দ্রুত মিলছে শংসাপত্র, নির্দলের পঞ্চায়েতের কাজে খুশি গ্রামবাসী

মিনিট কয়েকের মধ্যে মিলে যাচ্ছে যে কোনও শংসাপত্র। কাজ শেষ হলেই মজুরি পেয়ে যাচ্ছেন ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের শ্রমিকেরা। চাওয়ামাত্র মিলছে গ্রামোন্নয়নের যে কোনও প্রকল্পের তথ্য। প্রায় এক দশক ধরে আরামবাগ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সবচেয়ে পিছনে থাকা ময়লপুর-২ পঞ্চায়েত থেকেই মিলছে এমন চমকপ্রদ পরিষেবা। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই পরিষেবা দিয়ে ইতিমধ্যেই নির্দল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েত সার্বিক মূল্যায়নে উঠে এসেছে ব্লকের মধ্যে এক নম্বরে।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫২
Share:

মিনিট কয়েকের মধ্যে মিলে যাচ্ছে যে কোনও শংসাপত্র।

Advertisement

কাজ শেষ হলেই মজুরি পেয়ে যাচ্ছেন ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের শ্রমিকেরা।

চাওয়ামাত্র মিলছে গ্রামোন্নয়নের যে কোনও প্রকল্পের তথ্য।

Advertisement

প্রায় এক দশক ধরে আরামবাগ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সবচেয়ে পিছনে থাকা ময়লপুর-২ পঞ্চায়েত থেকেই মিলছে এমন চমকপ্রদ পরিষেবা। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই পরিষেবা দিয়ে ইতিমধ্যেই নির্দল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েত সার্বিক মূল্যায়নে উঠে এসেছে ব্লকের মধ্যে এক নম্বরে। জেলাতেও তার স্থান প্রথম সারিতে। এমনই দাবি প্রশাসনের কর্তাদের।

ওই পঞ্চায়েত এলাকায় ১২টি সংসদের মধ্যে ৩৫৪৩টি পরিবারের বাস। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পর্যন্ত মহকুমার রাজনৈতিক ভাবে অশান্ত পঞ্চায়েত এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল মলয়পুর-২। পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূলের একাংশই নির্দল হিসেবে ভোটে লড়েন। ১২টি আসনের মধ্যে ওই পঞ্চায়েতের ৯টি আসন জিতে বোর্ড গড়ে নির্দল। কিন্তু বাম জমানা থেকেই পরিষেবায় নেতিয়ে পড়া পঞ্চায়েতটির এক বছরের মধ্যে এমন চমকপ্রদ পরিবর্তন কী ভাবে সম্ভব হল?

প্রধান আনোয়ারা বেগম এ জন্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন পঞ্চায়েত সচিব প্রশান্ত পান এবং নির্বাহী সহায়ক অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একই সঙ্গে তিনি জানান, পঞ্চায়েতের উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ যেমন হয়নি, তেমনই কেউ হস্তক্ষেপের চেষ্টা করলেও তা বরদাস্ত করা হয়নি। প্রশান্তবাবু এবং অরুণবাবুও স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের নানা দাবি, আপত্তি মানতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হয়। এ ক্ষেত্রে তা না হওয়ায় তাঁরা স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারছেন। ওই দুই আধিকারিকের বক্তব্য যে যথাযথ তা মেনে নিয়েছেন ব্লকের আরও কয়েকটি পঞ্চায়েতের আধিকারিকেরাও। তাঁদেরও অভিমত, কোনও রাজনৈতিক দলের বোর্ড হলে নেতানেত্রীরা অনেক সময়েই অকারণে কাজে নাক গলান। গ্রামের স্থানীয় নেতারাও নানা অন্যায্য দাবি তুলে কাজ বিঘ্নিত করেন।

আরামবাগের বিডিও প্রণব সাঙ্গুই বলেন, “এলাকার জন প্রতিনিধি, স্থানীয় মানুষ, পঞ্চায়েত আধিকারিক এবং কর্মী-সদস্যদের মধ্যে ভাল বোঝাপড়ার জন্য মলয়পুর-২ পঞ্চায়েতটি আক্ষরিক অর্থেই আদর্শ হয়ে উঠেছে। ওরা কাজ ফেলে রাখছেন না। ব্লকের মধ্যে ওই পঞ্চায়েতই সার্বিক মূল্যায়নে এক নম্বরে।” একই সুরে হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সুমন ঘোষও বলেন, “মিলিত ভাবে কাজের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিকে যথাযথ কাজে লাগিয়ে উৎকৃষ্ট পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতটি পিছিয়ে থাকা অন্য পঞ্চায়েতগুলির কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে।”

প্রশান্তবাবু এবং অরুণবাবু বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করছেন। রাত জেগে সেই সব তথ্য কম্পিউটারে নথিবদ্ধ করছেন। পাশাপাশি সংসদ ধরে উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠক করছেন। সেইমতো প্রকল্প রূপায়ণের কাজ হচ্ছে। বর্তমান বোর্ড ক্ষমতায় আসার আগে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে গড়ে বছরে ৩০-৪০ লক্ষ টাকা খরচ হত না। সারা বছরে ৩০ দিনও কাজ পেতেন না শ্রমিকেরা। এখন ওই প্রকল্পে গড়ে প্রায় ৯০ দিন কাজ পান গ্রামবাসী। এই আর্থিক বছর শেষ হতে এখনও ছ’মাস বাকি। ইতিমধ্যেই গড়ে ৪০ দিনেরও বেশি কাজ পেয়েছেন মানুষ। এ তথ্য মিলছে পঞ্চায়েত থেকেই। এ ছাড়া, রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প দ্রুত গতিতে রূপায়ণ এবং সেই রিপোর্ট যথাসময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা, উপভোক্তাদের হাতে দ্রুত ভাতার টাকা বিলি, ত্রাণ বরাদ্দের মতো কাজগুলিও চলছে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে।

অরুণবাবু বলেন, “প্রশান্তবাবু এবং আমি ২০১১ সালে এই পঞ্চায়েতে কাজে যোগ দিই। দেখি কোনও কর্মী নেই। সার্বিক উন্নয়ন প্রায় স্তব্ধ। নতুন বোর্ড হওয়ার পরে সকলের সহযোগিতাতেই কাজে গতি আনা সম্ভব হয়েছে।” একই বক্তব্য প্রশান্তবাবুরও।

পঞ্চায়েতের পরিষেবায় খুশি গ্রামবাসীরাও। পূর্ব কেশবপুরের মোরশেদ আলি বলেন, “আগে যে কোনও শংসাপত্র পেতে হয়রান হতাম। দু’তিন দিন ঘুরতে হত। এখন চাইলেই পেয়ে যাচ্ছি।” বনমালীপুরের নন্দ সরকারের কথায়, “১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে এখন আর দুর্নীতি হয় না। ইন্দিরা আবাসের টাকাও আবেদন করলেই মেলে।” চকানল গ্রামের বৃন্দাবন মালিক বলেন, “পঞ্চায়েতের স্বচ্ছতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।”

ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বপন নন্দীও মেনে নিয়েছেন ওই পঞ্চায়েতে গ্রামোন্নয়নের কাজে গতি এসেছে। তিনি বলেন, “নির্দলদের বোর্ড হলেও ওরা তো আসলে আমাদেরই লোক। ওখানে সকলে একযোগে কাজ করছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন