অপরিচ্ছন্ন শহরের হাত থেকে মুক্তি চান পুরবাসী

শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার লক্ষ্যে ১৮৬৫ সালে ডাচদের আমলে পত্তন হয়েছিল হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার। দেড়শো বছরের প্রাচীন এই পুরসভায় এ বছর ঘটা করে পালন করা হচ্ছে সার্ধশতবর্ষ। কিন্তু শহরের প্রবীণ নাগরিকদের আক্ষেপ, রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই পুরসভা যে লক্ষ্য নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিল, তা আজও অধরাই এই শহরে। কেননা অপরিচ্ছন্নতা এখন এ শহরের গভীরতম অসুখ।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০০:৪৩
Share:

শহরের যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকে আবর্জনা। ছবি: তাপস ঘোষ।

শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার লক্ষ্যে ১৮৬৫ সালে ডাচদের আমলে পত্তন হয়েছিল হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার। দেড়শো বছরের প্রাচীন এই পুরসভায় এ বছর ঘটা করে পালন করা হচ্ছে সার্ধশতবর্ষ। কিন্তু শহরের প্রবীণ নাগরিকদের আক্ষেপ, রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই পুরসভা যে লক্ষ্য নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিল, তা আজও অধরাই এই শহরে। কেননা অপরিচ্ছন্নতা এখন এ শহরের গভীরতম অসুখ।

Advertisement

অথচ আর পাঁচটা পুরসভার মতো এ শহরেও বাড়ি বাড়ি বাঁশি বাজিয়ে পুরকর্মীদের নিয়মিত ময়লা নেওয়ার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। রাস্তাঘাট ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করার জন্য কর্মীরাও যথারীতি বহাল। তাঁদের নিয়মিত যে কাজে দেখা যায় না তা নয়। কিন্তু তার পরেও যাবতীয় পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও শহরের পরিচ্ছন্নতার ছবিটা আদপেই সন্তোষজনক নয়। শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর দিকে চোখ বোলালে তা আরও পরিষ্কার হয়ে যায়।

জেলা সদর চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়মিত পরিষেবা দেওয়ার কথা পুর কর্তৃপক্ষের। প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ চিকিত্‌সা পরিষেবার জন্য আসেন। তা ছাড়া হাসপাতালের প্রচুর পরিমাণে আবর্জনা নিত্য জমা হয়। কিন্তু পরিষ্কারের ছবিটা বড়ই করুণ। একইভাবে চুঁচুড়া আদালত চত্বর বা জেলাশাসক, জেলা পরিষদের আশেপাশের এলাকায় চোখ বোলালেই ধরা পড়ে শহরের অপরিষ্কারের ছবি। চুঁচুড়া বাসস্ট্যান্ডে প্রতিদিন নিয়মিত কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত। শুধু তাই নয়, নানা প্রশাসনিক কাজে নিয়মিত এই শহরে মানুষজনের বাড়তি চাপ থাকে। চুঁচুড়া সদর ও জেলা আদালতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন। আর সেই কারণেই শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রশ্নে পুর কর্তৃপক্ষের একটা বাড়তি নজরদারি প্রয়োজন। কিন্তু সেই সর্তকতা পুর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া যায় না বলে এলাকাবাসীর দাবি।

Advertisement

তা ছাড়া বাড়ি বাড়ি ময়লা নেওয়ার নিয়মমাফিক পরিকাঠামো থাকলেও ফাঁক-ফোকর থেকে গিয়েছে সেই ব্যবস্থাতেও। জনসংখ্যার নিরিখে এক একটি ওয়ার্ডের চিত্র একেক রকম। কিন্তু সেই জনসংখ্যার বিচারে ময়লা নেওয়ার লোক পুর কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করেননি বলে অভিযোগ। এলাকার এক প্রবীণ নাগরিকের কথায়, “পুরসভার ৮ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড দু’টি বড়। কিন্তু ২১, ১২ বা ১১ নম্বর ওয়ার্ডগুলি ততটা বড় নয়। কিন্তু বাড়ি বাড়ি জঞ্জাল নেওয়ার জন্য বেশি লোকসংখ্যার ওয়ার্ডে বাড়তি লোক দেওয়া হয়নি। ফলে সমস্যা থেকেই গিয়েছে।” তার উপর বাবুগঞ্জ এলাকায় খোদ পুরসভার বিরুদ্ধেই সরাসরি গঙ্গায় ময়লা ফেলার অভিযোগ রয়েছে। অথচ এখন সরকারিভাবে গঙ্গার দূষণ রোধে নানা রকম পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

যদিও চুঁচুড়া পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান অমিত রায়ের দাবি, “শহর যথাযথভাবে পরিষ্কার রাখতে কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট উদ্যোগী। পুরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ময়লা নিতে যান নিয়ম করে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলি পুর কর্মীরা নিয়মমতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন।”

পুর কর্তৃপক্ষ এমন দাবি করলেও শহরবাসীর প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা কিন্তু হতাশারই।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন