দখল হচ্ছে ঘুঙির খাল, বর্ষায় ভাসছে লোকালয়

কোথাও খাল ঘেঁষে উঠেছে পাঁচিল। কোথাও খালের মধ্যে মাথা তুলেছে সাঁকো। বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে জল। কোথাও বা খাল ভরেছে আগাছায়। চন্দননগর এবং শ্রীরামপুর মহকুমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘুঙির খাল দখল হয়ে যাচ্ছে এবং বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সংলগ্ন সরকারি জমি এমন অভিযোগ তুলে ওই খালের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার দাবিতে প্রশাসনের দরজায় ঘুরতে ঘুরতে জুতোর শুকতলা খুইয়ে ফেলছেন এক দল চাষি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বৈদ্যবাটি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৫
Share:

বেআইনি ভাবে খালের উপরে তৈরি সেতু।-নিজস্ব চিত্র।

কোথাও খাল ঘেঁষে উঠেছে পাঁচিল। কোথাও খালের মধ্যে মাথা তুলেছে সাঁকো। বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে জল। কোথাও বা খাল ভরেছে আগাছায়।

Advertisement

চন্দননগর এবং শ্রীরামপুর মহকুমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘুঙির খাল দখল হয়ে যাচ্ছে এবং বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সংলগ্ন সরকারি জমি এমন অভিযোগ তুলে ওই খালের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার দাবিতে প্রশাসনের দরজায় ঘুরতে ঘুরতে জুতোর শুকতলা খুইয়ে ফেলছেন এক দল চাষি। তাঁদের চাপে সেচ দফতর দু’একবার থানা-পুলিশ করেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। খালের দেখভাল না হওয়ায় প্রতি বর্ষায় জলমগ্ন হয় দু’পাশের বিস্তীর্ণ খেতখামার এবং ভদ্রেশ্বর, চাঁপদানি, বৈদ্যবাটি পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড ও আশপাশের একাধিক পঞ্চায়েত এলাকা।

খালটিকে বাঁচানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে বৈদ্যবাটি চক ও দীর্ঘাঙ্গ মৌজা কৃষি উন্নয়ন সমিতি। সমিতির কর্তা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “প্রচুর পরিমাণ জমি বেদখল হয়ে গিয়েছে। সরকার অবিলম্বে তা পুনরুদ্ধার করুক। তা হলে চাষ বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে।” জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ মানস মজুমদার বলেন, “জেলার সব খালই সংস্কারের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। দফতরের জমি বা খালের অংশ বিক্রি হয়ে থাকলে তা বেআইনি। তবে, এ ব্যাপারে কেউ আমাকে এখনও বলেননি। লিখিত ভাবে ক্ষতিগ্রস্তেরা জানালে নিশ্চয়ই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।” জেলা সেচ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “কিছু দিন আগেই ওই খালে কচুরিপানা সংস্কার হয়েছে। বর্ষার পরে ফের এক দফা সংস্কার হওয়ার কথা।” তবে, বেদখল হওয়া জমি নিয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা অবশ্য স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি দফতরের কোনও কর্তা।

Advertisement

চন্দননগর থেকে মানকণ্ডু, ভদ্রেশ্বর, বৈদ্যবাটির উপর দিয়ে পিয়ারাপুর, বেলু মিল্কি, ডানকুনি হয়ে বালিখালে গিয়ে মিশেছে ঘুঙির খাল। খালের দু’ধারে বিঘার পর বিঘা জমিতে চাষাবাদ হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই খালের অস্তিত্ব সঙ্কটে।

সেচ দফতর সূত্রের খবর, মাঝে মধ্যে কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে বটে, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়নি। ফলে, যা হওয়ার ছিল, তাই হয়েছে। খাল কোথাও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। কোথাও কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। কোথাও খাটালের গোবর জমে খালের গতি রুদ্ধ হয়েছে। তা ছাড়া। খালের ধারের জমিও বেদখল হয়ে গিয়েছে অনেক জায়গায়। শ্রীরামপুর থানা এলাকায় ওই খালের দু’পাশে কতটা জমি তাদের হাতে রয়েছে, তা নিয়ে সেচ দফতরের কর্তারাই সন্দিহান। খালের ধারে অনেক কারখানা হয়েছে। তারা বেআইনি ভাবে খালের ধারে পাঁচিল তুলে দিয়েছে এবং শেড বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ওই দফতরের আধিকারিকরা মেনে জানিয়েছেন। সেচ দফতরের এক কর্তার খেদ, “কিছু জায়গায় খালের দু’পাশের জমি এমন ভাবে বেদখল হয়ে গিয়েছে এবং পাঁচিল তোলা হয়েছে যে, খালের পলি তুললেও তা ফেলার জায়গাই নেই।”

কিছু দিন আগে বৈদ্যবাটিতে একটি কারখানার মালিক খালের উপরে কাঠের সেতু তৈরি করে ফেলেছিলেন। চাষিরা রুখে দাঁড়ানোয় সেচ দফতর পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। শেষে সেতুটি কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ভেঙে দেন। কিন্তু সব জায়গায় তা হয় না। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সামান্য বৃষ্টিতেই খাল উপছে খেত ভাসিয়ে দেয়। জমি-মাফিয়ারা খাল পাড়ে তাঁদের জমি বিক্রির জন্য নানা ভাবে চাপ দেয়। তা না করায় খালপাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। চাষিদের আশঙ্কা, ওই জমি প্লট করে বিক্রি বা প্রোমোটিং করতে চায় জমি-মাফিয়ারা। গৌর পাল এবং সুনীলকুমার ঘোষ নামে দুই চাষির কথায়, “অল্প বৃষ্টিতেই ঘুঙির খাল ছাপিয়ে খেতে জল দাঁড়িয়ে বিঘের পর বিঘে ফসল নষ্ট হয়েছে। নতু‌ন করে ধান বুনতে হচ্ছে।”

এই দুর্ভোগ থেকেই আপাতত মুক্তি চান গ্রামবাসীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন