রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের চাপানউতোরে রাজ্যের কয়েকটি পুরসভার সঙ্গেই ডানকুনি পুরসভায় এ বার নির্বাচন হয়নি। এ দিকে পুরসভার কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে গত জুলাই মাসে। সেই সঙ্গে পুরসভার ১৯ জন কাউন্সিলারের কার্যকালও শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে নিয়মমাফিক কাউন্সিলারা আর সেখানে কাজ করতে পারছেন না। আর এই যাতাকলে পড়েই পুর পরিষেবার হাল শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে। থমকে গিয়েছে উন্নয়মমূলক কাজ। পুরসভায় নানা কাজে আসা মানুষজনকে নিত্য হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
সরকারিভাবে এ হেন পরিস্থিতিতে নিয়মমতো অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করা হয়েছে পুরসভায়। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ সে ভাবে হচ্ছে না বলেই পুর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ।
২০০৯ সাল থেকে ডানকুনি পুরসভা হিসেবে উন্নীত হয়েছে। সেখানকার মোট তিনটি পঞ্চায়েত জুড়ে ডানকুনি পুরসভার এলাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রথমবার পুর নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস।
পুর এলাকার অনেকটাই গ্রামাঞ্চল। ফলে রাস্তাঘাট-সহ অন্য উন্নয়ন সেখানে জরুরি হয়ে পড়ে। সেই কারণে নতুন পুরবোর্ড রাস্তাঘাট, নিকাশি, পানীয় জল-সহ পুর এলাকার অন্যান্য পরিষেবার কাজে হাত দেয়।
তবে পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, চাহিদা থাকলেও প্রয়োজন মাফিক অর্থের জোগান ছিল না। তার ফলে পুর এলাকার সার্বিক উন্নয়নের কাজ সে ভাবে গতি পায়নি পুর এলাকায়। যদিও পুর কর্তৃপক্ষ বিচ্ছিন্নভাবে হলেও সেখানে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু গত জুলাই মাস থেকে কার্যত পুর কর্তৃপক্ষর অস্তিত্বই নেই। সেই কারণে কাজের গতিও যেখানে যেমন অবস্থায় ছিল, তেমনই থেকে গিয়েছে।
কাজের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত নানা অসুবিধার মুখে পড়তে হয়েছিল পুর কর্তৃপক্ষকে। মোট ১৯টা পুর ওয়ার্ডের নিকাশি ব্যবস্থা বলতে তেমন কিছু ছিল না। তার উপর ৩, ১৬ এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অল্প বৃষ্টিতেই ওই এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যেত। পুর এলাকায় জল বাইরে চলে যাওয়ার মতো কোনও নিকাশি খাল না থাকায় সার্বিক পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। এ সবের মাঝেই গত জুলাই মাসে মেয়াদ শেষ হয়ে যায় পুর বোর্ডের।
এখন ফের কবে নির্বাচন হবে? কবেই বা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এসে পুরসভার দায়িত্ব নেবেন, তার কোনও নিশ্চয়তা আপাতত নেই। ফলে এলাকার উন্নয়নের কাজ অনেকটাই থমকে গিয়েছে।
পুর এলাকায় বাস প্রায় ১ লক্ষ পাঁচ হাজার মানুষের। তাঁদের পানীয় জল জোগান দেওয়ার সার্বিক পরিকাঠামো পুরসভার ছিল না। বিচ্ছিন্নভাবে কেএমডব্লুএসের জলপ্রকল্প থেকে কিছু এলাকায় জল সরবরাহ করা হত। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মোট আটটি গভীর নলকূপ তৈরির কাজ চলছিল ডানকুনি পুরএলাকায়। এতদিন পুরসভার কাউন্সিলরাই ওই সব কাজ দেখভাল করতেন। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় আইনত তাঁদের হাতে আর কোনও ক্ষমতাই নেই। ফলে ওই সমস্ত কাজে সরকারি দেখভালের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা দেখা দিয়েছে।
শুধু উন্নয়ন নয়, পুরসভা থেকে জন্ম-মৃত্যু থেকে আয়ের শংসাপত্র পেতে গিয়েও বেগ পেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। যদিও পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, সে সব কাজের জন্যই পুরসভায় একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি সেই সব কাজ নিয়মিত করছেন। কোনও অসুবিধা নেই।
কিন্তু এলাকাবাসীর পাল্টা বক্তব্য, পুরসভার ১৯ জন কাউন্সিলারের এলাকায় কাজ করা, আর একজন অফিসারের পুরসভায় বসে কাজ করা এক নয়। আর সে জন্যই অসুবিধা হচ্ছে।”
পুরসভার কাউন্সিলারদের অন্যতম প্রকাশ রাহা বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসাবে মহকুমাশাসক রয়েছেন। কিন্তু কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে এলাকার মানুষের কিছু অসুবিধা তো হচ্ছেই। তা অস্বীকার করা যাবে কী করে? ১৯ জনের জায়গায় এখন মাত্র একজন। সমানভাবে কাজ করা কখনই সম্ভব নয়। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্যা থাকবে।”