ছেলের মৃত্যুর এক মাস, মায়ের ঝাঁপ কুয়োয়

পুকুরে ডুবে দু’বছরের ছেলে মারা যাওয়ার পরে গত এক মাস অবসাদে ভুগছিলেন মা। ঘটনার ঠিক এক মাসের মাথায়, রবিবার সকালে ওই মহিলাকে বাড়ির পাতকুয়োয় হাবুডুবু খাওয়া অবস্থায় আবিষ্কার করল তাঁর বড় ছেলে, ১২ বছরের এক কিশোর। প্রতিবেশীরা কুয়োয় মই নামিয়ে দিলেও মহিলা কিছুতেই উঠতে রাজি হচ্ছিলেন না। আধ ঘণ্টারও বেশি সময় এই টানাপড়েন চলার পরে দমকলকর্মীরা ওই মহিলাকে উদ্ধার করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৫
Share:

পুকুরে ডুবে দু’বছরের ছেলে মারা যাওয়ার পরে গত এক মাস অবসাদে ভুগছিলেন মা। ঘটনার ঠিক এক মাসের মাথায়, রবিবার সকালে ওই মহিলাকে বাড়ির পাতকুয়োয় হাবুডুবু খাওয়া অবস্থায় আবিষ্কার করল তাঁর বড় ছেলে, ১২ বছরের এক কিশোর। প্রতিবেশীরা কুয়োয় মই নামিয়ে দিলেও মহিলা কিছুতেই উঠতে রাজি হচ্ছিলেন না। আধ ঘণ্টারও বেশি সময় এই টানাপড়েন চলার পরে দমকলকর্মীরা ওই মহিলাকে উদ্ধার করেন।

Advertisement

ঘটনাটি ঘটেছে বেলুড়ের মুখার্জি লেনে। পুলিশের ধারণা, সুস্মিতা দাস (৩৬) নামে ওই মহিলা আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গত ১৭ জুলাই সুস্মিতাদেবীর ছোট ছেলে, দু’বছরের প্রীতম বাড়ির পাশেই পুকুরে ডুবে মারা যায়। এর পর থেকেই অবসাদে ভুগছিলেন ওই মহিলা। বেশির ভাগ সময়েই চুপচাপ থাকতেন। বেলুড়েরই একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী সুস্মিতার স্বামী জলধর দাস স্থানীয় কুলি লাইন এলাকার এক কারখানায় ঝালাইয়ের কাজ করেন।

Advertisement

পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ কারখানায় চলে যান জলধরবাবু। বাড়িতে ছিলেন সুস্মিতাদেবী ও তাঁর শাশুড়ি মেনকা দাস এবং সুস্মিতাদেবীর বড় ছেলে প্রবীর। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ প্রবীরকে কচুরি কিনতে পাঠান সুস্মিতাদেবী। তাঁর শাশুড়ি মেনকা দাসও বাজারে গিয়েছিলেন।

প্রবীর জানায়, সে ফিরে দেখে সদর দরজা, জানলা খোলা। ঠাকুরমা তখনও ফেরেননি, কিন্তু মা-ও বাড়িতে নেই। ডেকেও মায়ের সাড়া পায়নি ওই কিশোর। প্রতিবেশীদের বাড়িতেও সুস্মিতাদেবীকে পাওয়া যায়নি।

ইতিমধ্যে প্রবীর যায় বাড়ির পিছনে, যেখানে পাতকুয়ো রয়েছে। সেখানে সেই সময়ে একটি বিড়াল বসেছিল। ওই কিশোর বলে, “ভাবলাম, বিড়ালটা কুয়োয় পড়ে যেতে পারে। সে জন্য ওকে তাড়াতে কুয়োর ধারে যাই। আর তখনই গোঙানির শব্দ শুনি।”

কুয়োয় উঁকি মারতেই প্রবীর দেখে, প্রায় দশ ফুট নীচে জলে হাবুডুবু খাচ্ছেন তার মা। ভয়ে চিৎকার করে ওঠে সে। ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। সুস্মিতাদেবী যাতে উপরে উঠে আসতে পারেন, সে জন্য কয়েক জন যুবক একটি বাঁশের মই জোগাড় করে পাতকুয়োর ভিতরে নামিয়ে দেন। কিন্তু মহিলা উঠে আসতে রাজি হচ্ছিলেন না।

প্রতিবেশী রঞ্জনা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আমরা বারবার সুস্মিতাকে উঠে আসতে বলছিলাম। কিন্তু হাবুডুবু খেলেও কিছুতেই ও মই ধরে উপরে উঠছিল না।” আর এক প্রতিবেশী সন্ধ্যা ভৌমিক বলেন, “ছোট ছেলেটা মারা যাওয়ার পর থেকেই সুস্মিতা চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এমন কাণ্ড ঘটাবে ভাবিনি!”

ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ। লিলুয়া ও বালি থেকে আসেন দমকলকর্মীরা। দমকলকর্মীরা পাতকুয়োয় মই নামিয়ে দেন। দড়ি নিয়ে দু’জন দমকল কর্মী নামেন। সুস্মিতা তখন প্রায় অচেতন। দমকলকর্মীরা তাঁকে তুলে আনার পরে মহিলাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় টি এল জায়সবাল হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement