নিজের বিধানসভা এলাকায় স্কুল পরিচালন সমিতির কর্তৃত্ব একতরফা ‘দখল’ করতে গিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের বিরাগভাজন হয়েছেন উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অনুপ ঘোষাল। এই নিয়ে হুগলিতে দলের অন্দরেই যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেই খবর রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কানেও পৌঁছেছে। তিনি জানিয়েছেন, ওই সব কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে।
হুগলির উত্তরপাড়া বিধানসভা এলাকায় হাইস্কুলের সংখ্যা ২৫। এর মধ্যে এক ডজন স্কুলে নিজেই সভাপতি হয়ে বসেছেন অনুপবাবু। তাঁর বড় মেয়ে অনুপমা আধ ডজন স্কুলের সভাপতি, ছোট মেয়ে দেবযানীরও জুটেছে একটি স্কুলের সভাপতিত্ব। এ ছাড়া আরও পাঁচটি স্কুলের কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিধায়কের দুই মেয়ে। সংক্ষেপে, ২৫টি স্কুলের ২৪টিতেই পরিচালন সমিতিতে ঢুকে রয়েছেন অনুপবাবু বা তাঁর মেয়েরা।
‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবির গায়ক অনুপ ঘোষাল কোন ভূতের বরে এই ক্ষমতা পেলেন, দলের একটা বড় অংশই তা বুঝে উঠতে পারছেন না। বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও অনুপবাবু ফোন ধরেননি, এসএমএস-এরও জবাব দেননি। তবে সরকারের একটি সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তই তাঁর কর্তৃত্ব বিস্তারের ভিত্তি তা কার্যত পরিষ্কার।
মাস চারেক আগে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, স্কুলে অরাজকতা রুখতে স্থানীয় বিধায়কের তত্ত্বাবধানে পরিচালন কমিটিগুলি ঢেলে সাজা হবে। প্রতিটি স্কুলেই কমিটির সম্পাদক হবেন প্রধান শিক্ষক। এলাকার এক চিকিৎসক এবং স্কুল বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় স্কুল পরিদর্শক কমিটির সদস্য হবেন। তাঁরাই ‘শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি’ (পার্সন ইনস্টারেস্টেড ইন এডুকেশন বা পিআই) নির্বাচন করবেন। পর্যায়ক্রমে এই পদ্ধতিতেই গড়া হবে স্কুল কমিটি।
উত্তরপাড়াতেও সেই রদবদলের কাজ শুরু হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধানের যুক্তি দিয়ে অনুপবাবু হয় নিজেই সভাপতি হয়েছেন অথবা ‘নিজের লোক’ বসিয়েছেন বলে অভিযোগ। জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, চিকিৎসক বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, কলেজ-শিক্ষক তপন চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষানুরাগী অদিতি সরকারের মতো মানুষদের ছেঁটে ফেলা হয়েছে। অথচ দলই এঁদের ডেকে এনেছিল। ভোটে লড়ে তাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন। যে এক মাত্র স্কুলে বিধায়ক বা তাঁর মেয়েরা কমিটিতে বা সভাপতি পদে নেই, সেই কোন্নগর এনএনকে বিদ্যামন্দিরে আবার সভাপতি করা হয়েছে উত্তরপাড়া থানার আইসি অরিজিৎ দাশগুপ্তকে।
রীতি অনুযায়ী, শিক্ষানুরাগী বা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত লোকজনকেই সাধারণত স্কুল কমিটিতে রাখা হয়। সে ক্ষেত্রে, কোন যুক্তিতে শিক্ষক-শিক্ষাব্রতীদের বাদ দেওয়া হল আর কোন যুক্তিতে বিধায়কের মেয়ে বা পুলিশ অফিসার সভাপতি হয়ে বসলেন, দলেই সেই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। যদিও আইসি-র দাবি, বিষয়টি জেলার পুলিশ সুপারের অনুমতি সাপেক্ষ। তিনি এখনও সেই অনুমতি নেননি, কাজেই সভাপতি হওয়ার জন্য লিখিত সম্মতিও দিতে পারেননি।
তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বলেন, “স্কুল কমিটিতে এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষজনেরই থাকা উচিত। উত্তরপাড়া বিধানসভা এলাকার সমস্যার কথা আমরা রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলব।” পার্থবাবু বলেন, “আমি ব্যাপারটা জানি। নতুন তৈরি হওয়া কমিটি আমি বাতিল করে দেব।”