রাস্তা থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালের এক আয়াকে তাঁর বাড়ির অদূরে প্রথমে গণধর্ষণ এবং তার পরে গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা ও হাত ব্লেডে ক্ষতবিক্ষত করে অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠল পড়শি চার যুবকের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে মগরার নামাজগড়ের ঘটনা। রাতভর তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ভৈরব মণ্ডল, রাখাল দাস এবং সন্তোষ ডাকুয়া নামে অভিযুক্ত তিন জনকে গ্রেফতার করে। সোমবার ধরা হয় খোকন দেবনাথ নামে অপর অভিযুক্তকে।
বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলা রাতেই কোনও রকমে চুঁচুড়া হাসপাতালে চলে যান। সেখানেই তাঁকে ভর্তি করানো হয়। ঘটনায় আতঙ্কিত হাসপাতালের অন্য আয়ারাও। নির্যাতিতা বলেন, “হাসপাতালে নাইট শিফ্টে যোগ দেব বলে বাস ধরতে যাচ্ছিলাম। তখনই ওই কাণ্ড। পাড়ার ছেলেরাই যে আমার সঙ্গে এমন আচরণ করবে ভাবতে পারিনি। দোষীদের কঠিন শাস্তি চাই।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তথাগত বসু জানিয়েছেন, নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্যাতিতা আগে চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরে থাকতেন। সম্প্রতি মগরার নামাজগড়ে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন। তাঁর একমাত্র ছেলে কর্মসূত্রে মুম্বই থাকেন। হাসপাতালে রবিবার রাত ১০টা থেকে তাঁর ‘ডিউটি’ ছিল। তিনি বাড়ি থেকে রাত ৯টা নাগাদ বের হন। প্রথমে এলাকার একটি দুধের দোকানে যান। সেখান থেকে জি টি রোডে বাস ধরার জন্য হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখনই ওই ঘটনা।
পুলিশের কাছে অভিযোগে নির্যাতিতা জানিয়েছেন, নির্জন রাস্তায় খোকনরা চার জন তাঁর পথ আগলে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে পাশের একটি দিঘির ধারে টেনে নিয়ে যায়। মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরে হুমকি দেয়। তার পরে অত্যাচার চালিয়ে সেখানেই তাঁকে ফেলে রেখে ওই চার জন চম্পট দেয়।
রবিবার রাত ১১টা নাগাদ নির্যাতিতা হাসপাতালে এসে অন্য আয়াদের ঘটনার কথা জানান। চুঁচুড়া মহিলা থানাতেও যান। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাতেই মগরা থানার পুলিশ হাসপাতালে তদন্তে আসে। ধৃত ভৈরব, রাখাল এবং সন্তোষকে সোমবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
ঘটনায় আতঙ্কিত হাসপাতালের অন্য আয়ারাও। তাঁদের এক জন বলেন, “আমাদের রাতেও কাজে আসতে হয়। কিন্তু যদি এমন অবস্থা হয়, তা হলে তো কাজে আসাই যাবে না। রোগী বা তাঁদের আত্মীয়েরাও বিপদে পড়বেন। আমরাও চাই দোষীদের কঠিন শাস্তি হোক।”