উত্তরপাড়া হাসপাতালে দিনভর ভোগান্তি অব্যাহত

রোগীর ট্রলি ঠেলতে হল ছেলেকেই

জয়ন্ত বলেন, ‘‘পরিস্থিতি তো দেখছেন। এখানে কাকে কী বলব? নিজেকেই সব করতে হচ্ছে।’’ এক রোগীকে দেখা গেল স্যালাইনের বোতল নিজেই নিয়ে চলেছেন শৌচাগারে। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৫
Share:

ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া: হাসপাতালের সামনে বসে বিক্ষোভকারী সাফাইকর্মীরা।

পেরিয়ে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের ভোগান্তি কমল না। ঝাঁট পড়ল না ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। পরিষ্কার হল না নিকাশি নালা। বকেয়া বেতনের দাবিতে বুধবার সকাল থেতে হাসপাতালের ঠিকাকর্মীরা কাজ বন্ধ রেখে যে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন, তা অব্যাহত রইল। ফলে, তাঁদের থেকে কোনও পরিষেবাই মিলল না।

Advertisement

বেশ কয়েকদিন চিকিৎসার পরে এ দিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান মাখলার বৃদ্ধ দেবাশিস বিশ্বাস। ছেলে জয়ন্ত বাবাকে বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছিলে। অশক্ত শরীরে দেবাশিসবাবু হাঁটতে পারছিলেন না। জয়ন্তই বাবার ট্রলি ঠেলে গাড়ির কাছে নিয়ে যান। জয়ন্ত বলেন, ‘‘পরিস্থিতি তো দেখছেন। এখানে কাকে কী বলব? নিজেকেই সব করতে হচ্ছে।’’ এক রোগীকে দেখা গেল স্যালাইনের বোতল নিজেই নিয়ে চলেছেন শৌচাগারে। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেখানে মোট ২৪ জন ঠিকাকর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করেন। ১১ জন হাসপাতাল সাফসুতরো রাখা, রোগীদের ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি কাজে যুক্ত। তাঁদের অভিযোগ, যে ঠিকাদারের আওতায় তাঁরা কাজ করেন গত দু’মাস ধরে তিনি বেতন দিচ্ছেন না। মিলছে শুধু প্রতিশ্রুতি। তাই তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।

Advertisement

বহির্বিভাগ থেকে এক রোগীকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাচ্ছেন রোগীর পরিজনরাই।

আন্দোলনের জেরে যে রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের ভোগান্তি হচ্ছে, তা অবশ্য মেনে নিয়েছেন ওই ঠিকাকর্মীরা। তাঁদের সুপারভাইজার জয়া পাট্টাদার বলেন, ‘‘বুঝতে পারছি রোগীদের অসুবিধা হচ্ছে। দু’মাস আমরা বেতন না পেয়েও কাজ করেছি। কিন্তু আমাদেরই বা চলবে কী করে? স্থানীয় বিধায়ক আমাদের অনুরোধ করেছেন কাজে ফিরতে। যা করার সকলের সঙ্গে কথা বলেই করব।’’ সরকারি হাসপাতালে এখন সাধারণ কর্মী এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের সংখ্যা হাতেগোনা। তাই ঠিকাকর্মীদের উপর নির্ভর করেই প্রতিটি হাসপাতালের প্রতিদিনের কাজকর্ম চলে। উত্তরপাড়া হাসপাতালও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। বিরাট এই হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার রাখাও তাঁদের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, ‘‘এখন হাসপাতালে সরকারি কর্মীর সংখ্যাও হাতেগোনা। তাই তাঁদের দিয়ে কাজ তুলে নেওয়ার পথও বন্ধ।’’

হাসপাতালের সুপার দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ দিন বিকেলে বলেন, ‘‘সমস্ত বিষয়টি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে জানিয়েছি। ওঁরা ঠিকাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কাজে ফিরতে আপাতত ওই ঠিকাকর্মীরা রাজি হয়েছেন। ঠিকাদারের সঙ্গে সরকারি চুক্তি হল—তাঁরা সরকারি টাকা না পেলেও চার মাস পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবেন।’’

ঠিকাকর্মীদের কাজে ফেরার পথ চেয়ে রয়েছে সব পক্ষ।

ছবি: দীপঙ্কর দে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন