জঞ্জালে রুদ্ধ হয়েছে সরস্বতীর গতি

এখানকার সব রাস্তাই পাকা। নয় পিচের, নয় কংক্রিটের। পাকা প্রায় প্রতিটি বাড়িও। সব বাড়িতেই রয়েছে বিদ্যুত্‌ সংযোগ। এখানে নাটকের দল, ক্লাবের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। সময়ের নিয়মে বাড়ছে বহুতলও। চেহারায় পুরোপুরি শহুরে ছাপ পড়লেও আন্দুল আসলে গ্রাম পঞ্চায়েত। জনসংখ্যার চাপ যে ভাবে বাড়ছে, তা সামাল গিতে হিমশিম খাচ্ছে সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েতটি। কেননা, বাড়ছে সমস্যা। নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল, রাস্তায় যত্রতত্র পড়ে থাকে জঞ্জাল, রয়েছে যানজটও।

Advertisement

নুরুল আবসার

আন্দুল শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪০
Share:

এখানকার সব রাস্তাই পাকা। নয় পিচের, নয় কংক্রিটের।

Advertisement

পাকা প্রায় প্রতিটি বাড়িও। সব বাড়িতেই রয়েছে বিদ্যুত্‌ সংযোগ।

এখানে নাটকের দল, ক্লাবের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়।

Advertisement

সময়ের নিয়মে বাড়ছে বহুতলও।

চেহারায় পুরোপুরি শহুরে ছাপ পড়লেও আন্দুল আসলে গ্রাম পঞ্চায়েত। জনসংখ্যার চাপ যে ভাবে বাড়ছে, তা সামাল গিতে হিমশিম খাচ্ছে সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েতটি। কেননা, বাড়ছে সমস্যা। নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল, রাস্তায় যত্রতত্র পড়ে থাকে জঞ্জাল, রয়েছে যানজটও। এ সব সমস্যা মেটানোর মতো আর্থিক সংস্থান যে পঞ্চায়েতের নেই, তা মেনে নিচ্ছেন প্রধান লতিকা আদক। আন্দুলকে পুরসভার মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবশ্য ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার নিয়েছে। বাসিন্দাদের অনেকেই চান, অবিলম্বে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হোক।

আড়গোড়ি, জঙ্গলপুর এবং আন্দুল এই তিনটি মৌজা নিয়ে আন্দুল গ্রাম পঞ্চায়েত। তার মধ্যে আন্দুল মৌজাকে ঘিরেই মূলত গড়ে উঠেছে শহর। ধীরে ধীরে তা প্রসারিত হচ্ছে জঙ্গলপুর এবং আড়গোড়িতেও। জঙ্গলপুর আবার পুরোপুরি শিল্পাঞ্চল। এখানে যে বেসরকারি শিল্পতালুক রয়েছে, তাতে অন্তত ৪০০টি কারখানা গড়ে উঠেছে। জামা-কাপড়ের ব্যবসার জন্য আবার নাম করেছে আড়গোড়ি।

অথচ, হাওড়া জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই জনপদে প্রায় প্রতিদিন বেশির ভাগ সময়েই যানজটে নাভিশ্বাস ওঠে সাধারণ মানুষের। মৌড়িগ্রাম রেলওয়ে উড়ালপুল থেকে আন্দুল রোড মিশেছে মুম্বই রোডে। এই রাস্তা ধরে কিছুটা গেলেই আন্দুল বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকেই শহরে ঢোকার প্রধান রাস্তাটি চলে গিয়েছে বাজার মোড় পর্যন্ত। এই রাস্তারই একটি অংশ চলে গিয়েছে আন্দুল রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত। যানজটে শহরের এই দু’টি প্রধান রাস্তাই জেরবার হয়। বাসস্ট্যান্ড থেকে বাজার মোড় পর্যন্ত রাস্তার চারদিকে অসংখ্য দোকান। বাজার মোড়ে রয়েছে পাশাপাশি চারটি হাইস্কুল। কিন্তু সংকীর্ণ রাস্তায় বিশেষ করে সকালের দিকে যানজটে জন্য চলাচল দায় হয় সাধারণ মানুষের। স্থানীয় বাসিন্দারা এই রাস্তাটি চওড়া করার দাবি জানালেও, ব্যবসায়ীদের পাল্টা প্রস্তাবআন্দুল রাজবাড়ির কাছ থেকে বাইপাস রাস্তা তৈরি করা হোক। কিন্তু করবে কে? পঞ্চায়েতের হাতে টাকা কোথায়?

নিকাশি-নালাগুলিরও নিয়মিত সংস্কার হয় না। শহরে বর্জ্য ফেলার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি পঞ্চায়েত। ফলে, জঞ্জালের স্তুপে ঢাকা পড়ছে শহর। অনেকে জঞ্জাল ফেলেন নিকাশি-নালাগুলির উপরেই। এতে এক দিকে যেমন নালাগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অন্য দিকে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বর্ষাকালে এলাকায় জল জমে যাচ্ছে বলে জানান চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা, সমাজকর্মী দুর্গাপদ দাস। অবশ্য এই চিত্র কমবেশি প্রতিটি পাড়ারই।

এক সময়ে এই শহরের প্রাণ ছিল সরস্বতী নদী। কিন্তু সংস্কারের অভাবে সেই নদী এখন যেন শহরের বোঝা। নদীর পাড়েই ডাঁই হয়ে পড়ে থাকে জঞ্জাল। পঞ্চায়েত প্রধান লতিকা আদকের দাবি, “আমরা নিয়মিত শহরের নিকাশি নালাগুলি সংস্কার করি। কিন্তু মানুষ ফের জঞ্জাল ফেলে নোংরা করেন। মানুষের সচেতনতার অভাব আছে।” একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন, “জঞ্জাল ফেলার জন্য আমরা জায়গা খুঁজেছিলাম। কিন্তু পাওয়া যায়নি। আরও একটা উপায় আছে গাড়িতে করে জঞ্জাল তুলে অন্যত্র ফেলা যায়। কিন্তু তার জন্য অনেক টাকা দরকার। সেই টাকা আমাদের নেই।”

সমস্যা রয়েছে আরও। শহর বাড়লেও এখনও হয়নি বৈদ্যুতিক চুল্লি। সরস্বতীর পাড়ে মৃতদেহ দাহ হয় কাঠের চুল্লিতে। স্থানীয় বাসিন্দারা বহুদিন ধরে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লির দাবি জানিয়ে আসছেন। অবশ্য, এই সব সমস্যা থাকা সত্ত্বেও প্রোমোটারদের আনাগোনা থেমে নেই। বহুতলগুলি দেখে বোঝার উপায় নেই, এলাকাটি এখনও পঞ্চায়েতের মধ্যে রয়েছে। যে সব বনেদি বাড়ির সংস্কার হচ্ছে না, সেই সব বাড়ির মালিকেরাই জমি-বাড়ি প্রোমোটারের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এই জনপদ গড়ে ওঠার পিছনে এক সময়ে অবদান ছিল জমিদারবাড়ি মল্লিকবাড়ির। আন্দুল বাসস্ট্যান্ডের কাছে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো সেই জমিদারবাড়ি এখন জীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকলেও ইতিমধ্যে তা চলে গিয়েছে প্রোমোটারের হাতে। এই বাড়ির বধূ দেবিকা মিত্র বটানিক্যাল গার্ডেনের অধিকর্তার পদ থেকে অবসর নিয়েছেন বেশ কয়েক বছর হল। তিনি বলেন, “আমাদের জমিদারবাড়িটিও প্রোমোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কী আর করা যাবে। নিজেরা তো আর সংস্কার করতে পারছি না।”

জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হওয়ায় পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা খুশি। কিন্তু পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা, তথা হাওড়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্যও স্বীকার করেন সমস্যাগুলির কথা, “শহর বাড়ছে। আনুষঙ্গিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। সেই কারণেই আন্দুলকে পুরসভায় উন্নীত করার জন্য রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুরসভার পরিকাঠামো ও টাকা দুই-ই বেশি। তা হলে শহর অনেক উন্নত পরিষেবা পাবে।”

আপাতত সেই অপেক্ষাতেই দিন কাটাচ্ছে আন্দুল।

নিকাশি, জঞ্জাল আর যানজটের ত্র্যহস্পর্শে অতিষ্ঠ শহরের মানুষ। ছবি তুলেছেন সুব্রত জানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন