ভেঙেছে পরিচালন সমিতি, নয়া নির্দেশিকা চায় ৩১ স্কুল

সরকারি নির্দেশে ভেঙে গিয়েছে পরিচালন সমিতি। নতুন কমিটি কবে গড়া হবে, তা নিয়ে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। ফলে, শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে না পারা-সহ নানা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন উত্তরপাড়া বিধানসভা এলাকার ৩০টি এবং চাঁপদানির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক-প্রধান শিক্ষিকারা। তাঁরা চাইছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিচালন সমিতি গঠন করা হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩১
Share:

সরকারি নির্দেশে ভেঙে গিয়েছে পরিচালন সমিতি। নতুন কমিটি কবে গড়া হবে, তা নিয়ে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। ফলে, শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে না পারা-সহ নানা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন উত্তরপাড়া বিধানসভা এলাকার ৩০টি এবং চাঁপদানির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক-প্রধান শিক্ষিকারা। তাঁরা চাইছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিচালন সমিতি গঠন করা হোক।

Advertisement

রাজ্যে পালাবদলের পরে রাজ্য সরকার সব সরকারি মদতপুষ্ট স্কুলের পরিচালন সমিতির গঠন বদলে দেয়। সিদ্ধান্ত হয়, পরিচালন সমিতির সভাপতি মনোনীত করবে রাজ্য সরকারই। সেই মনোনয়নের রাশ মূলত বিধায়কদের হাতেই উঠে আসে। উত্তরপাড়া বিধা‌নসভা এলাকার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৩০টি স্কুলের মধ্যে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অনুপ ঘোষাল ১২টির, তাঁর বড় মেয়ে অনুপমা ৯টির এবং ছোট মেয়ে দেবযানী একটি স্কুলের সভাপতি। তিনটি স্কুলে ওই পদে বসেন অনুপবাবুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান পিনাকী ধামালি। এ ছাড়া, দু’টি বাদ দিয়ে বাকি স্কুলগুলিতেও ওই পদে বসেন অনুপবাবুর আত্মীয়েরা। চাঁপদানি এলাকার নওগাঁ এলাকার একটি স্কুলেরও সভাপতি হন অনুপবাবু।

বিষয়টি জানাজানি হতে জলঘোলা শুরু হয়। নানা মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। শাসক দলের অন্দরেও ঝড় ওঠে। বিষয়টি জেনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ওই সব স্কুলের পরিচালন সমিতি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মতোই দিন কয়েক আগে ওই ৩১টি স্কুলের পরিচালন সমিতি ভেঙে দেওয়া হয়। তবে, কবে এবং কী ভাবে ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালন সমিতি ফের গঠিত হবে, তা নিয়ে শিক্ষা দফতর স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি। বিজ্ঞপ্তিতে শুধু জানানো হয়, এ বিষয়ে সরকার পরবর্তী নির্দেশ জারি করবে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতেই বিপাকে পড়েছেন ওই সব স্কুলের প্রধান শিক্ষক-প্রধান শিক্ষিকারা। তাঁদের বক্তব্য, শিক্ষকদের বেতনের ‘রিকুইজিশন’ থেকে শুরু করে ব্যাঙ্কের লেনদেনের ক্ষেত্রে নথিপত্র বা চেকে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে পরিচালন সমিতির সভাপতিরও সই করার কথা। কিন্তু কমিটির অস্তিত্ব না থাকায় সেই সব কাজ থমকে যাচ্ছে। বিভিন্ন খাতে ব্যাঙ্ক থেকে টাকাও তোলা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি বেশি দিন চললে সমস্যা জটিল হবে। জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানালে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। আশা করা হচ্ছে, শীঘ্রই সমস্যা মিটবে।

ওই ৩০টির মধ্যে উত্তরপাড়া কোতরংয়ের একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, “এখন তো আমি ছাড়া সই করার কেউ নেই। ফলে, মিড-ডে মিলের টাকা তুলতে পারছি না। যাঁদের টাকা পাওনা রয়েছে, তাঁদের তা দেওয়া যাচ্ছে না। এ বার হয়তো নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়েই মিড-ডে মিলের রান্না করতে হবে। আগামী মাসের জন্য শিক্ষকদের বেতনের রিকুইজিশন কী করে পাঠাব ভাবছি।” উত্তরপাড়ারই অন্য একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকও একই কথা বলেন। তাঁর কথায়, “নতুন নিয়মে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দিয়ে পড়ুয়াদের ইউনিফর্ম বানাতে হবে। কিন্তু তার জন্য টাকা তুলব কী করে? সরকার থেকে বইপত্র পাঠানোর ব্যাপারে তদ্বির-সহ নানা ব্যাপারেও পরিচালন সমিতিকে দরকার হয়। সব মিলিয়ে সমস্যা তো হচ্ছেই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিচালন সমিতি গড়ার নির্দেশিকা এলে ভাল। তবে আগের বার যা হল, সেটা বাঞ্ছনীয় নয়।” একই রকম সমস্যার কথা জানিয়েছেন আরও কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক-প্রধান শিক্ষিকারা।

তবে, পরিচালন সমিতি গঠন করা নিয়ে রাজ্য সরকারের নির্দেশ শিক্ষক মহলে প্রশ্ন তুলেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, বর্তমান সরকার শুরু থেকেই বলে এসেছিল, শিক্ষাকে দলতন্ত্রমুক্ত করতে চায় তারা। কিন্তু পরিচালন সমিতির সভাপতি মনোনয়নের দায়িত্ব সরকার নিজের হাতে রাখার ফলে শাসক দলের ঘনিষ্ঠদেরই অগ্রাধিকারের সুযোগ হল। তা ছাড়া, এত দিন ৬ জন অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত হতেন। কিন্তু নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী, কমিটিতে অভিভাবক প্রতিনিধি মাত্র ২ জন। তা-ও আবার সভাপতি তাঁদের মনোনীত করবেন। সুতরাং এ ক্ষেত্রেও শাসক দল বা সভাপতির অনুগত অভিভাবকের ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়বে। এতে স্কুল পরিচালনায় অসুবিধা হতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন