লাগাতার অবরোধের হুমকি স্থানীয় বাসিন্দাদের

বেহাল পথে নাকাল পথচারী, যানচালক

গোটা রাস্তা জুড়ে ছোটবড় গর্ত। কোথাও পিচ উঠে নীচে ইটের খোয়া বেরিয়ে পড়েছে। যাতায়াত করতে নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে পথচারী থেকে যানচালকদের। শ্রীরামপুরের বাঙ্গিহাটিতে দিল্লি রোড সংলগ্ন ওই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে দিনের পর দিন ধরে প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরছেন বাসিন্দারা। প্রশাসনিক স্তর থেকে আশ্বাসও মিলেছে। কিন্তু কাজের কাজ আর হয়নি।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৬
Share:

কোনও এক সময় পিচের ছিল। তবে এখন আর তা বোঝার উপায় নেই। —নিজস্ব চিত্র।

গোটা রাস্তা জুড়ে ছোটবড় গর্ত। কোথাও পিচ উঠে নীচে ইটের খোয়া বেরিয়ে পড়েছে। যাতায়াত করতে নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে পথচারী থেকে যানচালকদের। শ্রীরামপুরের বাঙ্গিহাটিতে দিল্লি রোড সংলগ্ন ওই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে দিনের পর দিন ধরে প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরছেন বাসিন্দারা। প্রশাসনিক স্তর থেকে আশ্বাসও মিলেছে। কিন্তু কাজের কাজ আর হয়নি।

Advertisement

বাঙ্গিহাটি থেকে সিমলা, বিবির বেড়, ঘোড়ামাড়া, প্রভাসনগর হয়ে রিষড়ায় চলে গিয়েছে রাস্তাটি। বাঙ্গিহাটি, সিমলা, মাদপুর, ঘোড়ামারা, মোল্লার বেড়, বিবির বেড়-সহ রাজ্যধরপুর পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের প্রধান ভরসা এই রাস্তা। পাশ্ববর্তী রিষড়া এবং শ্রীরামপুর পুরএলাকার লোকজনও এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। বাস রুট না থাকলেও অটো-টোটো চলে। রিষড়া বা শ্রীরামপুর স্টেশনে যাতায়াত করার জন্য বহু মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করেন। একাধিক প্রাথমিক এবং হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের এই রাস্তা ধরেই যাতায়াত করতে হয়। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে রাস্তাটির গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রশাসন সূত্রের খবর, রাস্তাটির দৈর্ঘ্য মেরেকেটে ২ কিলোমিটার। বছর বারো আগে কেএমডিএ রাস্তাটি তৈরি করেছিল। পরে দু’-এক বার জোড়াতাপ্পি দেওয়া হলেও পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে রাস্তার হাল ক্রমশ খারাপ হয়েছে। এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে প্রশাসনিক বিভিন্ন দফতরে দরবার করে আসছেন এলাকার মানুষ। গণস্বাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। অবরোধ হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই এলাকায় কয়েকটি কারখানা রয়েছে। ওই সব কারখানার ভারী ভারী ট্রাক দিন-রাত ওই রাস্তায় চলাচল করে। সংস্কার না হওয়ায় রাস্তা বর্তমানে একেবারে চলার অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। অটোচালকদের বক্তব্য, রাস্তার হাল এতটাই খারাপ যে গাড়ির যন্ত্রপাতি ভেঙে যাওয়ার জোগাড়। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর। খানাখন্দে জল জমে যাওয়ায় রাস্তা ঠাওর করাই দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। গাড়িঘোড়া তো বটেই, পথচারীরাও পথ চলতে সমস্যায় পড়েন। অথচ প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই।

Advertisement

অবিলম্বে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে গত সোমবার সকাল থেকে রাস্তা অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। শ্রীরামপুর থানার পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে। গ্রামবাসীদের হুমকি, অবিলম্বে কাজ শুরু না হলে মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধ শুরু করবেন তাঁরা। গত বছরের অগস্ট মাসেও একই দাবিতে টানা দু’দিন অবরোধ চলেছিল। চাপে পড়ে তখন নড়েচড়ে বসার ইঙ্গিত দিয়েছিল প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ইঞ্জিনিয়াররা এসে মাপজোকও করে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ আর শুরু হয়নি। কার্তিক মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসী বলেন, “কয়েক বছর ধরে এই রাস্তায় পিচের প্রলেপ পড়েনি। ভাঙাচোরা রাস্তায় আমাদের দুর্ভোগের সীমা নেই। একটা রাস্তা সংস্কারের জন্য এলাকাবাসীকে পথে নামতে হচ্ছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক। অথচ সব জেনেও প্রশাসন গুরুত্ব দিচ্ছে না।”

রাজ্যধরপুর পঞ্চায়েতের প্রধান বিষ্ণু মণ্ডল বলেন, “রাস্তার মাপজোক হয়েছে। সংস্কারে কয়েক কোটি টাকা খরচ হবে বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়। কেএমডিএ, পঞ্চায়েত এবং স্থানীয় কয়েকটি কারখানার ওই টাকা দেওয়ার কথা। আমাদের অত টাকা নেই। জেলা পরিষদকে তা দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি।” তিনি বলেন, “রাস্তার খারাপ অবস্থার কথা জানিয়ে আমি নিজে জেলাশাসক, জেলা সভাধিপতিকে চিঠি লিখেছি।”

ওই এলাকা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য টুম্পা মেটে বলেন, “জেলা পরিষদ চেষ্টা করছে। কারখানার ভারী গাড়ি যাতায়াতের ফলেই রাস্তার বেশি ক্ষতি হচ্ছে। তাই ওদেরও দায়িত্ব রয়েছে। ওদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।” মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) মৃণালকান্তি হালদারের বক্তব্য, “প্রশাসন যে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে তা নয়। ওই রাস্তা সংস্কারের প্রক্রিয়া চলছে। জেলার ইঞ্জিনিয়াররা এসে ঘুরে দেখেছেন। রাস্তা নিয়ে কেএমডিএ-র বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট জেলা প্রশাসনের কাছে জমা পড়ার কথা। জেলাশাসক এবং জেলা সভাধিপতিও বিষয়টি জানেন।”

যদিও কাজ কবে শুরু হবে প্রশাসনের তরফে এমন কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন