বুকে বাঁশ বিঁধে মৃত্যু মোটরবাইক চালকের

রাস্তার ধারে ফেলে রাখা বালি, পাথরকুচি, ইট বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে পথচলতি মোটরবাইকের জন্য এমন দুর্ঘটনা এ রাজ্যে নতুন নয়। এ বার ফুটপাথ দখল করে চলতে থাকা বাঁশের ব্যবসা প্রাণ নিল মোটরবাইক চালকের। মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুর-বোয়ালিয়া রাস্তায়, ললিতাগড় গ্রামের কাছে। মৃত গোরাচাঁদ মণ্ডলের (৪০) বাড়ি বোয়ালিয়া গ্রামে। যে ব্যক্তি ফুটপাথে ওই বাঁশ রেখেছিলেন, তাঁকে ধরার দাবিতে ঘণ্টা তিনেক রাস্তা অবরোধ করেন এলাকাবাসী। পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৪
Share:

মৃত গোরাচাঁদ মণ্ডল।

রাস্তার ধারে ফেলে রাখা বালি, পাথরকুচি, ইট বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে পথচলতি মোটরবাইকের জন্য এমন দুর্ঘটনা এ রাজ্যে নতুন নয়। এ বার ফুটপাথ দখল করে চলতে থাকা বাঁশের ব্যবসা প্রাণ নিল মোটরবাইক চালকের। মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুর-বোয়ালিয়া রাস্তায়, ললিতাগড় গ্রামের কাছে। মৃত গোরাচাঁদ মণ্ডলের (৪০) বাড়ি বোয়ালিয়া গ্রামে। যে ব্যক্তি ফুটপাথে ওই বাঁশ রেখেছিলেন, তাঁকে ধরার দাবিতে ঘণ্টা তিনেক রাস্তা অবরোধ করেন এলাকাবাসী। পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গোরাচাঁদবাবু ইমিটেশন গয়না তৈরির ব্যবসা করেন। কয়েক বছর ধরে কুলগাছিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। সেখানে তাঁর কারখানা আছে। নিজের বাড়ির কাছে বোয়ালিয়াতে রয়েছে আরও একটি কারখানা। প্রতিদিনের মতো এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ তিনি মোটরবাইকে চড়ে কুলগাছিয়া থেকে বোয়ালিয়ায় যাচ্ছিলেন। ললিতাগড়ের কাছে রাস্তার ধারে এবং ফুটপাথে মন্টু সামুই নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বালি, পাথরকুচি এবং বাঁশ রেখে ব্যবসা চালান। এ দিন সকালে তাঁর এক লরি বালি আসে। বালি রাখার জায়গা ফাঁকা করতে কয়েকটি বাঁশ উল্টো দিকের ফুটপাথে সরাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। সেই সময় গোরাচাঁদবাবু সেখানে এসে পড়েন।

এইভাবেই রাস্তায় পড়ে রয়েছে বাঁশ। উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুর-বোয়ালিয়া রাস্তায়।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, দুই শ্রমিক একটি বাঁশ নিয়ে আড়াআড়ি রাস্তা পেরোচ্ছিলেন। গোরাচাঁদবাবুকে দেখেও তাঁরা থামেননি। তাঁদের পাশ কাটাতে গিয়ে গোরাচাঁদবাবুও মোটরবাইকের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। বাঁশটির ডগার দিকের তীক্ষ্ন অংশটি তাঁর বুকের মাঝ বরাবর এফোঁড়ওফোঁড় হয়ে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। যুবকটি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ওই শ্রমিকেরা তখন টানাটানি করে গোরাচাঁদের শরীর থেকে বাঁশটি বার করে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে বালির লরিতে চেপে চম্পট দেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান গোরাচাঁদ।

দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে এ দিন দেখা গেল, রাস্তার ধারে একাধিক জায়গায় বালি, পাথরকুচি ও বাঁশের স্তূপ। যে বাঁশটিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার ডগায় কাঁচা রক্ত লেগে আছে। অবরোধ করছেন এলাকাবাসী। তাঁদের ক্ষোভ, রাস্তার ধারে রাখা ওই পাথর-বালির জন্য একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশকে বলে কাজ হয়নি। পরে গোরাচাঁদবাবুর পরিবার ওই বাঁশের মালিক মন্টু সামুইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে।

ফুটপাথে ইমারতি দ্রব্য রেখে কেন ব্যবসা করেন জানতে চাওয়া হলে মন্টুবাবুর জবাব, “সবাই করে। আমিও করি। এতে দোষের কী আছে?” ওই ব্যক্তির দাবি, সোমবার রাতেই এক ট্রাক বাঁশ এসেছিল। অধিকাংশই তিনি গুদামে রেখেছিলেন। কয়েকটা ফুটপাথে পড়েছিল। এ দিন সকালে তিনি সেগুলি সরাবেন বলে ভেবেছিলেন। তার আগেই বালির লরি এসে যায়। মন্টুবাবুর দাবি, “আমাকে খবর না দিয়ে বাঁশ সরাতে গিয়ে বিপত্তি বাধায় খালাসিরা।”

গত মাসেই কলকাতার সল্টলেকে রাস্তার পাশে রাখা বালির স্তূপে মোটরবাইকের চাকা আটকে পড়ে যান আরোহী। পিছন থেকে আসা গাড়ি তাঁকে থেঁতলে দেয়। ওই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম রাস্তার পাশে ইমারতি দ্রব্য রেখে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দেন। জানিয়েছিলেন, ও সব রাস্তার ধারে রাখা যাবে না।” এ দিনের দুর্ঘটনার পরে হাওড়া জেলা পুলিশের এক কর্তা দাবি করেছেন, তাঁরা সতকর্তার মাত্রা আরও বাড়াবেন। গোরাচাঁদের বাবা ডাক-কর্মী নেপাল মণ্ডলের আক্ষেপ, “পুলিশ তো সব-ই করবে! তার আগে বিনা দোষে আমার ছেলে চলে গেল!”

ছবি: সুব্রত জানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন