আইএসজিপি প্রকল্প

চণ্ডীপুরে কাজ দেখে খুশি বিশ্বব্যাঙ্কের কর্তা

পঞ্চায়েতে কম্পিউটারে এক ক্লিকে বেরিয়ে আসছে জন্ম-শংসাপত্র। তিনি খুশি। ‘জিপিএমএস’ (গ্রাম পঞ্চায়েত ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) ব্যবস্থায় গ্রামোন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিটি খুঁটিনাটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাচ্ছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরে। দেখে তিনি মুগ্ধ। সাঁকো হয়েছে সেতু। মাটির রাস্তা হয়েছে কংক্রিটের। গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে সে সব তাঁর চোখে পড়েছে। গ্রামবাসীর সন্তুষ্টির কথাও তিনি শুনেছেন।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩৮
Share:

গ্রামবাসীদের মধ্যে ওন্নো রুল। —নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েতে কম্পিউটারে এক ক্লিকে বেরিয়ে আসছে জন্ম-শংসাপত্র। তিনি খুশি। ‘জিপিএমএস’ (গ্রাম পঞ্চায়েত ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) ব্যবস্থায় গ্রামোন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিটি খুঁটিনাটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাচ্ছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরে। দেখে তিনি মুগ্ধ।

Advertisement

সাঁকো হয়েছে সেতু। মাটির রাস্তা হয়েছে কংক্রিটের। গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে সে সব তাঁর চোখে পড়েছে। গ্রামবাসীর সন্তুষ্টির কথাও তিনি শুনেছেন।

শুক্রবার দুপুরে উলুবেড়িয়া ১ ব্লকে চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতে ‘আইএসজিপি’ (গ্রাম পঞ্চায়েতের সশক্তিকরণ প্রকল্প) প্রকল্পের কাজ দেখতে এসে নিজের সন্তোষপ্রকাশ করলেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের কর্তা ওন্নো রুল। বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় ২০১০ সাল থেকে রাজ্যের যে এক হাজার পঞ্চায়েতে ‘আইএসজিপি’ প্রকল্পের কাজ চলছে, তার মধ্যে রয়েছে চণ্ডীপুরও। ওন্নো বিশ্বব্যাঙ্কের তরফে ভারতে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত। এ দিন প্রতিনিধি দল নিয়ে এসে সরেজমিনে প্রকল্পের কাজকর্ম দেখার পরে তিনি বলেন, “এই পঞ্চায়েতে যে ভাবে কাজ হচ্ছে আইএসজিপি প্রকল্পে সেটাই মূল কথা। উপরে বসে শুধু নীতি নির্ধারণ করলেই হবে না। সেই সব পরিকল্পনা সরাসরি গ্রামবাসীদের কী উপকারে লাগছে তা দেখতে হবে। সব সম্ভব হয়েছে পঞ্চায়েত সদস্যদের নিবিড় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।”

Advertisement

এ রাজ্যে বিশ্বব্যাঙ্কের মোট এক হাজার কোটি টাকার ওই প্রকল্প চলবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। পঞ্চায়েতের সদস্য, পদাধিকারী এবং কর্মীদের নিরন্তর প্রশিক্ষণ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের কাজে অর্থ সাহায্যও করা হচ্ছে। যে সব পঞ্চায়েত এই প্রকল্পে সাহায্য পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছে প্রতি বছর তাদের মূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাঙ্কই। তারই ভিত্তিতে প্রতি বছর যোগ্য গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে অনুদান দেওয়া হয়। চণ্ডীপুর পঞ্চায়েত কোনও বার মূল্যায়নে অকৃতকার্য হয়নি। ফলে, এ পর্যন্ত যে চার কিস্তিতে টাকা দেওয়া হয়, তা প্রতিবারই পেয়েছে পঞ্চায়েত।

তবে, শুধু চন্ডীপুরই নয়, রাজ্যের সর্বত্রই আইএসজিপি প্রকল্পে ভাল কাজ হচ্ছে বলে জানান বিশ্বব্যাঙ্কের ওই কর্তা। তিনি বলেন, “কেরল, কর্নাটক এবং বিহারেও প্রকল্পটি চলছে। বেশি পঞ্চায়েতকে নিয়ে কাজ হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গেই। সে দিক থেকে দেখতে গেলে বাকি রাজ্যগুলির তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের সাফল্য উল্লেখযোগ্য।”

ওন্নো কলকাতা আসেন বৃহস্পতিবার। ওই দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করেন। তারপরেই চণ্ডীপুরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানান, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও রাজ্য চাইলে ওই প্রকল্পে ফের ঋণ দিতে পারে বিশ্বব্যাঙ্ক। তিনি বলেন, “রাজ্য অর্থ দফতর ঋণ শোধের নিশ্চয়তা দিলে এবং পঞ্চায়েত দফতর সহায়তা করলে বিশ্বব্যাঙ্ক ফের প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করতেই পারে।” এ দিন চণ্ডীপুরে গ্রাম পঞ্চায়েতের কম্পিউটার থেকে এক সদ্যোজাতের জন্মের শংসাপত্র তাঁর দিদিমার হাতে তুলে দেন ওন্নো নিজে। যে ভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই শংসাপত্র বেরিয়ে আসে, তা দেখে ওন্নো বলে ওঠেন, ‘অসাধারণ’। গ্রামেও প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে যান বিশ্বব্যাঙ্কের কর্তা। কুলগাছিয়ায় মেদিনীপুর খালের উপরে ঢালাই সেতু তৈরি হয়েছে আইএসজিপি প্রকল্পের টাকায়। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে গ্রামবাসীরা সরাসরি জানান, কাঠের সাঁকোর পরিবর্তে কংক্রিটের সেতু হওয়ায় তাঁরা খুশি। পঞ্চায়েত প্রধান সুমিত্রা রং-কে ওন্নো জিজ্ঞাসা করেন, “কী ভাবে সেতু তৈরি হল?” সুমিত্রাদেবী জানান, শুধু আইএসজিপি-র টাকায় কুলোচ্ছিল না বলে বিধায়ক তহবিল ও পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল মিলিয়ে সেতুটি তৈরি করা হয়েছে।” তাতে বেজায় খুশি হন ওন্নো। এর পরে তিনি মণ্ডলপাড়ায় প্রকল্পে তৈরি এক কংক্রিটের রাস্তা পরিদর্শন করেন। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথাও বলেন।

ওন্নোর সঙ্গে আসা প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্যের তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত পঞ্চায়েত দফতর ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সৌম্য পুরকায়েত-সহ পদস্থ আধিকারিকেরা। সৌম্যবাবু জানান, দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল বাদ দিয়ে রাজ্যের বাকি ৩৩০০ পঞ্চায়েতের জন্য এই প্রকল্পে ঋণ চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাঙ্কে আবেদন করা হয়েছে। রাজ্য অর্থ দফতর ওই প্রস্তাবটিতে ছাড়পত্রও দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন