ফের বাঁধ ভাঙল খানাকুলে, চরম বিপদসীমায় দুই নদী

আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলেও মঙ্গলবারও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হল না আরামবাগ মহকুমায়। নদীবাঁধে ভাঙন অব্যাহত। তার উপরে দুই নদীর জল চরম বিপদসীমা টপকে যাওয়ায় পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন প্রশাসনের কর্তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০১:১৪
Share:

জলের নীচে একতলা। বাড়ি থেকে বেরোতে ভরসা ডিঙি। খানাকুলের নাগোলপাড়ায়। ছবি: মোহন দাস।

আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলেও মঙ্গলবারও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হল না আরামবাগ মহকুমায়। নদীবাঁধে ভাঙন অব্যাহত। তার উপরে দুই নদীর জল চরম বিপদসীমা টপকে যাওয়ায় পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন প্রশাসনের কর্তারা। ত্রাণ বণ্টনে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ব্লক প্রশাসনগুলির কাছে বেশ কিছু অভিযোগও জমা পড়ছে। মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসু প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে সরাসরি বিডিওদের ত্রাণ তদারকি করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিভিসি-র ছাড়া জলে এ দিন বিকেলে দামোদরের জলস্তর চরম বিপদসীমা (১৩.৫০ মিটার) ছাড়িয়ে যায়। একই অবস্থা মুণ্ডেশ্বরীরও (১৩.৪১ মিটার)। এই দুই নদীর জন্য পুড়শুড়া ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এ দিনই দুই নদীর বাঁধের ফুটো দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে লোকালয়ে। সেই ফুটো বড় হয়ে বাঁধ ভাঙার আশঙ্কাও রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। পুড়শুড়ার বিডিও অনির্বাণ রায় অবশ্য জানিয়েছেন, বাঁধগুলিতে দল গড়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে। গ্রামবাসীদের কাছেও অনুরোধ করা হয়েছে, বাঁধে ধস বা ফুটো দেখলেই ব্লক প্রশাসনে খবর দিতে। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে প্রায় ২০০ জন শ্রমিককে দিয়ে যুদ্ধকালীন তত্‌পরতায় বালির বস্তা দিয়ে বাঁধের ফুটো বা ফাটল মেরামত করানো হচ্ছে।

রবিবার খানাকুল-২ ব্লকের ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েত এলাকার ঘোড়াদহ এবং ধান্যগোড়িতে দু’টি বাঁধ ভেঙেছিল। সোমবার রাতে খানাকুল-১ ব্লকের কিশোরপুর পঞ্চায়েত এলাকায় রপনারায়ণেরও একটি বাঁধ ভাঙল। দুই ব্লকেই জল বাড়ছে। খানাকুল-২ ব্লক অফিস চত্বর জলমগ্ন হয়ে যায় মঙ্গলবার সকালেই। দুপুর নাগাদ খানাকুল-১ ব্লক অফিস চত্বরও জলমগ্ন হল। দুই ব্লকের পঞ্চায়েতগুলির অধিকাংশই একতলা সমান জল। নতিবপুরে সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় ওই পঞ্চায়েত সড়কপথে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এ দিন খানাকুল-২ ব্লকের দৌলতচক সংলগ্ন মুণ্ডেশ্বরী নদীর একটি বাঁধে ধস নেমে জল ঢুকতে দেখে ব্লক প্রশাসনের তদারকিতে তা মেরামত শুরু হয়।

Advertisement

মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসু বলেন, ‘‘কিশোরপুরের দুর্গতদের সরানো হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তিনটি দল খানাকুলের দুই ব্লকে পাঠানো হয়েছে। সর্বত্র ত্রাণ এবং পানীয় জলের প্যাকেট চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে।’’

তবে, আরামবাগ ব্লকের উপর দিয়ে যাওয়া দ্বারকেশ্বর নদীর জল কমলেও ঘাটাল থেকে আসা শিলাবতীর নদীর জলের চাপে সালেপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকা থেকে জল নামছে না। গোঘাট-২ ব্লকের জল অনেকটাই নেমেছে। গোঘাট-১ ব্লকের শ্যাওড়া, নকুন্ডা পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামগুলি এখনও জলমগ্ন। সেখানে দলকার জলায় আবার শিলাবতী নদীর জল ঢুকছে।

মহকুমা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত পর্যন্ত দুর্গতদের মধ্যে প্রায় ৩১ হাজার ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। ত্রাণের জন্য চাল পাওয়া গিয়েছে ৯৩৫ কুইন্টাল। ত্রাণ কেন্দ্রগুলি চালানোর জন্য ৭ লক্ষ টাকা মিলেছে। আরও ২০ লক্ষ টাকাও অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। মহকুমায় মোট ত্রাণ কেন্দ্র হয়েছে প্রায় ১০০টি। প্রায় ৯ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০২৭টি বাড়ি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ৯৫৫৮টি।

ব্লকগুলি থেকে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ত্রাণ যাচ্ছে নৌকায়। এ দিনই জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের নেতৃত্বে গোঘাট এবং আরামবাগের দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে মাথাপিছু দু’কেজি করে চাল এবং দু’কেজি করে আলু বিলি করা হয়। খানাকুল-১ ব্লকের কিশোরপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকার মদনবাটি, গুজরাত, চুয়াডাঙা, নিরঞ্জনবাটি প্রভৃতি গ্রামে ত্রাণসামগ্রী বিলি করল স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দেওয়া হল হাতে তৈরি রুটি, জলের বোতল, চিঁড়ে, গুড়, মুড়ি, বিস্কুটের প্যাকেট এবং কেরোসিন। একইসঙ্গে নিখরচায় চিকিত্‌সা শিবিরেরও আয়োজন করা হয়। দেওয়া হল ওষুধও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন