স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে হাওড়া জেলায় বাড়ি বাড়ি শৌচালয় তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু ওই প্রকল্পেই বাজার-বাসস্ট্যান্ডের মতো জনবহুল এলাকায় গণ-শৌচালয় (কমিউনিটি টয়লেট) তৈরির কাজে এখনও গতি এল না। ফলে, যে সব সাধারণ মানুষের কথা ভেবে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা এর সুবিধা পাচ্ছেন না। সবচেয়ে সমস্যায় পড়ছেন মহিলারা।
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই প্রকল্প কার্যকর করার কথা। কিন্তু তারা সে ভাবে উদ্যোগী হচ্ছে না। অভিযোগ উড়িয়ে জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা দাবি করেছেন, তাঁরা গণ-শৌচালয় তৈরি করতে চাইলেও জল এবং জমির সমস্যায় তা করতে পারছেন না।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি গণ-শৌচালয় তৈরির জন্য স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে দু’লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হবে স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্প থেকে। বাকি ২০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতকে। হাওড়ায় ১৪টি ব্লকে মোট গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৫৭। ওই সব ব্লক এলাকায় কমপক্ষে আড়াইশোরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং জনবহুল জায়গা রয়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে জেলায় গণ-শৌচালয় রয়েছে মেরেকেটে ৫০টি। ‘সুলভ শৌচালয়’ নামে যা তৈরি হয় কয়েক বছর আগে ‘নির্মল ভারত অভিযান’ প্রকল্পে। সেই সব শৌচালয়ের কয়েকটি এখন আর ব্যবহারযোগ্যও নেই।
স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের হাওড়ার আহ্বায়ক তপন চক্রবর্তী বলেন, “এ পর্যন্ত মাত্র সাতটি কমিউনিটি টয়লেট তৈরির আবেদন জমা পড়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েত আবেদন করলেই আমরা অনুমতি দিয়ে দেব। ওই শৌচালয় বেশি পরিমাণে তৈরি হওয়া দরকার।”
জেলার কয়েকটি জনবহুল এলাকার মধ্যে অন্যতম বাগনান বাসস্ট্যান্ড, আমতা বাসস্ট্যান্ড, পাঁচলা, আলমপুর, রানিহাটি, ধুলাগড়ি, ডোমজুড় বাসস্ট্যান্ড, ডোমজুড় বাজার, মাকড়দহ বাজার। ওই সব এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু এর মধ্যে বাগনান বাসস্ট্যান্ডে দু’টি, আমতা বাসস্ট্যান্ড ও কোটগোড়ায় গণ-শৌচালয় রয়েছে। আমতার কলাতলা এলাকায় শৌচালয় থাকলেও তা বেশির ভাগ সময় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে থাকে। উদয়নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ড, পাঁচারুল, শ্যামপুর তিন মাথার মোড় এবং বেলপুকুরে শৌচালয় থাকলেও ৫৮ গেট বা গড়চুমুকে শৌচালয় নেই।
কেন জনবহুল এলাকায় গণ-শৌচালয় গড়া যাচ্ছে না?
বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতের দাবি, ওই শৌচালয় নির্মাণের জন্য যে দু’লক্ষ টাকা ধরা হয়েছে, তাতে জলের সংস্থানের জন্য আলাদা কোনও খরচ ধরা হয়নি। সেই খরচের দায় স্বচ্ছ ভারত মিশন কর্তৃপক্ষ তাদের উপরেই চাপাচ্ছে। কিন্তু সেই খরচ তাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া রয়েছে জায়গার সমস্যাও।
উলুবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তৃণমূলের মদন মণ্ডলের কথায়, “টাকার সমস্যাটিই মূল। কারণ একটি গণ শৌচালয় তৈরির জন্য সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়ে জলের ব্যবস্থা করতে বাড়তি এক লক্ষ টাকা লাগবে। সেই টাকা আমাদের পক্ষে জোগাড় করা যথেষ্ট কষ্টকর। তবে, যে সব জায়গায় জলের পাইপলাইন রয়েছে, আপাতত সেই সব জায়গাতেই ওই শৌচালয় তৈরির চেষ্টা চলছে।”
বাগনান-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের নয়ন হালদার বলেন, “জায়গার সমস্যা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা জমি জোগাড়ের চেষ্টা করছি। জমি মিললে শৌচালয় তৈরি করব।” সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তপন পালেরও দাবি, “জমি খোঁজা হচ্ছে। তা মিললেই শৌচালয় তৈরি করা যাবে।” একই সুর শোনা গিয়েছে আরও কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতি এবং পঞ্চায়েত প্রধানের মুখে।
কিছু এলাকায় জলের সমস্যার কথা মেনে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। কেননা, সর্বত্র জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এ নিয়ে স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের জেলা আহ্বায়ক তপন চক্রবর্তী জানান, যে সব জায়গায় ওই পাইপলাইন আছে, সেখানে ওই দফতরকে জানালে তারাই জলের ব্যবস্থা করে দেবে। অন্যত্র জলের ব্যবস্থা পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিকেই করতে হবে।
কর্মসূত্রে পাঁচলার রানিহাটি থেকে রোজ কলকাতা যেতে হয় শুভব্রত চক্রবর্তী, সমর চৌধুরীদের। উলুবেড়িয়া থেকে কলকাতা যান কলেজ ছাত্রী অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সকলেই মনে করেন, বাসস্ট্যান্ড ও বাজার এলাকাগুলিতে দ্রুত গণ-শৌচালয় তৈরি করা জরুরি। তাঁরা চান, প্রশাসন উদ্যোগী হোক।