প্রস্তাবিত সিল্ক পার্ক গড়বে শিল্পোন্নয়ন নিগম

ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর নয়। শ্রীরামপুরে রাজ্য সরকার প্রস্তাবিত ‘সিল্ক অ্যান্ড হ্যান্ডলুম পার্ক’ গড়তে চলেছে শিল্পোন্নয়ন নিগম। শ্রীরামপুর শিল্পাঞ্চলে গত দু’দশকে চটকল-সহ বহু কারখানা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু নতুন শিল্প সে ভাবে আসেনি। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীরামপুরে সিল্ক হাব তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৯
Share:

কারখানায় কাপড়ে নকশা তুলতে ব্যস্ত শিল্পীরা।—নিজস্ব চিত্র।

ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর নয়। শ্রীরামপুরে রাজ্য সরকার প্রস্তাবিত ‘সিল্ক অ্যান্ড হ্যান্ডলুম পার্ক’ গড়তে চলেছে শিল্পোন্নয়ন নিগম।

Advertisement

শ্রীরামপুর শিল্পাঞ্চলে গত দু’দশকে চটকল-সহ বহু কারখানা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু নতুন শিল্প সে ভাবে আসেনি। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীরামপুরে সিল্ক হাব তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। কথা ছিল, সেই হাব গড়বে ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর। এ জন্য টাকাও বরাদ্দ হয়। জমিও বাছা হয়। কিন্তু এত দিনেও সেই কাজের কোনও অগ্রগতি তাঁদের চোখে না পড়ায় সিল্ক ছাপার কাজে যুক্ত মানুষজন প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন। সম্প্রতি এক প্রশাসনিক বৈঠকে ওই প্রকল্প শিল্প-বাণিজ্য দফতরের অধীনস্থ শিল্পোন্নয়ন নিগম করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সিল্ক পার্কের সঙ্গে সেখানে গড়া হবে হ্যান্ডলুম পার্কও।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের অধিকাংশ জমিই তাদের হাতে রয়েছে। বাকি জমিটুকু নিয়েও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ওই প্রকল্প এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) আবিদ হোসেন বলেন, “ওখানে আধুনিক মানের সিল্ক ও হ্যান্ডলুম পার্ক। এই ধরনের পার্ক গড়ার ক্ষেত্রে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন দফতরের অভিজ্ঞতা আছে। পরিকাঠামোও রয়েছে। তাই ওরাই পার্কটি করবে। সমীক্ষা করে জমি শীঘ্রই ওদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’

Advertisement

শ্রীরামপুরের তারাপুকুর, রাজ্যধরপুর, তালপুকুর, বৈদ্যবাটি পুরসভার বৌবাজার, চাতরা মান্নাপাড়া বা নওগাঁ-সহ বিভিন্ন জায়গায় সিল্ক ছাপার ছোট-বড় শ’দুয়েক কারখানা রয়েছে। প্রায় ১০ হাজার লোক ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, আধুনিক প্রযুক্তি এবং চিন্তাভাবনার অভাবে এখানকার তৈরি কাপড় বাজারে তেমন দর পায় না। বেঙ্গালুরু, সুরাত বা বারণসীর মতো রাজ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার বাজারে এঁটে উঠতে পারে না। তন্তুজের মতো সংস্থাও সিল্ক ছাপার ক্ষেত্রে অন্য রাজ্যের উপরে নির্ভরশীল।

তাই রাজ্যের পালাবদলের পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বেলুড়, বোলপুর, মালদহ, বানারহাট, খড়্গপুরের কাছে খাসজঙ্গল ছাড়াও শ্রীরামপুরে সিল্ক হাব তৈরির কথা ঘোষণা করেন, তখন আশার আলো দেখেছিলেন এখানকার ছোটবড় সিল্ক ছাপার কারখানার সঙ্গে যুক্ত লোকজন। সেই সময়ে সরকারের দাবি ছিল, ওই হাবে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে কয়েক হাজার মানুষের কর্মস্থানের সুযোগ হবে। ২০১৫ সালের মধ্যে কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাহেশ মৌজায় মল্লিকপাড়া লাগোয়া এলাকায় ৫০ একরেরও বেশি খাসজমিতে ওই শিল্প-তালুক তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। সিল্ক প্রিন্টিংয়ের কারখানাগুলিকে প্রস্তাবিত শিল্পতালুকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা হবে। কথা ছিল, গত জুন মাসে প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী। মাঝ পথেই অবশ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমকে দিয়ে সিল্ক পার্ক তৈরির কথা ওঠে। ইতিমধ্যে শিল্প বাণিজ্য দফতরে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। তার পরেই শিল্পোন্নয়ন নিগমকে দিয়ে পার্ক বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রস্তাবিত ওই পার্কে ডিজিটাল প্রিন্টিং মেশিন-সহ আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো হবে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কারখানাগুলির জন্য মাঝে-মধ্যেই দূষণের অভিযোগ ওঠে। তা এড়াতে পার্কে বিশেষ পদ্ধতিতে বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। তন্তুজ, মঞ্জুষা বা খাদির মতো সংস্থা এখানে কাজ করবে। এখানকার শাড়ি, সালোয়ার, বিছানার চাদর, জানলা-দরজার পর্দা-সহ নানা জিনিস বাজারজাত করা হবে। প্রদর্শনীর জন্য অডিটোরিয়াম, গেস্ট হাউস তৈরিরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সরকারি টেক্সটাইল টেকনোলজি কলেজে।

শ্রীরামপুরের সিল্ক প্রিন্টিং কারখানার মালিকরা এই উদ্যোগ নিয়ে আশাবাদী। তবে, কী শর্তে তাঁরা ওই তালুকে জায়গা পাবেন, ছোট কারখানার মালিকেরা সেখানে সহজে যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। ওই সব কারখানার মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপ বণিক বলেন, “ওই প্রকল্প হলে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি মিটবে। তবে কী শর্তে ওখানে আমরা বসতে পারব, সে ব্যাপারে কিছুই এখনও জানি না।” সিল্ক প্রিন্টার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চিফ এক্সিকিউটিভ পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, “ওখানে মেগা হ্যান্ডলুম পার্ক হচ্ছে। তাতেই সিল্ক হাব থাকবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন