আরামবাগে অভিযুক্ত বিজেপি

তৃণমূল কর্মীর ঘরে আগুন, মাধ্যমিকের আগে লুঠ বইও

এলাকার দখল নিয়ে মাস পাঁচেক আগে বিজেপি ও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অশান্তিতে তপ্ত হয়েছিল আরামবাগের হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েতের পূর্ব কৃষ্ণপুর গ্রাম। ফের সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় অশান্ত হল ওই এলাকা। তবে, এ বার মূলত বিজেপির হাতে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরাই আক্রান্ত হন। বোমাবাজি, বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট কিছুই বাদ যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৩
Share:

তৃণমূল কর্মীর পুড়ে যাওয়া ঘর। ছবি: মোহন দাস।

এলাকার দখল নিয়ে মাস পাঁচেক আগে বিজেপি ও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অশান্তিতে তপ্ত হয়েছিল আরামবাগের হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েতের পূর্ব কৃষ্ণপুর গ্রাম। ফের সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় অশান্ত হল ওই এলাকা। তবে, এ বার মূলত বিজেপির হাতে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরাই আক্রান্ত হন। বোমাবাজি, বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট কিছুই বাদ যায়নি। লুঠ হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বইপত্রও। দলের কয়েক জন ঘরছাড়া বলে দাবি তৃণমূলের।

Advertisement

আরামবাগ থানার আইসি অলোকরঞ্জন মুন্সি জানান, ওই ঘটনায় এ দিন রাত পর্যন্ত কোনওপক্ষই লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে, ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট বসেছে। এক বিজেপি কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ বার গোলমালের সূত্রপাত গত রবিবার থেকে। দলীয় পতাকা টাঙানোকে কেন্দ্র করে বিজেপির কয়েক জনকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সোমবার ফের পতাকা টাঙালে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রাতে দু’পক্ষের বোমাবাজি হয়। মঙ্গলবার ভোর হতেই আশপাশের দর্জিপোতা, সাহাবাগ, গোলামিচক, অরুণবেড়া, মধুরপুর প্রভৃতি গ্রাম থেকে তৃণমূল কর্মীরা এসে পূর্ব কৃষ্ণপুরে জড়ো হন। খবর পেয়ে শ’দুয়েক বিজেপি কর্মী-সমর্থক তাঁদের তাড়া করে। দু’পক্ষের মধ্যে ফের বোমাবাজি হয়। তৃণমূলের ছেলেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এর পরেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা মারধর, লুঠপাট এবং তৃণমূল সমর্থকদের বাড়িতে ও ধানের গোলায় আগুন লাগায় বলে অভিযোগ।

Advertisement

এ দিন দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্বনাথ দলুই নামে এক তৃণমূল কর্মীর খড়ের চাল ভস্মীভূত। ভস্মীভূত তৃণমূল কর্মীদের ১০টি খড়ের গাদাও। প্রহৃত হন তৃণমূল সমর্থক এক দম্পতি-সহ তিন জন। লুটপাট চলেছে তৃণমূল কর্মী অসিত মালিকের বাড়িতে। তাঁর মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী চন্দ্রা মালিকের বইখাতাও লুঠ হয় বলে অভিযোগ। চন্দ্রার মা সনকা মালিক বলেন, “স্বামীকে মারবে বলে জয়নালের লোকরা এসেছিল। না পেয়ে সর্বস্ব নিয়ে গেল। মেয়ের বইপত্র নিয়েও পালাল। আটকাতে গেলে আমাকে গালাগাল দিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।”

যে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল, তারা মূলত স্থানীয় নেতা জয়নাল খাঁর অনুগামী হিসেবে পরিচিত। জয়নাল এক সময়ে ছিলেন সিপিআই নেতা। পরে কংগ্রেসে যান। গত বছর কংগ্রেস ছেড়ে তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেই সময়ে অবশ্য আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁকে বিজেপিতে নেওয়া হয়নি। কিন্তু তাঁর অনুগামীরা বিজেপিতে যোগ দেন। এ দিনের গোলমালে জয়নালের নামও জড়িয়েছে।

পূর্ব কৃষ্ণপুর আরামবাগ থানার অধীন হলেও পুড়শুড়া বিধানসভা এলাকায় পড়ে। পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান ঘটনার জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বলেন, “তিন দিন ধরে জয়নালের লোকেদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি-সহ কয়েকটি নির্দিষ্ট অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও পুলিশ পদক্ষেপ করেনি। ওদের গাফিলতিতেই বড় ঘটনা ঘটে গেল। আমাদের কয়েক জন ঘরছাড়া হলেন।” মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বইপত্র লুঠের নিন্দা করে যাবতীয় বইপত্রের ব্যবস্থা করার আশ্বাসও দিয়েছেন বিধায়ক।

বিজেপির আরামবাগ জেলা সভাপতি অসিত কুণ্ডুর অভিযোগ, “ওই গ্রামে আমাদের সংগঠন আরও মজবুত হচ্ছে। তার জেরেই তৃণমূল বারবার হামলা করছে। পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? আমরা তো ক’দিন আগেই অভিযোগ জানিয়েছি।” জয়নালের সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই বলেও তাঁর দাবি। দু’টি রাজনৈতিক দলেরই তোলা গাফিলতির অভিযোগ উড়িয়ে আইসি-র দাবি করেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তখনই পদক্ষেপ করা হয়েছে। ধরপাকড়ের চেষ্টাও হয়েছে।

আর এ দিনের গোটা ঘটনায় যাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সেই জয়নাল কী বলছেন?

কোন দলে তাঁর অবস্থান, এ দিনও তা স্পষ্ট করেননি জয়নাল। তাঁর দাবি, “এখানে রাজনৈতিক কারণ গৌণ। আমার মজবুত সংগঠন ভেঙে গ্রামে অরাজকতা কায়েম করতে তৃণমূল হামলা করছে আমার লোকদের উপরে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন