গুড়িয়া হত্যা-মামলা

ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় খুন করা হয় গুড়িয়াকে

ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় মাথায় বাঁশের বাড়ি মেরে গুড়িয়াকে খুন করেছিল শ্যামল ঘোষ। আর এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিল হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার। মঙ্গলবার চুঁচুড়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট কোর্ট) অরূপ বসুর এজলাসে গুড়িয়া হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে এ কথা জানালেন গুড়াপের দুলাল স্মৃতি সঙ্ঘ হোমের সেই সময়ের চার আবাসিক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০১:১৫
Share:

ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় মাথায় বাঁশের বাড়ি মেরে গুড়িয়াকে খুন করেছিল শ্যামল ঘোষ। আর এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিল হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার। মঙ্গলবার চুঁচুড়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট কোর্ট) অরূপ বসুর এজলাসে গুড়িয়া হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে এ কথা জানালেন গুড়াপের দুলাল স্মৃতি সঙ্ঘ হোমের সেই সময়ের চার আবাসিক।

Advertisement

এ দিন চার আবাসিকের একজন বিচারককে বলেন, “আমি দু’বছর ওই হোমে ছিলাম। শ্যামল প্রায় রোজই সেখানে আসত। একদিন আমাকে গুদাম ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণও করে। গুড়িয়াকেও ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল শ্যামল। কিন্তু গুড়িয়া বাধা দেওয়ায় শ্যামল ও বড়দা (উদয়চাঁদ) তার মাথায় বাঁশের বাড়ি মেরে তাকে মেরে ফেলে। আমার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা ও কানের সোনার দুলও নিয়ে নিয়েছিল বড়দা। আর ফেরত দেয়নি।”

সাক্ষ্য দেওয়ার সময় আর এক আবাসিক পিয়ালি মুখোপাধ্যায়ও প্রায় একই কথা জানান। তিনি বলেন, “শ্যামল ও বড়দা মিলে হোমের প্রায় সব আবাসিকের উপরেই শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করত। গুড়িয়াকে দেখতে সুন্দর ছিল। ওকে প্রায়ই মারধর করত বড়দা ও শ্যামল। ঘরে তলাবন্ধ করেও রাখত। একদিন গুড়িয়াকে ধর্ষণ করতে যায় শ্যামল। গুড়িয়া প্রতিবাদ করায় বাঁশের লাঠি দিয়ে বার বার তার মাথায় মারে। তারপর দরজা বন্ধ করে চলে যায়। আমরা ঘরে গিয়ে দেখি গুড়িয়া মাটিতে পড়ে রয়েছে। মাথা ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। ও তখন মরে গিয়েছিল।” পিয়ালি আরও জানান, উদয়চাঁদ ও শ্যামল তাঁকে, বেবিকে ও কিরণকুমারীকে বলেছিল গুড়িয়ার দেহটা স্ট্রেচারে করে নীচে নামাতে। কিন্তু তাঁরা রাজি হননি। তখন তাঁদেরও গুড়িয়ার মতো অবস্থা করবে বলে ভয় দেখায়। গুড়িয়ার দেহ থেকে পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল। তাই গুড়িয়ার দেহ হোমের মধ্যে পুঁতে দিতে তাঁদের বাধ্য করেছিল বড়দা ও শ্যামল। বিচারকের কাছে এ দিন উদয়চাঁদ ও শ্যামলের কঠোর সাজার আর্জি জানান পিয়ালি।

Advertisement

চার আবাসিকের অন্যতম কলি মণ্ডলও এ দিন সাক্ষ্যে জানান, শ্যামল ও উদয়চাঁদ তাঁদের উপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করত। একদিন গুড়িয়াকে ধর্ষণ করতে যায় শ্যামল। গুড়িয়া প্রতিবাদ করলে বাঁশের লাঠি দিয়ে তার মাথায় মারে। তারপর দরজা বন্ধ করে চলে যায়। ওরা দু’জন তাঁকেও মারধর করত। খেতে চাইলে গায়ে গরম ফ্যান ঢেলে দিত।

কিরণকুমারী বলেন, “হোমের সব আবাসিকদের সঙ্গেই খুব খারাপ ব্যবহার করত উদয় ও শ্যামল। আবাসিকদের খাবারে ওষুধ মিশিয়ে দিত। তাতে আবাসিকরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পর অত্যাচার চালাত। গুড়িয়া এক বৃদ্ধার সঙ্গে থাকত। ধর্ষণে বাধা দেওয়াতেই শ্যামল গুড়িয়ার মাথায় বাঁশের বাড়ি মেরে তাকে মেরে ফেলে।”

মামলার সরকারি আইনজীবী বিদ্যুৎ রায়চৌধুরী জানান, কিরণকুমারী বিচারকে জানিয়েছেন যে এ দিন আদালতে উপস্থিত সব অভিযুক্তকেই তিনি চেনেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন