সালিশি সভা ডেকেছিলেন উপপ্রধানই, দাবি ধৃতের

জমানা বদলেছে। কিন্তু জেলাবাসীর অভিজ্ঞতা, হুগলিতে সাধারণ পারিবারিক বিবাদই হোক বা জমি নিয়ে গোলমাল সবেতেই সালিশি বা মীমাংসার নামে শাসক দলের ‘মাতব্বরি’ করার রীতি যেন একই রকম রয়ে গিয়েছে। গুড়াপে সালিশি সভায় উত্তর জগন্নাথপুর গ্রামের প্রৌঢ় তৃণমূল সমর্থক সুকুমার দাসকে শাবলের বাড়ি মারা এবং পরে তাঁর মৃত্যুতেও জড়িয়েছে শাসক দলের নাম।

Advertisement

প্রকাশ পাল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৬
Share:

জমানা বদলেছে। কিন্তু জেলাবাসীর অভিজ্ঞতা, হুগলিতে সাধারণ পারিবারিক বিবাদই হোক বা জমি নিয়ে গোলমাল সবেতেই সালিশি বা মীমাংসার নামে শাসক দলের ‘মাতব্বরি’ করার রীতি যেন একই রকম রয়ে গিয়েছে।

Advertisement

গুড়াপে সালিশি সভায় উত্তর জগন্নাথপুর গ্রামের প্রৌঢ় তৃণমূল সমর্থক সুকুমার দাসকে শাবলের বাড়ি মারা এবং পরে তাঁর মৃত্যুতেও জড়িয়েছে শাসক দলের নাম। ওই সভা সংশ্লিষ্ট গুড়বাড়ি-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের অজিত দাসই ডেকেছিলেন বলে দাবি করেছেন নিহতের পরিবারের লোকজন। একই দাবি ঘটনায় ধৃত তৃণমূল কর্মীরও। অজিতবাবুর সঙ্গে এ দিনও যোগাযোগ করা যায়নি। প্রথমে তাঁর পরিবারের লোকজন ফোন ধরেন। তাঁরা আর ফোনটি দেননি। পরে তাঁর ফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসএমএসের-ও জবাব আসেনি।

বাম জমানায় ধনেখালি, আরামবাগ, গোঘাটের মতো হুগলির কিছু এলাকায় সিপিএমের বিরুদ্ধে সালিশির নামে দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে মারধর, হুমকির অভিযোগ নিয়ে সরব হতেন বিরোধীরা। এখন সালিশির নামে একই ভাবে হিংসার অভিযোগ উঠছে বর্তমান শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। চলতি মাসের গোড়ায় আরামবাগে মা-ছেলের বিবাদে মায়ের পক্ষ নিয়ে ছেলেকে হুমকি, মারধর এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তিরোল পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা ঝর্না সিংহের বিরুদ্ধে।

Advertisement

বুধবার সুকুমারবাবুর সঙ্গে পারিবারিক কারণে তাঁর ভাইয়ের পুত্রবধূর বচসা থেকে গোলমাল বাধে। তা নিয়ে সালিশি হয়। সেখানেই সুকুমারবাবুকে শাবলের ঘা মারা হয় এবং বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। যে পাঁচ জনের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়, সকলেই তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। ওই রাতেই গুড়াপের হাজিগড় থেকে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত সুকুমার সিংহকে ধরা হয়।

বৃহস্পতিবার এলাকার তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেছিলেন, “উপপ্রধান সালিশিতে উপস্থিতই ছিলেন না।” কিন্তু নিহতের মামাতো ভাই সুকুমার কোটালের দাবি, “অজিতবাবুই আলোচনা ডেকেছিলেন।” ধৃত সুকুমারও এ দিন দাবি করে, “উপপ্রধানই সভা ডেকেছিলেন। যে মহিলার সঙ্গে সুকুমারবাবুর ঝামেলা হয়েছিল, সে আমার ভাগ্নের স্ত্রী। উনি তাকে খারাপ কথা বলায় মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল।” পুলিশের দাবি, জেরায় সুকুমার স্বীকার করেছে, রাগের বশেই সে শাবল চালিয়ে দিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার আরামবাগের নৈসরাইতে এক তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে এক যুবকের বিরুদ্ধে। শাসক দলের স্থানীয় ‘মাতব্বর’রা টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিটমাট করে দেন বলে এলাকায় শোনা যাচ্ছে।

বারবার সালিশি বা মীমাংসার নামে নানা ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়ছে। দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “গুড়াপের ওই পারিবারিক বিবাদের সঙ্গে দলের সম্পর্ক ছিল না। কিন্ত যা হয়েছে, তা খুবই নিন্দনীয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন