ঐতিহাসিক রাজবাড়ি।
ইতিহাস অবহেলিত। অবহেলিত স্থাপত্য। শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসের দুধপুকুরও আজ অবহেলার শিকার।
শৈবতীর্থ হিসেবে তারকেশ্বরকে ঐতিহাসিক শহরগুলির সঙ্গে এক পঙ্ক্তিতে বসান পুণ্যার্থীরা। কিন্তু সে জন্য পরিকাঠামোর উন্নতির প্রশ্নে প্রশাসন কখনওই তেমন গা ঘামায়নি। তারকেশ্বর লাগোয়া আর যে সমস্ত প্রাচীন মন্দির রয়েছে আজ পর্যন্ত সেগুলির কোনওরকম সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণে উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন। দুধপুকুর বাদে শহরের অন্য ঐতিহাসিক পুকুরগুলির দশাও শোচনীয়। সংস্কারের অভাবে ময়লা, আবর্জনায় হারিয়ে যেতে বসেছে কুমকুমি-সহ অন্যান্য পুকুর।
কথিত আছে তারকেশ্বরের রামনগরে এক সময় রাজবাড়ি ছিল। রাজা ভারোমল্লদেব এর রাজত্বকাল। রাজবাড়ি থেকে তারকেশ্বর মন্দিরের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এতটা পথ বাদ সাধছিল রানিমার পুজায়। অগত্যা রানিমার অসুবিধা কাটাতে শুরু হল পরিকল্পনা। বিকল্প উপায় সন্ধান। তারকেশ্বর মন্দির থেকে হলেও শিবলিঙ্গ রামনগরে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন রাজা। কিন্তু তা আর হয়নি। শোনা যায়, তারকেশ্বর থেকে রামনগরে শিবলিঙ্গ সরিয়ে না নিয়ে যেতে রাজা স্বপ্নাদেশ পান। এরপরই সেই পরিকল্পনায় ইতি টানেন রাজা। তবে রানিমার পুজোর জন্য রামনগরে তৈরি হয় নতুন শিবমন্দির। রাজবাড়িতে রয়েছে ঐতিহাসিক সংস্কৃত শিক্ষার টোল। এক সময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছাত্ররা এই টোলে আসতেন পাঠ নিতে। সন্ধ্যা নামলেই ইতিহাস আর ধর্মচর্চায় ডুবে যেত মন্দির-শহর। কালের নিয়মে সেই টোল আজ প্রায় অদৃশ্য।
শুধু হিন্দুতীর্থ হিসাবে তারকেশ্বরের পরিচয় নয়। এখানে দেউলপাড়ায় রয়েছে বিখ্যাত বৌদ্ধমন্দির। যার প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং দলাইলামা। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এখানে আসেন।
শহরবাসীর অভিযোগ, মন্দিরকে ঘিরে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় দফতর কেউই এগিয়ে আসেননি। রাজ্য প্রশাসনের তরফেও কেউ উদ্যোগী হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। অবশ্য এলাকার বর্তমান সাংসদ অপরূপা পোদ্দার সাংসদ হওয়ার পর এখানে এসে মন্দির ঘিরে নানা পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। অপরূপা বলেন, “মন্দির যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আমি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। মন্দিরের উন্নতিতে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করব। তবে কিছুটা সময় তো লাগবেই।”
তারকেশ্বর পেরিয়ে এখন রেল ছুটছে কামারপুকুরের কোল পর্যন্ত। তারকেশ্বর মন্দির, বৌদ্ধমন্দির, ও কামারপুকুরকে কেন্দ্র করে বিশেষ প্যাকেজ হতে পারে অভিমত শহরের বিশিষ্টজনদের। এতে স্থানীয় ভাবে কিছু কর্ম সংস্থানেরও সুযোগ হতে পারে। কলকাতা, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, বর্ধমান, বীরভূমের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ রয়েছে এখানের। খানাকুলও খুব দূরে নয়। সেখানে রয়েছে রামমোহনের নানা কর্মকাণ্ড। ফলে ইতিহাস আর স্থাপত্য নির্ভর পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে তারকেশ্বরে।
মন্দির এলাকার বাসিন্দা এক প্রবীণার আক্ষেপ, “এ সব নিয়ে ভাববে কে?” তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে সকলেই পকেট ভরাতে ব্যস্ত। আইনশৃঙ্খলাও আগের মতো নেই। অন্ধকার নামলেই নানা গোলমেলে উত্পাত শুরু হয় মন্দির এলাকায়।”
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীদের জন্য শহরের হোটেলগুলিও আর তেমন নিরাপদ নয় বলে অভিযোগ শহরবাসীর। এমনকী খুনের ঘটনাও বিরল নয়। সূর্য ডুবলে শহরের বিভিন্ন হোটেলে ভিড় বাড়তে থাকে নেশাড়ুদের। বাসস্ট্যান্ড আর মন্দির চত্বর জুড়ে শুরু হয়ে যায় নানা অসামাজিক কাজ। কিন্তু সব জেনেও পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার।
নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর তারকেশ্বর’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান
‘আমার শহর’, হাওড়া ও হুগলি বিভাগ,
জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।
(শেষ)
ছবি: দীপঙ্কর দে।