কাটল পুনর্বাসনের সমস্যা, সালকিয়ায় হবে উড়ালপুল

২০০১-এ হাওড়ার সালকিয়ায় উড়ালপুলের পুনর্বাসন সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ মানতেই লেগে গেল ১৩ বছর। অবশেষে বাস্তবায়নের পথে সালকিয়া উড়ালপুল। আজ পুনর্বাসনের কাজের সূচনা করবেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ১৯৯০-এ এই উড়ালপুলের কাজ শুরু হলেও স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত মামলায় বন্ধ হয়ে যায় সালকিয়া উড়ালপুলের কাজ। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৬
Share:

এখানেই হবে উড়ালপুল। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

২০০১-এ হাওড়ার সালকিয়ায় উড়ালপুলের পুনর্বাসন সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ মানতেই লেগে গেল ১৩ বছর। অবশেষে বাস্তবায়নের পথে সালকিয়া উড়ালপুল। আজ পুনর্বাসনের কাজের সূচনা করবেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

Advertisement

১৯৯০-এ এই উড়ালপুলের কাজ শুরু হলেও স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত মামলায় বন্ধ হয়ে যায় সালকিয়া উড়ালপুলের কাজ। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। অবশেষে হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা (এইচআইটি), পুরসভা ও স্থানীয় বিধায়ক এক যোগে উদ্যোগী হওয়ায় পুনর্বাসনের জট কেটেছে। ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সদিচ্ছা থাকলে অসাধ্য সাধনও করা যায়। সরকার ও সালকিয়ার সাধারণ মানুষ তা ফের প্রমাণ করল।”

এইচআইটি সূত্রের খবর, ১৯৯০-এ সালকিয়ার যানজট সমস্যা মেটাতে এই উড়ালপুল তৈরির কথা হয়। হাওড়া পুরসভার তৎকালীন মেয়র সিপিএমের স্বদেশ চক্রবর্তী জানান, বাম সরকার অর্থও মঞ্জুর করে। নানা ডামাডোলের মধ্যে বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য আবাসন তৈরি শুরু হলেও ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন সমস্যায় কাজ আটকে যায়। ‘সালকিয়া বিজনেস মেনস অ্যসোসিয়েশন’ নামের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন হাইকোর্টে মামলা করে। এই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। অবশেষে ২০০১ সালে জিটি রোডের ধারেই ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২০০৪-এ প্রকল্পটি এইচআইটি হাতে নেয়। কিন্তু কাজ শুরু হয়নি।

Advertisement

২০১১-এ রাজ্যে পালা বদলের পরে ফের উড়ালপুল তৈরিতে উদ্যোগ শুরু হয়। এগিয়ে আসেন উত্তর হাওড়ার বিধায়ক তৃণমূলের অশোক ঘোষ। গঠন করা হয় ‘সালকিয়া উড়ালপুল পুনর্বাসন কমিটি’। জটি রোডের ধারেই ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হতেই জট কেটে যায়। রাজ্যের পরিকল্পনা কমিশন থেকে ২০১৩-এ চার কোটি টাকা পেয়েও যায় এইচআইটি। সীতানাথ বোস লেনে আবাসিকদের আবাসন সংস্কারের কাজ শুরু হয়। আরও তিনটি ব্লক তৈরির কাজও শুরু হয়।

এইচআইটি-র মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার মৃণ্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুনর্বাসনের সমস্যাই মাথা ব্যথার কারণ ছিল। সমস্যা মিটে যাওয়ার প্রথম ধাপ সম্পূর্ণ হতে চলেছে।” এইচআইটি সূত্রের খবর, সালকিয়ার সীতানাথ বোস লেন থেকে শুরু হয়ে শ্রীরাম ঢ্যাং লেন পর্যন্ত ২৫ ফুট উঁচু, ৪১০ মিটার লম্বা হবে এই উড়ালপুল। থাকবে দু’টি লেন। ১১ মিটার চওড়া রাস্তা উড়ালপুল তৈরির পরে ২২ মিটার হবে।

এখন সালকিয়া চৌরাস্তা হয়ে বেশ কিছু রুটের বাস চলে। সিগন্যালে বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বলে অভিযোগ। অশোক ঘোষ বলেন, “প্রতিশ্রুতির প্রথম ধাপ সম্পূর্ণ হতে চলেছে। এটাই বড় পাওনা।”

এইচআইটি-র এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, লটারির মাধ্যমে প্রথমে অর্ধেকের বেশি পরিবারকে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হয়। উচ্ছেদ হওয়া ভাড়াটেদের বাজার দরের চেয়ে অনেক কম মূল্যে বাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। যাঁদের জমি ও বাড়ি দুই গিয়েছে তাঁদের জমির জন্য অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি সীতানাথ বোস লেনে বাড়িও দেওয়া হচ্ছে। এখানে সাতটি ব্লকের প্রতিটিতে ১৬টি করে মোট ১১২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। পুনর্বাসন পাওয়া এক ব্যক্তি বলেন, “১৫০ বর্গফুটের ঘরে ভাড়া থাকতাম। সরকার ৩৩৬ বর্গফুট ঘর দিচ্ছে।”

পুরসভার প্রতিনিধি হিসাবে ওই পুনর্বাসন কমিটিতে থাকা ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের গৌতম চৌধুরী (দিলু) বলেন, “অশোকবাবু ও ব্যবসায়ীদের সহায়তায় পুনর্বাসনের কাজ শুরু হচ্ছে। বহু দিনের দাবি মিটবে।” এইচআইটি-র চেয়ারম্যান তৃণমূলের শীতল সর্দার বলেন, ‘‘প্রথম পদক্ষেপ। পুরোদমে কাজ শুরু হবে।” স্বদেশবাবু বলেন, “কে করছে সেটা বড় কথা নয়। উড়ালপুল তৈরি হলে আমি খুশিই হব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন