো। পুরসভার ভবন ও আবাসন তো পরে হয়েছে।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর বলরাম ভট্টাচার্য বলেন ‘‘ওঁরা আগে প্রমাণ করুন অনুমোদিত নকশা রয়েছে।’’
পুর কমিশনার বলেন, ‘‘নোটিস দিয়ে মালিককে শুনানিতে ডাকা হয়েছে। উনি সেখানে কাগজপত্র দেখাবেন। আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’, আগুনের তাপে আবাসনটির পাঁচিলে চিড় ধরেছে। বেশ কয়েকটি জানলার কাচও ভেঙে পড়েছে। সব ফ্ল্যাটের নিকাশি পাইপ গলে দুমড়ে গিয়েছে। ফলে এ দিন সকাল থেকে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন আবাসিকেরা। শ্রাবন্তী রায় নামে এক আবাসিক বলেন, ‘‘বাথরুমে যাওয়ার উপায় নেই। সব পাইপ ভেঙে যাওয়ায় জল মিলছে না।’’