দুশ্চিন্তা বাড়ছে বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের
Workers

‘ফাওলাই’-এর পুরো বকেয়া মিলছে না

শ্রম দফতর সূত্রের খবর, বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা হিসেবে রাজ্য সরকার ওই প্রকল্পে টাকা দেয়।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:২৮
Share:

প্রতীকী চিত্র

এক মাস বাদে পুজো। খরচ চালাবেন কী করে, ভেবে পাচ্ছেন না এ রাজ্যের বহু বন্ধ কল-কারখানার শ্রমিকেরা। কাজের জায়গা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে কিছু মিলবে না। টুকটাক অন্য কাজ করে যাঁরা এতদিন সংসার চালাচ্ছিলেন, করোনা আবহে তাঁদের অনেকেরই কাজ গিয়েছে। ভরসা বলতে রাজ্য সরকারের ‘ফাওলাই’ প্রকল্পের আর্থিক সাহায্য। মাসে দেড় হাজার টাকা। এখনও সেটা মিলল না। বেশ কয়েক মাসের বকেয়া রয়েছে ওই টাকা।

Advertisement

রাজ্য শ্রম দফতরের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘ফাউলাইয়ের টাকা যে শ্রমিকেরা পাবেন, তাঁদের এক-তৃতীয়াংশ করোনার কারণে অন্য রাজ্য থেকে ফিরতে পারেননি। যাঁদের বকেয়া রয়েছে, তাঁরা যাতে তা পান, অছি পরিষদের কাছে আবেদন করা হয়েছে। পুজোর আগেই ওই টাকা শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’

শ্রম দফতর সূত্রের খবর, বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা হিসেবে রাজ্য সরকার ওই প্রকল্পে টাকা দেয়। হুগলি এবং হাওড়ার বেশ কিছু বন্ধ জুটমিলের বকেয়া ফাউলাইয়ের টাকার জন্য রাজ্যের স্বীকৃত শ্রম সংগঠনগুলি দাবি জানিয়ে আসছিল। সেই সঙ্গত দাবিকে মান্যতা দিতেই ধাপে ধাপে শ্রমিকদের বকেয়া টাকা মেটানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার।

Advertisement

বকেয়া ফাউলাইয়ের টাকার জন্য দীর্ঘদিন রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছেন চন্দননগরের ‘শ্রমিক কল্যাণ কেন্দ্র’-এর কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কারখানা লকআউট হয়ে গেলে এক বছর পর থেকে শ্রমিকপিছু মাসে দেড় হাজার টাকা করে পাওয়াটাই বিধি। কিন্তু এই সামান্য টাকাও শ্রমিকেরা নিয়মিত পাচ্ছেন না। বকেয়া থাকছে। বর্তমান সময়ে মাত্র দেড় হাজার টাকার কিছু হয়? অন্তত তিন হাজার টাকা হওয়া উচিত। আমরা শ্রম কমিশনারের কাছে সেই আবেদন করেছি।’’

গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে কাজোরিয়া গোষ্ঠী পরিচালিত চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিল। ওই গোষ্ঠীরই শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিলও বন্ধ। হুগলির ডানলপ ও হিন্দুস্তান মোটরস কারখানার শ্রমিকেরাও ফাউলাইয়ের পুরো টাকা পাননি। একই অবস্থা হাওড়ার বন্ধ কানোরিয়া জুটমিলের শ্রমিকদেরও।

প্রবীণ সিটু নেতা তথা শ্রীরামপুরের প্রাক্তন সাংসদ শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাম আমলেই প্রথম ফাউলাইয়ের টাকা শ্রমিকদের দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। আমরা আশা করেছিলাম, উৎসবের মরসুমে বন্ধ কারাখানার শ্রমিকেরা পুরো বকেয়া পাবেন। এখনও ছ’মাসের টাকা পাওনা রয়েছে তাঁদের।’’

অর্থাভাবে গোন্দলপাড়া জুটমিলের অনেক শ্রমিক অসুস্থ হলেও যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ইতিমধ্যে আত্মঘাতী হয়েছেন কয়েকজন। কেউ আবার ভোর থাকতে উঠে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি, জগদ্দলে ছুটছেন সেখানকার জুটমিলে ‘বদলি’ শ্রমিকের কাজ করতে। ওই জুটমিলের শ্রমিক রাজেশ জয়শোয়ারা বলেন, ‘‘বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের জন্য বিমা চালু হোক। কারখানা যখন চালু থাকবে সেই বিমার টাকা শ্রম দফতর, শ্রমিক আর মালিকদের থেকে কিছুটা করে কেটে নেওয়া হোক। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে বিমা সংস্থা টাকা দেবে। ফাউলাইয়ের টাকা যখন খুশি দেওয়া হবে, এটা চলতে পারে না।’’

ওই মিলেরই অন্য এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘চাষিরা তো কৃষিবিমা পান। তার একাংশ কেন্দ্রও দেয়। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই সরকারই কিছুটা করে দিক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement