কোথাও ধর্মীয় হানাহানির বদলে সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা। কোথাও শিল্পের অবক্ষয়।
কোথাও পরিবেশ দূষণ, কোথাও আবার সাহিত্য-চলচ্চিত্রের পটভূমি।
থিম-পুজোর জোয়ারে ভাসছে আন্দুল-ডোমজুড়ও। রাস্তায় আলোর বন্যা। ষষ্ঠী থেকেই মণ্ডপে জনজোয়ার। থিমের ভাবনায় দর্শনার্থীদের তাক লাগিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টার কসুর করেননি উদ্যোক্তারা।
মহিয়াড়ি ফুলবাগান স্পোর্টিং ক্লাবের এ বারের থিম ‘সব ধর্মই এক’। তা বোঝাতে মণ্ডপে ঢোকার রাস্তার এক পাশে মন্দির, মসজিদ, গির্জা, বুদ্ধের মূর্তি, এমনকী পিরামিডের মডেলও করা হয়েছে। দশভুজার বদলে মা দুর্গা এখানে দ্বিভুজা। মহিষাসুরে বদলে রাখা হয়েছে রাবণের মাথা।
রাজ্যে শিল্পের একেই বেহাল দশা, তার উপরে পাটশিল্পের অবস্থা সম্ভবত বেশি সঙ্কটপূর্ণ। তাই এই শিল্পের উন্নতির লক্ষ্যে ডোমজুড়ের মর্নিংস্টার ক্লাব পাট দিয়ে রথের আদলে মণ্ডপ বানিয়েছে। সেই রথ টানছে ২০টি ঘোড়া। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বড় সমস্যা পরিবেশ দূষণ। সসেই সমস্যাকেই থিম করে পুজোর আয়োজন করেছে মাকড়দহ শক্তি সঙ্ঘ এবং আন্দুল আমরা ক’জন স্পোর্টিং ক্লাব।
শক্তি সঙ্ঘ তাদের মণ্ডপ সাজিয়েছে কয়েকশো প্রজাতির পাখি দিয়ে। দূষণের জন্য পরিবেশে যে পাখি কমছে, সেটাই তুলে ধরা হয়েছে এখানে। অন্য দিকে, আমরা ক’জন মণ্ডপের বাইরে কল-কারখানা, শুকনো গাছপালা, পুকুরে গরু-ছাগলের স্নান দৃশ্য সবই তুলে ধরেছে। ভিতরে রয়েছে নদী, শস্যশ্যামল ভূমি।
আন্দুলের আর একটি বড় পুজো তরুণ সঙ্ঘের। এ বার তাদের থিম ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’। সিনেমায় দেখানো আমেরিকার মাউন্ট রুশমোর পর্বতের গুহায় রাখা গুপ্তধন উদ্ধারের পটভূমির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এখানে মণ্ডপ বানানো হয়েছে। রায়পাড়া সবুজ সঙ্ঘ থিম করেছে সত্যজিত্ রায়ের গল্প ‘স্বপ্নদ্বীপ’-এর অনুকরণে। আন্দুল সর্বজনীন এ বার ৬৩ বছরে পড়ল। মহিয়াড়ি আমরা সবাই ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছে তাদের থিমে। মণ্ডপ তৈরি করেছে রাজস্থানের রাজপ্রাসাদের আদলে। আন্দুলের নবোদয় গোষ্ঠীর মণ্ডপ হয়েছে মুর্শিদাবাদের সুতির জমিদারবাড়ির ঠাকুর-দালানের আদলে। এ ছাড়া, দুইল্যা অ্যাথলেটিকস, নেতাজি রিক্রিয়েশন, পাঁচপাড়া সর্বজনীনের থিমও নজরকাড়া।
বারোয়ারি পুজো ছাড়াও এই এলাকার পারিবারিক পুজোও ঐতিহ্যবাহী। আন্দুল রাজবাড়ির পুজোও রীতিমতো জাঁকজমকপূর্ণ। দর্শনর্থীদের ভিড় তাই যেমন বায়োরি পুজোয়, তেমনই বনেদি বাড়ির পুজোগুলিতেও।