উত্‌সবের চন্দননগর

ভিড় সামাল দিতে মেনুতে কাটছাঁট রেস্তোরাঁগুলির

প্রন ফ্রায়েড রাইস থেকে নুডলস। বিরিয়ানি থেকে আমেরিকান চপসি--হাজির সবই। তৈরি হচ্ছে দ্রুত, উবেও যাচ্ছে নিমেষে! আটপৌরে ভাত-ডাল-রুটি-তরকারি নয়, উত্‌সবের চন্দননগর এখন পুরোপুরি চিলি চিকেন, চিলি ফিশ, চিকেন বিরিয়ানি, মাটন বিরিয়ানি, পোলাও, মোমো নিয়ে মুখ বদলের মেজাজে বিভোর।

Advertisement

শুভ্র শীল

চন্দননগর শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:০০
Share:

প্রন ফ্রায়েড রাইস থেকে নুডলস। বিরিয়ানি থেকে আমেরিকান চপসি--হাজির সবই। তৈরি হচ্ছে দ্রুত, উবেও যাচ্ছে নিমেষে! আটপৌরে ভাত-ডাল-রুটি-তরকারি নয়, উত্‌সবের চন্দননগর এখন পুরোপুরি চিলি চিকেন, চিলি ফিশ, চিকেন বিরিয়ানি, মাটন বিরিয়ানি, পোলাও, মোমো নিয়ে মুখ বদলের মেজাজে বিভোর। সকালে কোনটা, কোনটা রাতে তা নিয়েই মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরার ফাঁকে চলছে জল্পনা।

Advertisement

জি টি রোড, মানকুণ্ডু স্টেশন রোড, চন্দননগর স্টেশন রোডের মতো বড় রাস্তাগুলির দু’ধারে কত যে অস্থায়ী খাবারের দোকান তার ইয়ত্তা নেই। শহরে ভাল রেস্তোরাঁ রয়েছে পাঁচ-ছ’টি। কিন্তু লাখো দর্শনার্থীর ভিড় সামাল দেওয়ার মতো পরিকাঠামো তাদের কোথায়! সর্বত্রই ভিড় উপচে নেমে আসছে রাস্তায়। অনেক ক্ষেত্রেই অধৈর্য্য রসনা ভিড়ে সামিল হওয়ার অপেক্ষায় না থেকে বেছে নিচ্ছে অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলিকে।

বৃহস্পতিবার ছিল সপ্তমী। সকাল থেকেই বিভিন্ন পুজো মণ্ডপের মাইকে ভেসে আসছিল মন্ত্রোচ্চারণ। পুজো মিটতেই ভিড় নামল রাস্তায়। শুধু কী চন্দননগর! সকাল থেকেই ব্যান্ডেল, শ্রীরামপুর, বালি, উত্তরপাড়া, এমনকী কলকাতা থেকেও দর্শনার্থীরা আসা শুরু করেন। সূর্য তখন মাঝ-আকাশে। স্ট্র্যান্ডের এক ধারে ফুচকা, ভেলপুরী, আইসক্রিম, ঢাকাই পরোটা নিয়ে জড়ো হচ্ছিলেন ব্যাপারীরা। মূল সড়কের ধারে রাশি রাশি খাবারের দোকান ঝাঁপ খুলে ফেলেছে আগেই। প্রায় ভোররাত পর্যন্ত চলবে বিকিকিনি। তাই সকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে তোড়জোড়। রেস্তোরাঁগুলি খুলে যায় বেলা ১১টা থেকেই।

Advertisement

ঠাকুর দেখার ফাঁকে খাওয়া-দাওয়া। ছবি: তাপস ঘোষ।

মানকুণ্ড স্পোর্টিং ক্লাবের ‘চাঁদমামার দেশ’, নিয়োগীবাগান নব বালক সঙ্ঘের ‘রাজেশ্বরী’, নতুনপাড়ার ‘সুতোর পাকে’ বা সার্কাস মাঠের দেবদেবীর বাহনদের নিয়ে মণ্ডপ দেখে হাটখোলা হয়ে যাঁরা উত্তর চন্দননগরের দিকে ঢুকছেন, তাঁদের অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন ‘পাতালবাড়ি’র উল্টো দিকের রেস্তোরাঁয়। বছরের অন্য সময় এখানে দিনে স্ন্যাক্স থেকে শুরু করে স্যুপ, বিরিয়ানি থেকে পোলাও--সবই মেলে। কিন্তু পুজোর সময়ে ভিড় সামলাতে মেনুতে কাটছাঁট করতে হয়েছে বলে জানালেন দোকানের ম্যানেজার গদাধর মহাপাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘খাবার দ্রুত তৈরি এবং পরিবেশনের জন্যই এই চার দিন কিছু পদ কমাতে হয়েছে। আমাদের রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে ৪২ জন বসতে পারেন। ভিড় বেশি হলে অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে।’’ ভিড় সামলাতে প্রায় একই রকম নাজেহাল অবস্থা বড়বাজারের এক নামী রেস্তোরাঁর। ভিড়ের জন্য রেস্তোরাঁর সবুজ লনেও বসার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। রয়েছে কেবিনও। জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য তাদের বিশেষ পদ ---‘চাইনিজ স্পেশ্যাল চিকেন’। বোনলেস চিকেনের সঙ্গে নানা মশলা, কাজুবাদাম, কিশমিশ ও পনির মিশিয়ে তৈরি এই বিশেষ পদ ভোজনরসিক থেকে সকলের মন জয় করবে বলে দাবি রেস্তোরাঁর কর্ণধার সুশান্ত সিংহের। ছ’টুকরো চিকেনের ওই পদের দাম ১৭৫ টাকা। তার জন্যও দুপুরে লম্বা লাইন। সুশান্তবাবুও জানালেন, ভিড় সামলাতে তাঁদেরও কিছু পদ কমাতে হয়েছে। অদূরে অন্য রেস্তোরাঁটি তুলনায় বড়। কিন্তু তাতেও ভিড় সামাল দেওয়া যাচ্ছে কই! রেস্তোরাঁর ম্যানেজার অভিষেক লাহিড়ি জানালেন, পুজোর জন্য কোনও বিশেষ পদ নয়, দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য তাঁরা দ্রুত খাবার তৈরি করার উপরেই জোর দিয়েছেন।

চন্দননগর স্টেশন হয়ে যে ভিড়টা শহরে নামছে, তার মধ্যে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন বাগবাজার এলাকার রেস্তোরাঁগুলি। এখানে ভিড় হলে কুপনের ব্যবস্থা করেছে একটি নামী রেস্তোরাঁ। ভিড়ের কারণে নামী রেস্তোরাঁগুলি পদ কমালেও অস্থায়ী রেস্তোরাঁ অবশ্য ঢালাও আয়োজন। দোকানিরা চিত্‌কার করে দর্শনার্থীদের ডাকছেন। মোমো বা ফুচকার দোকানেও সামাল সামাল রব। এ দিন বিকেলে পঞ্চাননতলার কাছে বিশাল কাচের বাক্সে প্রায় সাত হাজার ফুচকা নিয়ে বসেছিলেন চুঁচুড়ার এক ব্যাপারী। নেহাতই কৌতূহলী প্রশ্ন, “সব শেষ হবে?” ঝটিতি ইত্তর এল, ‘সন্ধের পর এসে দেখবেন।”

একই সুরের অন্য গলাতেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন