শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হল হাওড়ার যশ লাখোটিয়ার পরিবার। একমাত্র ছেলের অপহরণ ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আদালতের নির্দেশে বেকসুর খালাস পেয়ে গিয়েছেন কয়েক দিন আগে। যশের পরিবার চায়, মামলাটি কলকাতা হাইকোর্ট পুনর্বিবেচনা করুক। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা চেয়ে আবেদন জানিয়ে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন যশের বাবা অনিল লাখোটিয়া। অনিলবাবুর অভিযোগ, ছেলের অপহরণ ও খুনের মামলার এই রায় তাঁদের পরিবারের কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি। তাঁদের সন্দেহ, ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত সন্তোষ সিংহ ভেক ধরে রয়েছেন।
২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি লিলুয়ার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে থেকে অপহৃত হয় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র যশ। দু’দিন পরে ৩১ জানুয়ারি, সরস্বতী পুজোর দিন ফোরশোর রোডে তার মৃতদেহ মেলে। তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীরা প্রথমে হাওড়ার মল্লিকফটক এলাকার বাসিন্দা ওই বালকের হাত-পা মুচড়ে ভেঙে দেয়। পরে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়।
চাঞ্চল্যকর ওই খুনের ঘটনার প্রতিবাদে হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ করে রাজ্যের তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস। যশের বাড়িতেও গিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতারের দাবি তোলেন তিনি। এমনকী, যশের শেষ যাত্রায় পা-ও মিলিয়েছিলেন মমতা।
এই ঘটনার তদন্তভার প্রথমে হাওড়া জেলা পুলিশের হাতে থাকলেও পরে দায়িত্ব পায় সিআইডি। সিআইডি লাখোটিয়া পরিবারের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ ‘বন্ধু’ সন্তোষ সিংহকে সন্দেহের তালিকার এক নম্বরে রেখেছিল। ঘটনার প্রায় এক বছর পরে অন্য একটি মামলায় সন্তোষ ধরা পড়লে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিআইডি। তার ভিত্তিতে সিআইডি আদালতকে জানায়, সন্তোষ খুনের কথা স্বীকার করেছেন। সিআইডি-র দাবি, গঙ্গার ধারে যে বন্ধ থাকা তেল মিলে যশকে অপহরণ করে রেখে পরে খুন করা হয়েছিল, অভিযুক্ত ব্যক্তি সেই জায়গাটি তদন্তকারীদের দেখিয়ে দেয়। কিন্তু প্রায় চার বছর ধরে মামলা চলার পরে সম্প্রতি আদালত উল্লেখ করে, সিআইডি-র তদন্তে অনেক ফাঁক রয়েছে। ঘটনায় সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে অভিযুক্ত সন্তোষকে গত ২২ তারিখ বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেয় হাওড়ার পঞ্চম অতিরিক্ত দায়রা আদালত।
আদালতের এই রায় ঘোষণার চার দিন পরে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করে চিঠি লিখেছেন যশের বাবা। চিঠির প্রতিলিপি পাঠান ডিআইজি (সিআইডি), মধ্য হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় ও হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডেকে।
অনিলবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছেন, আদালতের রায়ে তাঁদের গোটা পরিবার মর্মাহত ও হতাশ। তাঁদের বিশ্বাস, মূল অভিযুক্ত ঘটনাটি আড়াল করার জন্য মামলায় নানা কৌশল নিয়েছিলেন। তাই দোষীর উপযুক্ত শাস্তি হয়নি। মামলাটি হাইকোর্টে যাতে পুনর্বিবেচনা করা হয়, সেই আবেদন নিয়ে তিনি মুখমন্ত্রীর দারস্থ হয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে অনিলবাবুর দাদা নন্দু লাখোটিয়া শনিবার বলেন, “মামলাটি যাতে হাইকোর্টে যায়, তাই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, প্রকৃত বিচার পাব।”