দরখাস্তের সঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধানের সুপারিশ এবং ব্যাঙ্ক ড্রাফটের মাধ্যমে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার নামে আমতা-১ ব্লকের রসপুরের পাঁচ যুবককে প্রতারণার অভিযোগ উঠল উত্তরপ্রদেশের একটি সংস্থার বিরুদ্ধে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেই এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
পুলিশ ও পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৯ মাস আগে ওই যুবকেরা পঞ্চায়েত প্রধানের সুপারিশ-সহ আবেদনপত্র এবং ব্যাঙ্ক ড্রাফট পাঠিয়ে দিয়েছেন ওই সংস্থায়। কিন্তু তাঁরা এখনও চাকরি পাননি।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ডাক মারফত প্রধান উত্তরপ্রদেশের উদয়পুরের অভিন্নপুর এলাকার ওই সংস্থার একটি চিঠি পান। সেই চিঠিতে জানানো হয়, সংস্থাটি পাঁচ বেকার যুবককে ‘বায়ো-এনার্জি অ্যান্ড গ্রামীণ পরিযোজনা’ প্রকল্পে চাকরি দিতে চায়। তবে, কাজের ধরনধারণ সম্পর্কে চিঠিতে কোনও আলোকপাত করা হয়নি। শুধু বলা হয়, চাকরিপ্রার্থীদের পঞ্চায়েত এলাকাতেই কাজ করতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। বেতন মাসে ১১,৫০০-১৬,৫০০ টাকা। চিঠির সঙ্গে পাঁচটি আবেদনপত্র পাঠিয়ে তা পূরণ করে পাঠাতে বলা হয় সংস্থার ঠিকানায়। প্রতিটি আবেদনপত্রের সঙ্গে ৭০০ টাকা করে ব্যাঙ্ক-ড্রাফট এবং প্রধানের সুপারিশ পাঠাতে বলা হয়। দিল্লির একটি সংস্থার ঠিকানায় ব্যাঙ্ক ড্রাফট পাঠাতে বলা হয়।
এর পরেই পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে পাঁচ যুবককে নির্বাচন করা হয়। ব্যাঙ্ক ড্রাফটের টাকা যুবকেরা দিলেও দরখাস্ত পূরণ করে তা পাঠানো পর্যন্ত সবই করা হয় পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধানে। গত ১৮ এবং ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চায়েতে ফের ওই সংস্থার দু’টি চিঠি আসে। ফের ওই প্রকল্পে পাঁচ জন করে ১০ জন বেকার যুবকের নাম পাঠাতে বলা হয়। এ বার ব্যাঙ্ক ড্রাফটের অঙ্ক বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা করা হয়। এই দু’টি চিঠি পাওয়ার পরে পঞ্চায়েতের কর্তারা পুলিশের দ্বারস্থ হন।
হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা জানান, মোবাইল টাওয়ার বসানো বা ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণার বহু অভিযোগ তাঁদের কাছে আসে। রসপুর পঞ্চায়েতে অভিযোগটির বিষয়বস্তু নতুন। তদন্ত শুরু হয়েছে।
পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ থেকে জেলা পরিষদের কর্তারা মনে করছেন গোটা ঘটনাটি প্রতারণাই। ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে স্বীকার করেছেন, বেকার যুবকদের চাকরি হবে ভেবে তাঁরা সংস্থাটির ব্যাপারে তলিয়ে দেখেননি। তিনি বলেন, “শেষ দু’বারের চিঠিতে ব্যাঙ্ক ড্রাফট পাঠাতে বলা হয় অন্য ঠিকানায়। তাতেই সন্দেহ হয়। সংস্থাটির কোনও টেলিফোন নম্বর না থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। চিঠি দিয়েও উত্তর পাইনি। ওই যুবকদের কাছে বার বার জবাবদিহি করতে হচ্ছে। বিষয়টি পঞ্চায়েতমন্ত্রীকে জানিয়েছি।”
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য জানান, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে অনেক সময় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কিছু কিছু কাজ করে। কিন্তু তারা যে এলাকায় কাজ করে, সেখানকার জেলা থেকে ব্লক পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে বিষয়টি জানিয়ে দেয়।
অজয়বাবু বলেন, “বায়ো-এনার্জি নামে কোনও প্রকল্প হাওড়া জেলায় কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে আমাদের নজরে আসেনি। তাই মনে হয় এটা প্রতারণাই। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সতর্ক করা হবে।”