পুরাণ থেকে আধুনিক থিম, মেতেছে খলিসানি

খলিসানি কালীতলা না দ্বিতীয় বারাসত! মুম্বই রোডের ধারে উলুবেড়িয়ার এই গ্রামটিতে কালীপুজোর সময়ে এলে এই কথাই মনে হবে। বিঘত খানেক করে জায়গা ছেড়ে এখানে আয়োজিত হয়েছে একের পর এক কালীপুজো। মণ্ডপ সজ্জার বৈশিষ্ট, প্রতিমার বৈচিত্র ও চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা যেন হার মানায় এই এলাকার শারদোত্‌সবকেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২৮
Share:

খলিসানি কালীতলা না দ্বিতীয় বারাসত! মুম্বই রোডের ধারে উলুবেড়িয়ার এই গ্রামটিতে কালীপুজোর সময়ে এলে এই কথাই মনে হবে। বিঘত খানেক করে জায়গা ছেড়ে এখানে আয়োজিত হয়েছে একের পর এক কালীপুজো। মণ্ডপ সজ্জার বৈশিষ্ট, প্রতিমার বৈচিত্র ও চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা যেন হার মানায় এই এলাকার শারদোত্‌সবকেও।

Advertisement

খলিসানির নেতাজি সংগ্রামী সংঘের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে মুলি বাঁশ দিয়ে। মণ্ডপে রয়েছে দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদল। প্রতিমা কুমারটুলির। আলোকসজ্জা আকর্ষণীয়। পাশেই আর জি পার্টির মণ্ডপ তৈরি হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের আদলে। প্রতিমা দেখার মতো। সুড়িখালি কোলেপাড়া সর্বজনীনের প্রতিমা তৈরি হয়েছে মাছের আঁশ দিয়ে। মত্‌স্যকন্যার রূপ দেওয়া হয়েছে প্রতিমার। আবার আস্ত গণেশ মূর্তির আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে সুড়িখালি শান্তি সংঘ। এখানে প্রতিমা দশভূজা কালী। দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ করেছে খলিসানি ছাত্র সংঘ। বড়তলা শনিকালী মন্দিরের মণ্ডপে রয়েছে আকর্ষণীয় মডেল। তাতে দেখানো হয়েছে শ্রীকৃষ্ণ কড়ে আঙুল দিয়ে গোবর্ধন পর্বত চাগিয়ে ধরেছেন। পুরোটাই করা হচ্ছে বৈদ্যুতিন যন্ত্রের সাহায্যে।

খলিসানিতে কালীপুজো গড়ে একটি কিংবদন্তী আছে। সেটি হল, বহু বছর আগে আমতার বাসিন্দা রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য স্বপ্নাদেশ পেয়ে খলিসানিতে দক্ষিণাকালীর প্রতিষ্ঠা করেন। গড়ে তোলেন মন্দির। এখনও সেই মন্দিরে নিত্যপুজো হয়ে থাকে। খলিসানির মন্দিরকে কেন্দ্র করেই প্রথম দিকে শুধু এই গ্রামেই সর্বজনীন কালীপুজো অনুষ্ঠিত হত। এই পুজোর কথা বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ায় বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। তাঁদের আরও আকর্ষণ করতে পাশাপাশি সুড়িখালি, রামনগর, রথতলা, দশভাগা, বাসুদেবপুর প্রভৃতি গ্রামে কালীপুজোর আয়োজন করা হতে থাকে। বর্তমানে খলিসানি এবং তার সংলগ্ন এইসব গ্রামগুলিতে শতাধিক কালীপুজো অনুষ্ঠিত হয়। ভিড় করেন লক্ষাধিক দর্শনার্থী। উত্‌সবের আলোর ভেসে যায় গ্রামগুলি।

Advertisement

পৃথক মণ্ডপ, পৃথক আলোকসজ্জা, পৃথক প্রতিমা। এত কিছু বৈচিত্রের মধ্যেও কিন্তু ঐক্যের সুরও দেখা যায় খলিসানিতে। কালীপুজোর রাতে প্রতিটি পুজো মণ্ডপ থেকে নির্বাচিত কুমারী মেয়েরা এসে জড়ো হয় আর জি পার্টির পুজো মণ্ডপে। তাদের পরনে থাকে লাল পাড় দেওয়া সাদা শাড়ি। সেখান থেকে তারা মিছিল করে যায় দক্ষিণাকালীর মন্দিরে। দক্ষিণাকালীকে পুজো দিয়ে তারা ফিরে আসে নিজের নিজের গ্রামে। তারা ফিরে আসার পরে তাদের নিজেদের গ্রামের প্রতিমার পুজো আরম্ভ হয়। এই প্রথাই বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে বলে জানান নেতাজি সংগ্রামী সংঘের পক্ষে তাপস কোদালি এবং আরজি পার্টি পুজো কমিটির পক্ষ্যে সমর মান্না। তাপসবাবু এবং সমরবাবু বলেন, “মিছিলকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দলকে সামিল করা হয়। এ বছর থাকছে আদিবাসী ও ছৌ নাচ।”

হাওড়ার পারিবারিক কালীপুজোগুলির বৈচিত্রও কম নয়। বাগনানের হারোপ গ্রামের ঘোষাল বাড়ির কালীপুজো এ বারে দেড়শো বছরে পড়ল। বছর যত গড়িয়েছে পুজোর আড়ম্বর তত বেড়েছে। গ্রামবাসীদের সমাগমে পারিবারিক এই পুজো সর্বজনীনের রূপ নেয়। এই পরিবারের পক্ষে দিলীপ ব্যবর্তা, সুভাষ ঘোষালেরা বললেন, “পুজোর জাঁকজমক এবং জৌলুস বাড়লেও ঐতিহ্যকে আমরা ভুলিনি। এখনও একাদশীর দিনেই মাটি তুলে রাখা হয় প্রতিমা তৈরির জন্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন