গাছে প্রতিবাদী। —নিজস্ব চিত্র।
নেতাজিই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। নেতাজির জন্মদিন ২৩ জানুয়ারি দিনটিকে ‘জাতীয় স্বীকৃতি’ দেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন সময় নানা অভিনব প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন তিনি। ফের একই দাবিতে তাঁর আর এক অভিনব প্রতিবাদের সাক্ষী থাকলেন বাঁশবেড়িয়ার হাজরা পাড়ার বাসিন্দারা। বছর তিরিশের বিজেপি সমর্থক বিষ্ণু চৌধুরীকে শুক্রবার সকালে বাড়ির কাছেই প্রায় ৪৫ ফুট উঁচু একটা নারকেল গাছে একগোছা বিজেপি পতাকা নিয়ে বসে থাকতে দেখেন বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা। সঙ্গে ছিল দেশের জাতীয় পতাকা ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কয়েকটি ছবি।
পরিবারের লোকের বক্তব্য, আগের রাতেই কাউকে কিছু না জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বিষ্ণু। সকালে গাছে উপরে তাঁকে দেখে সকলে নেমে আসতে বললে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন তিনি। তাঁর এই হুমকিতে আগের অভিজ্ঞতা থেকে পিছিয়ে আসেন লোকজন। ২০১১ সালেও একই দাবিতে প্রায় ৭৫ ফুট লম্বা এক মোবাইল টাওয়ারের উপর চড়ে বসেছিলেন তিনি। সে বার অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাঁকে নামিয়ে আনা হয়।
প্রতিবেশীদের কাছেই জানা গেল, নেতাজির ‘যোগ্য সম্মান’ আাদায়ের দাবিতে বার বারই এ ধরনের কাণ্ড ঘটিয়েছেন বিষ্ণু। সেই কারণে কখনও সরকারি অফিসে, কখনও রাইটার্সে কখনও বা বিধানসভায় ঢুকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাইকেল নিয়ে ভারত পরিক্রমায় বেরিয়েছিলেন। ৮টি রাজ্য ঘুরে দিল্লি পৌঁছে সেখানে বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করে নিজের দাবিও জানান। ক্ষমতায় এলে বিষয়টি ভেবে দেখার আশ্বাসও পেয়েছিলেন তাঁর কাছে। সেই আশ্বাস এখনও পর্যন্ত কার্যকর না হওয়াতেই ফের তাঁর এমন প্রতিবাদ বলে জানান বিষ্ণু। শুধু তাই নয়, শনিবার পর্যন্ত তাঁর এই প্রতিবাদ চলবে এবং এই ক’দিন তিনি না খেয়েই কাটাবেন বলেও জানান।
স্বামীর এ হেন প্রতিবাদকে কী চোখে দেখছেন স্ত্রী। তাঁর কথায়, “মানুষটা দিন নেই রাত নেই শুধু দেশের চিন্তায় ডুবে আছে। সংসার যে কীভাবে চলবে সেদিকে হুঁশ নেই।”
তবে পরিবারের লোকজন যাই বলুক, নেতাজিকে নিয়ে তাঁর এই ‘লড়াইয়ে’ বিষ্ণু পাশে পেয়ে গিয়েছেন পাড়ারই কিছু অত্যুৎসাহী যুবককে। কী জানি, কখন লোকটা গাছ থেকে পড়ে যায়, এই আশঙ্কায় দিনরাত বিষ্ণুর নজরদারিতে রয়েছেন তাঁরা।