মাত্র তিন কাঠা জমি জোগাড় না হওয়ায় বাতিল হয়ে গেল উলুবেড়িয়ায় ‘রাবার মোল্ডিং ক্লাস্টার’ প্রকল্প। ফেরত গেল কেন্দ্রীয় সাহায্যের ১০ লক্ষ টাকা।
রাজ্যে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে জোর দেওয়ার কথা বারবার বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে প্রকল্প হলে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক উপকৃত হতেন, উলুবেড়িয়ার বাসুদেবপুরে সেই প্রকল্প সম্প্রতি বাতিল হয়ে যাওয়া নিয়ে জেলা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর এবং ওই ক্লাস্টার গড়ার জন্য তৈরি কমিটি পরস্পরকে দুষছে। এই পরিস্থিতিতে ওই শিল্পের আধুনিকীকরণের পরিকল্পনাও আপাতত বিশ বাঁও জলে চলে গেল বলে মনে করছেন শ্রমিকেরা।
প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও ক্লাস্টার তৈরির ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার পণ্যের গুণমান যাচাই করা থেকে শুরু করে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার জন্য ‘কমন ফেসিলিটি সেন্টার’ (সিএফসি) তৈরি করবে। সেই কেন্দ্র তৈরির জন্য যে টাকা লাগে, তার ৯০ শতাংশ টাকা অনুদান হিসেবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দেয়। বাকি ১০ শতাংশ টাকা মিলিত ভাবে জোগাড় করতে হয় কারখানা-মালিকদেরই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কারখানা-মালিকেরা সিএফসি-র জন্য যে জমি লাগে, তার দামটাই ১০ শতাংশ বিনিয়োগ হিসেবে ধরে দেয়।
ওই রাবার ক্লাস্টারের জন্য জমি ক্ষুদ্র শিল্পসংস্থাগুলির মিলিত কমিটি (জেভিসি)-রই জোগাড় করার কথা থাকলেও এক বছরে তারা তা জোগাড় করতে পারেনি। জমি কিনতে না পারার কথা মেনে নিয়ে ওই কমিটির অভিযোগ, তারা জমি ‘লিজ’ নেওয়ার চেষ্টা করলেও কোনও সহযোগিতা করেনি জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর। পক্ষান্তরে, ওই দফতরের দাবি, ‘লিজ’ সংক্রান্ত কোনও আলোচনা বা আবেদন হয়নি। ফলে, প্রকল্প বাতিল করা হয়।
জেলা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের জেনারেল ম্যানেজার অশোক সিংহ রায়ের দাবি, “ক্লাস্টার গড়ার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্পটির জন্য জমির ব্যবস্থা করার কথা ছিল। সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় এবং ওরা জমির ব্যবস্থা করতে না পারায় প্রকল্প বাতিল হয়েছে। নতুন ভাবে বিকল্প পদ্ধতিতে ক্লাস্টারটি কী ভাবে তৈরি করা যায় দেখা হচ্ছে।”
উলুবেড়িয়ার রঘুদেবপুর, ঘোষালচক এবং বুড়িখালি-বাদামতলা এলাকায় তিনশোরও বেশি ছোটবড় রাবার কারখানা রয়েছে। সেখানে তৈরি হয় রাবারের ছোটখাটো জিনিস। প্রতিদিন সেখানে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়। এখানকার উৎপাদিত পণ্য রাজ্য ছাড়াও দেশের নানা জায়গায় বিক্রি হয়। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক।
এই রাবার শিল্পকে আরও উন্নত করতে ২০১২ সালে বাসুদেবপুরে মুম্বই রোডের ধারে রাবার মোল্ডিং ক্লাস্টার তৈরির পরিকল্পনা করে জেলা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর। ঠিক হয়, ছোট শিল্পসংস্থাগুলিকে এক ছাদের তলায় আনা হবে। সেখানে কাঁচামাল সরবরাহ থেকে প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং পণ্য বিপণনেরও সুযোগ থাকবে। এই পরিকল্পনা কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়। গত বছরের গোড়ায় কেন্দ্র প্রকল্পটি অনুমোদন করে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে ভবন তৈরির জন্য। এ জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র তিন কাঠা জমি। পরে অন্যান্য পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হত বলে জানিয়েছে ওই দফতর।
কিন্তু এক বছরেও সেই জমি কেন জোগাড় করতে পারল না শিল্পসংস্থাগুলির মিলিত কমিটি?
কমিটির দাবি, বাসুদেবপুর এমন এলাকা, যেখানে জাতীয় সড়কের ধারে কম পরিমাণ জমি পাওয়া মুশকিল। বেশি পরিমাণ জমি থাকলেও তা কেনার সামর্থ্য তাদের ছিল না। তাই, তারা জমি ‘লিজ’ নিতে উদ্যোগী হয়। জমিও চিহ্নিত হয়। কিন্তু জমি-মালিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আগেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়।
রাবার মোল্ডিং ক্লাস্টার কমিটির সম্পাদক শেখ আমিরুজ্জামানের অভিযোগ, “ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর মাত্র এক বছর অপেক্ষা করল। আমরা জমি লিজ নেওয়ার জন্য ওই দফতরের কাছে বহুবার গিয়েছি। কিন্তু দফতর সহযোগিতা করেনি। আমাদের বেশি সময়ও দেয়নি। আচমকাই প্রকল্পটি বাতিল করে দিল।” প্রকল্প বাতিল হওয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। তবে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে ওই ক্লাস্টার গড়ার জন্য চেষ্টার আশ্বাস দিয়েছেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী তথা দক্ষিণ হাওড়ার বিধায়ক অরূপ রায়।