চুরির পরে। রবিবার হুগলির মানকুণ্ডুতে তাপস ঘোষের তোলা ছবি।
জানলা দিয়ে আঁকশি ঢুকিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে এক চট ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে সোনাদানা এবং নগদ কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে পালাল দুষ্কৃতীরা। শনিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির মানকুণ্ডুতে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ অবশ্য ধরা পড়েনি। গত কয়েক মাসে হুগলি শিল্পাঞ্চলে যে ভাবে চুরি-ছিনতাই বাড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “প্রত্যেকটি ঘটনারই নির্দিষ্ট মামলা দায়ের করে তদন্ত করা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের ধরার চেষ্টা চলছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মানকুণ্ডু স্টেশন সংলগ্ন একটি আবাসন প্রকল্পের দোতলা কটেজে থাকেন চট ব্যবসায়ী সুমিত চুরারিয়া। শনিবার কয়েক জন বন্ধু তাঁর বাড়িতে বেড়াতে আসেন। খাওয়াদাওয়া সেরে রাত একটা নাগাদ সকলে শুয়ে পড়েন। ভোর পাঁচটা নাগাদ সুমিতবাবুর স্ত্রী স্বপ্নাদেবী ঘুম থেকে উঠে চা করতে নীচে নেমে দেখেন, সব আলো জ্বলছে। সদর দরজা হাট করে খোলা। শোওয়ার ঘরে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি আলমারি খোলা। জিনিসপত্র লন্ডভন্ড।
সুমিতবাবুর অভিযোগ, আলমারি থেকে বাক্স খুলে বেশ কয়েক ভরি সোনার গয়না হাতিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। ব্যবসার কাজে রাখা কয়েক লক্ষ টাকাভর্তি একটি সুটকেসও তারা নিয়ে গিয়েছে। তবে ইমিটেশনের গয়না নেয়নি। ভোরেই ভদ্রেশ্বর থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ আসে।
তদন্তকারী অফিসারদের ধারণা, একতলার রান্নাঘরের পাশের খোলা জানলা দিয়ে আঁকশি ঢুকিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে ফেলে দুষ্কৃতীরা। এলাকার কেউ ওই ঘটনায় যুক্ত। সোজা উপায়ে ওই বাড়ির দরজা খোলার কায়দা তাদের আগে থেকেই জানা ছিল। বাড়ির লোকেরা যে দোতলায় ঘুমোন, তাও তারা জানত। ঘর থেকে একটি আঁকশি পুলিশ উদ্ধার করেছে।
শিল্পাঞ্চল জুড়ে চুরি-ছিনতাই যে ভাবে বাড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি মানকুণ্ডু স্টেশনের কাছেই অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক মোবাইল সংস্থার কর্তার মোটরবাইক ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। ওই ব্যক্তি তাতে বাধা দেওয়ায় তাঁকে মারধর করে দুষ্কৃতীরা। গুলিও ছোড়ে। গুলিতে তিনি জখম হন। দিন দু’য়েক আগে শ্রীরামপুরের ঠাকুরবাটি স্ট্রিটের একটি বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে দরজার তালা ভেঙে দিনের বেলা কাঁসা-পিতলের বাসনপত্র, দামি শাড়ি, হাত ঘড়ি হাতিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। কিছু দিন আগে বৈদ্যবাটিতেও এক ব্যবসায়ীর থেকে টাকাভর্তি ব্যাগ ছিনতাই হয়। চন্দননগরে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে এক ওষুধ ব্যবসায়ীর থেকে কয়েক হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। কোনও ঘটনাতেই এখনও দুষ্কৃতীদের ধরতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “মনে হচ্ছে, বাইরে থেকে কোনও দল এসে এ সব করছে। বিশেষ করে রাতের দিকে অপরিচিত কাউকে দেখলে পুলিশকে তা জানাতে অনুরোধ করা হচ্ছে নাগরিকদের।”