সাংগঠনিক বৈঠকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত দেওয়া বা উপ-দল তৈরি করা যাবে না বলে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব দলীয় নেতা-কর্মীদের বারবার সতর্ক করছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও নানা জায়গায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অব্যাহত। সোমবার জগৎবল্লভপুরেও তা প্রকাশ্যে এল। পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন তৃণমূলেরই ১৬ জন সদস্য।
জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট সদস্যসংখ্যা ৪১। তার মধ্যে তৃণমূলের রয়েছেন ২৬ জন। ১৫ জন সিপিএমের। সোমবার হাওড়া সদর মহকুমাশাসকের কাছে জমা পড়া অনাস্থা প্রস্তাবটিতে তৃণমূলের ১৬ জন সদস্য সই করেছেন এবং সভাপতির বিরুদ্ধে তাঁরা দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ এনেছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও ওই প্রস্তাবে যে সব তৃণমূল সদস্য সই করেছেন, তাঁরা কেউ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। হাওড়া সদর মহকুমাশাসক বাণীপ্রসাদ দাস জানান, অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়েছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে ইব্রাহিমের দাবি, পঞ্চায়েত সমিতিতে দলের সিংহভাগ সদস্য তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন। তা হলে ১৬ জন সদস্য কী ভাবে প্রস্তাবটিতে সই করলেন? ইব্রাহিম বলেন, “সিপিএমের সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়েই আমাদের দলের মুষ্টিমেয় কয়েক জন সদস্য অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেছেন।” একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ভাইকে সমিতির সভাপতির আসনে বসানোর জন্য বিধায়ক আবুল কাশেম মোল্লা চক্রান্ত করেছেন। তাঁরই মদতে অনাস্থা প্রস্তাবটি আনা হয়েছে। ইব্রাহিমের দিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন জগৎবল্লভপুর বিধানসভা কেন্দ্র তৃণমূল সভাপতি বিমান চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “যতই চক্রান্ত হোক, ইব্রাহিমকে সভাপতির পদ থেকে সরানো যাবে না।”
ইব্রাহিমের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিধায়ক আবার বলেন, “অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে কিনা বলতে পারব না। এটা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের নিজেদের ব্যাপার। তবে, ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বহুবার হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। আর আমার ভাই সভাপতি পদে কাজ চালানোর যোগ্যই নয়।” সিপিএমও অনাস্থায় তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ মানেনি। দলের জগৎবল্লভপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক বৈদ্যনাথ বসুর দাবি, “অনাস্থা প্রস্তাবটি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই।”
দল যেখানে গোষ্ঠীদন্দ্বে না জড়ানোর জন্য নেতা-কর্মীদের বারবার সতর্ক করছে, সেখানে জগৎবল্লভপুরের অনাস্থা নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি (সদর) তথা রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “সভাপতির বিরুদ্ধে যদি সত্যিই অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ে তা নিয়ে দলে আলোচনা করা হবে।” একই সঙ্গে তিনিও জানান, ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ তাঁর কাছেও এসেছে।