জিরাটে পুকুর বোজানোয় আপত্তি জানিয়ে প্রতিবাদীরাই বিপাকে

এলাকায় দীর্ঘদিনের একটি পুকুর বোজানোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বাসিন্দারা। প্রতিবাদে সরব হয়েছিল স্থানীয় একটি ক্লাবও। কিন্তু প্রশাসনের সহযোগিতার বদলে পুলিশি হেনস্থার অভিযোগ তুললেন ওই প্রতিবাদীরা। ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির জিরাটের আহম্মদপুর মৌজায়। পাশাপাশি ওই পুকুর বোজানোকে কেন্দ্র করে শাসক দলের দু’পক্ষের বিবাদও চরমে উঠেছে। স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসনের চৌহদ্দি পেরিয়ে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জিরাট শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৪
Share:

এই পুকুর বোজানোকে ঘিরেই উঠেছে বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।

এলাকায় দীর্ঘদিনের একটি পুকুর বোজানোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বাসিন্দারা। প্রতিবাদে সরব হয়েছিল স্থানীয় একটি ক্লাবও। কিন্তু প্রশাসনের সহযোগিতার বদলে পুলিশি হেনস্থার অভিযোগ তুললেন ওই প্রতিবাদীরা। ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির জিরাটের আহম্মদপুর মৌজায়। পাশাপাশি ওই পুকুর বোজানোকে কেন্দ্র করে শাসক দলের দু’পক্ষের বিবাদও চরমে উঠেছে। স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসনের চৌহদ্দি পেরিয়ে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

Advertisement

নিয়মরীতির তোয়াক্কা না করেই আহম্মদপুর মৌজার (জেএল নং-৮৮,দাগ নং ২৭৩) পুকুরটি বোজানো হচ্ছিল বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান তাঁরা। স্থানীয় বলাগড় থানার পুলিশ বা প্রশাসনকে পুরো বিষয়টি জানান স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে। অভিযোগ, তারপরেই হেনস্থার শুরু। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ প্রাথমিকভাবে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে যাঁরা প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। পুকুর বোজানোর বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্যরাও রাস্তায় নামেন। কিন্তু কোনও প্রতিবাদেই পুলিশ আমল দিতে নারাজ। প্রতিবাদী মানুষজনের অভিযোগ, শাসক দলের একাংশ পুকুর বোজানোর ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকায় পুলিশ সব দেখেও দেখছে না। যদিও শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে পড়ে পুকুর বোজানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিএলআরও অফিস থেকে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পুকুরটি বোজানো শুরু হয়। প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন বাসিন্দারা। সামিল হয় একটি ক্লাবও। প্রতিবাদের জেরে সাময়িকভাবে পুকুর বোজানো বন্ধও হয়ে যায়। পরে যাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন তাঁরা থানায় গিয়ে জানতে পারেন, পুকুরের মালিকপক্ষ ক্লাবের যে তিন সদস্যের বিরুদ্ধে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এনে থানায় জমা দিয়েছেন।” এরপরই ফের পুকুর বোজানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। পুলিশকে জানিয়ে কোনও কাজ না হওয়ায় এবার প্রতিবাদীরা বিডিও-র শরণাপন্ন হন। বিডিও পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ। উল্টে রাতেও জেনারেটর চালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করে পুকুর বোজানোর কাজ চলছিল। বাধ্য হয়ে বাসিন্দারা জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, এসডিএলআরও এবং মৎস্য দফতরে সমস্ত ঘটনা জানান।

Advertisement

টনক নড়ে প্রশাসনের। স্থানীয় বিএলআরও অফিস থেকে তড়িঘড়ি মালিকপক্ষকে অবিলম্বে পুকুরের যে অংশে মাটি ফেলা হয়েছিল সেখান মাটি তুলে অন্যত্র ফেলার নির্দেশ দেন। আর এরপরেই যাঁরা পুকুর বোজানোর বিরুদ্ধে সরব তাঁদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর, মূলত যে ব্যক্তি পুকুর বোজানোর ঘটনায় জড়িত তিনি এলাকায় প্রোমোটারি ব্যবসায় পরিচিত মুখ। কম দামে পুকুর কিনে বুজিয়ে চড়া দামে প্লট করে বিক্রির ব্যবসায় দীর্ঘদিন ধরেই তিনি জড়িত।

বিডিও রণজিত সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা ওই পুকুর বোজানো সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ এবং বিএলআরও দফতরকে সমস্ত বিষয়টি জানাই। এরপর পুকুরটি বোজানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ওই পুকুর থেকে মাটি কাটার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে তদন্ত করে দেখা যায়, আদতে পুকুরটি বোজান হচ্ছিল। এরপরই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” তিনি জানান, পুকুরটি বোজাতে ফেলা মাটিও সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুকুর বোজানোর ঘটনায় দলের একাংশের জড়িত থাকার অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি বলাগড়ের তৃণমূল নেতা শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “দল এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। যেখানে যা অনৈতিক কাজ হচ্ছে, তার দায়ও সব সময় আমাদের ঘাড়েই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেখানে দলের কোনও ভূমিকা নেই, সেইসব ক্ষেত্রেও। তবে আহম্মদপুরের ঘটনাটি নিয়ে আমি খোঁজ নেব। আমাদের কেউ জড়িত আছে প্রমাণ হলে দল তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন