আলোকশিল্পী হত্যাকাণ্ড

স্বামীর ইচ্ছাপূরণ করবেন সঙ্গীতা

দু’দিন ধরে বাবাকে দেখতে পায়নি একরত্তি মেয়েটা। বুধবার তাই বাড়িতে কেউ এলেই মায়ের কোলে থাকা ছোট্ট শতরূপার প্রশ্ন, বাবা এল নাকি? মেয়ের প্রশ্নের উত্তর জানা নেই সদ্য স্বামীহারা সঙ্গীতাদেবীর। সারাদিন মেয়েকে কোলে নিয়ে দিন কেটেছে তাঁর। চোখে শুধুই শূন্যতা। এরপর কী?

Advertisement

তাপস ঘোষ

চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৮
Share:

এর পর কী? একমাত্র মেয়েকে কোলে নিয়ে সঙ্গীতাদেবী। —নিজস্ব চিত্র।

দু’দিন ধরে বাবাকে দেখতে পায়নি একরত্তি মেয়েটা। বুধবার তাই বাড়িতে কেউ এলেই মায়ের কোলে থাকা ছোট্ট শতরূপার প্রশ্ন, বাবা এল নাকি?

Advertisement

মেয়ের প্রশ্নের উত্তর জানা নেই সদ্য স্বামীহারা সঙ্গীতাদেবীর। সারাদিন মেয়েকে কোলে নিয়ে দিন কেটেছে তাঁর। চোখে শুধুই শূন্যতা। এরপর কী? অবশ্য এই শূন্যতার ছোঁয়া লেগেছে চন্দননগরের বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজোতেও। দুর্গাপুজোর সময় অন্য জায়গায় নিজের আলো নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও জগদ্ধাত্রী পুজোয় নিজের সবকিছু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন আলোর চমকদারিতে। যার সাক্ষী তালপুকুর ধার বারোয়াড়ি পুজো কমিটি। এ বারও তাঁদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল রঞ্জনের আলো। কিন্তু রঞ্জনের মৃত্যুর ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে তাঁদের বা বলা ভাল গোটা চন্দননগরকে। যদিও গভীর শোকের মধ্যেও সঙ্গীতাদেবী জানিয়েছেন, স্বামীর মান রাখতে বনগাঁয় তাঁর যে আলো সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছিল সেটাই এ বার জগদ্ধাত্রীতে তালপুকুর ধার বারোয়াড়ি পুজো কমিটিকে দেবেন।

স্বামীর এমন আলোর যাদুতে মুগ্ধ ছিলেন সঙ্গীতাদেবীও। তাই রঞ্জনবাবু সম্প্রতি পুরনো বাড়ি ভাঙার যে ঠিকা কাজ শুরু করেছিলেন তাতে আপত্তি ছিল তাঁর। জানালেন, স্বামীকে বলেওছিলেন, আলোয় যখন সুনাম হচ্ছে তখন ওই কাজ করাটা ঠিক হচ্ছে না।

Advertisement

খুনের ঘটনায় বুধবার রাত পর্যন্ত রঞ্জনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চন্দননগরের এসডিপিও সৈকত ঘোষ বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে রাজীব দাস ওরফে সাহেব, অভিজিত্‌ রায় ওরফে নিগ্রো এবং গিরিধারী মিস্ত্রী নামে ওই বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কয়েকজনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ঠিক কি কারণে খুন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, বন্ধুত্বের খাতিরে ধৃত গিরিধারীর স্টুডিওতে আনাগোনা ছিল। গিরিধারী বেকার থাকায় তাঁকে চন্দননগর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় একটি চায়ের দোকানও করে দিয়েছিলেন রঞ্জন। রঞ্জনবাবুর পরিবারের দাবি, গিরিধারীই তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।

গত সোমবার রাতে স্টুডিও থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন চন্দননগরের আলোকশিল্পী রঞ্জন সরকার। এই ঘটনায় যেমন আতঙ্কে আলোকশিল্পী মহল, তেমনই আশঙ্কায় পড়েছেন মৃত শিল্পীর পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ প্রতিদিন স্টুডিও থেকে যে পথে তিনি বাড়ি আসতেন ঘটনার দিন তিনি কেন সেই পথে না এসে ঘুরপথে আসছিলেন। তা ছাড়া গিরিধারীই বা মাঝরাস্তায় তাঁকে একা ছেড়ে চলে গেল কেন। ঘটনার রাতে রঞ্জনবাবুর ওপর দুষ্কৃতীরা গুলি চালালে গুলির আওয়াজ পেয়ে কেউ বেরিয়ে এসে দেখলেন না কেন, সব প্রশ্নই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার জগদ্ধাত্রী পুজোয় তালপুকুর ধার বারোয়ারিতেই একমাত্র আলো লাগাবেন বলে ঠিক করেছিলেন রঞ্জন। ইচ্ছা ছিল দুর্গাপুজোয় বনগাঁয় যে আলো লাগিয়েছিলেন সেটাই এখানে লাগাবেন। কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণ আর হল না। তবে তালপুকুর ধার বারোয়ারিতে বনগাঁর আলো লাগিয়েই স্বামীর ইচ্ছা পূরণ করতে চান স্ত্রী সঙ্গীতা। তালপুকুর ধার বারোয়ারি পুজোর উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, রঞ্জনবাবুর আলোর কলকা সম্প্রতি বেশ সুনাম অর্জন করেছিল। তাঁকে যে ভাবে খুন হতে হল তাতে চন্দননগরেরই আলোর ক্ষতি হল। চন্দননগরের সব মানুষের কাছেই এটা দুঃখজনক এবং বেদনার। আলোর শিল্পের অন্যতম প্রধান তার নকশা, যার শিল্পীর সংখ্যা হাতেগোনা। এঁদের মধ্যে একজনের মৃত্যু নিঃসন্দেহে আলোকশিল্পে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে চন্দননগর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন